1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একটি ধানের শীষের ওপর একটি শিশিরবিন্দু

প্রভাষ আমিন
৩১ মে ২০২৪

আমি জীবনে প্রথম কক্সবাজার গিয়েছি আমার ছেলের বয়স যখন চার তখন। আর আমার ছেলে গত দুই দশকে কয়বার কক্সবাজার গেছে, সম্ভবত গুণে শেষ করতে পারবে না।

https://p.dw.com/p/4gTtN
চা বাগানে হাস্যোজ্জ্বল কয়েকজন নারী শ্রমিক
আদিবাসী গ্রামে বা চা শ্রমিকদের সাথে থাকাও হতে পারে পর্যটনের বিশেষ আকর্ষণছবি: Zabed Hasnain Chowdhury/NurPhoto/Imago Images

আমাদের পরিবারের সবারই সাগর পছন্দ। আগে হুটহাট গাড়ি নিয়ে বা বাসে কক্সবাজার চলে যেতাম। কিন্তু ব্যাকপেইনের কারণে সড়ক পথে অত লম্বা ভ্রমণ করা সম্ভব নয় বলে, ইদানীং যাওয়া কমে গেছে। বিমানে গিয়ে ঠিক পোষায় না। আসলে বলতে চাচ্ছি, প্রিয় সমুদ্রের সাথে দেখা হতে আমার লেগেছে ৩৪ বছর। আমাদের ছেলেবেলায় পর্যটন বা বেড়ানোর ধারণাটাই ছিল না। তারচেয়ে বড় কথা ৬ সন্তানের বড় পরিবার নিয়ে বেড়ানোর সামর্থ্যই ছিল না আমার স্কুলশিক্ষক বাবার। তবে বাবার বদলির চাকরির সুবাদে আমরা চট্টগ্রাম, সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জত, রাঙামাটি, গোপালগঞ্জ, রাজশাহীতে থেকেছি বা গিয়েছি। তবে আমাদের বেড়ানো বলতে পরীক্ষার পর

মামাবাড়ি যাওয়া। এখন ইউরোপ ট্যুরের চেয়ে মামাবাড়ি বেড়াতে যাওয়ার আনন্দটা কম ছিল না।

তবে আমাদের ছেলেবেলা মানে সত্তর ও আশির দশকের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ এক নয়। জিডিপিতে, মাথাপিছু আয়ে, সমৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া নাম। সমৃদ্ধির পথ ধরে বদল এসেছে আমাদের মানসিকতায়ও। মোটামুটি মধ্যবিত্ত পরিবারও বছরে দুয়েকবার বেড়াতে যান। বাইরে না পারলেও দেশের ভেতরে অন্তত বেড়ান। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার বছরে অন্তত একবার দেশের বাইরে বেড়াতে যান। অনেক পরিবার দেখেছি, বাস ভাড়া করে সবাই মিলে বেড়াতে বেড়িয়ে পড়েন, কখনো কক্সবাজার, কখনো সিলেট, কখনো সাজেক। বছরজুড়ে পরিকল্পনা ও সঞ্চয় করলে বছরে এক দুইবার পরিবার নিয়ে দেশের ভেতরে বা বাইরে বেড়ানো এখন আর অসম্ভব নয়। এখন মনে হচ্ছে, ছেলেবেলায় এই ধারণটা থাকলেও আমরাও হয়তো দুয়েকবার বেড়াতে যেতে পারতাম।

দেশের বাইরে বেড়ানোর জন্য সবচেয়ে কাছের গন্তব্য ভারত। আর ভারতকে বলা হয় ভূ-ভারত। কারণ এখানে সাগর-নদী-পাহাড়, মরুভূমি-বরফ সবই আছে। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য তাজমহল তো আছেই, আছে দারুণ সব ঐতিহাসিক নিদর্শন। এছাড়া নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, দুবাই, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, মিশরও আমাদের প্রিয় গন্তব্য। উচ্চবিত্তদের জন্য মালদ্বীপের বিভিন্ন আইল্যান্ড, মরিশাস, ইউরোপ, আমেরিকা ডালভাত। অ্যাডভেঞ্চার যাদের পছন্দ তাদের তালিকা আরো লম্বা আরো বৈচিত্র্যময়।

পর্যটনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে হেলথ ট্যুরিজমের ধারণা। বাংলাদেশের অনেকেই বিশেষ করে ভারত, থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুরে যান চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসার পাশাপাশি তারা একটু বেড়িয়েও আসেন। রথ দেখা কলা বেচার এই ধারণায় অনেকে বেড়াতে গিয়ে কেনাকাটাও করেন প্রচুর। দেশে এসে যার অনেকটা বিক্রি করে বেড়ানোর খরচ কিছুটা তুলে আনেন। কইয়ের তেলে কই ভাজার মতো। সব মিলিয়ে দেশে বা বিদেশে বেড়ানোর ধারণাটা এখন অনেক জনপ্রিয়। নন্দলালের মতো মানুষ পৃথিবীতে খুব বেশি নেই, যারা দুর্ঘটনার ভয়ে ঘরে বসে থাকবে। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের মনে একেকজন পর্যটক বাস করে। যারা ঘুরে ঘুরে পৃথিবীটাকে দেখতে চায়। ইবনে বতুতা বা কলম্বাসের মতো না হলেও সৃষ্টির সৌন্দর্য্য দেখার আকাঙ্খা কমবেশি সবার মধ্যেই থাকে। আগের মতো পায়ে হেঁটে বা জাহাজে চড়ে আবিস্কারের নেশায় বেড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি হয়তো এখন নেই। কিন্তু ঘুরতে গেলে পকেটে টাকা থাকতে হয়। ঘুরতে চাইলেই হয় না, সামর্থ্য থাকতে হয়। তবে প্রথম থাকতে হয় ইচ্ছা। বেরিয়ে পড়াটাই আসল। পথে নামলেই পথ খুজেঁ পাওয়া যাবে।

দেশে-বিদেশে পর্যটন এখন বিশাল শিল্প। বিশ্বের অনেক দেশ আছে, যাদের অর্থনীতি দাড়িয়ে আছে পর্যটনের ওপর। বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই; আমাদের কাছের দেশ মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, এমনকি পাশের দেশ ভারতও পর্যটন থেকে বিপুল অর্থ উপার্জন করে। সে তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। বলা ভালো, পর্যটনের দিকে আামাদের নজর নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন একটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও পর্যটন বিকাশে তাদের অবদান সামান্য। বরং বেসরকারি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশকে অনেক বেশি তুলে ধরেছেন। তবে আমার ধারণা বাংলাদেশের পর্যটনের যতটা সম্ভাবনা, তার কিছুই প্রায় এখনও বিকশিত হয়নি। সরকার নিজেরা না করলেও অন্তত বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে। পর্যটন হতে পারে আমাদের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস।

দেশকে ভালোবেসে আমরা গেয়ে উঠি, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি'। আমরা আবেগে গাই বটে। কিন্তু কথাটা কিন্তু পুরোপুরি সত্যি নয়। বাংলাদেশের চেয়েও সুন্দর অনেক দেশ আছে। আবার এটাও তো ঠিক, মা যত গরিবই হোক, দেখতে যেমনই হোক, যার যার কাছে তার তার মা-ই সেরা। তাই আমার কাছে আমার দেশই সেরা। পাশের দেশ ভারত তো রীতিমতো ভূ-ভারত। সবকিছুই আছে তাদের ভান্ডারে। আমাদের দেশে জলপ্রপাত নেই, মরুভূমি নেই, বরফ নেই।

কিন্তু আমাদের যা আছে, সেটাও কি আমরা বিশ্বের কাছে ঠিকঠাকমতো তুলে ধরতে পেরেছি? আমাদের কক্সবাজার আছে, সেন্ট মার্টিন আছে, সুন্দরবন আছে, পার্বত্য এলাকা আছে, জালের মত ছড়ানো নদী আছে, বিস্তীর্ণ হাওর আছে, চা বাগান আছে। আমাদের সৌন্দর্য্য একেবারে কম নেই। সমস্যা হলো পরিকল্পনায়, সমস্যা হলো সেই সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তোলায়। আপনি ঠিকমতো পরিকল্পনা করতে পারলে ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা বা নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা দেখতেও মানুষ ছুটে আসবে। কক্সবাজার বা সেন্ট মার্টিনের মত সাগরের সৌন্দর্য্য কিন্তু বিশ্বে খুব বেশি নেই। কিন্তু সেন্ট মার্টিনকে কি আমরা মালদ্বীপের কোনো একটা দ্বীপের মতো আকর্ষণীয় করে তুলতে পেরেছি? বিদেশ থেকে ছুটে আসা মানুষ কক্সবাজারে তিন ঘণ্টা সমুদ্র দেখার পর বাকি ২১ ঘণ্টা কী করবেন? অনেকে ধর্মের দোহাই দেন। কিন্তু মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার মতো ইসলামী দেশও তো পর্যটন বিকাশে শীর্ষে রয়েছে। আমাদের ইচ্ছার অভাব, পরিকল্পনার অভাব, ধর্মটা অজুহাত মাত্র।

বিশ্বের অনেক দেশেই বিমানবন্দরে নামলেই আপনি সে দেশ সম্পর্কে ধারণা নেয়ার মতো অনেক কিছু পাবেন। দিল্লি বা মুম্বাইয়েও হোটেলে হোটেলে এত লিফলেট, এত প্যাকেজ মনে হবে কয়েকমাস ঘুরলেও শেষ হবে না। মুম্বাইয়ে এমনকি বস্তি ট্যুরও আছে। বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। শুধু পুরান ঢাকাই হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য। বিশ্বের অনেকে দেশেই তাদের পুরোনো শহর সংরক্ষণ করে রাখে পর্যটকদের জন্য। আর আমরা প্রতিযোগিতায় নেমেছি ধ্বংসের। রূপলাল হাউসের মত অসাধারণ একটি স্থাপনা এখন মশলার আড়ত। রূপলাল হাউস দেখতে মানুষ ছুটে আসবে, মশলার আড়ত দেখতে নয়। পুরান ঢাকার শাখারিবাজার, ফরাশগঞ্জের অনেক এলাকা আছে, যেখানে ঢুকলে মনে হবে এখানে ইতিহাস কথা কয়। ঢাকার কাছে সোনারগাও তো হতে পারে পর্যটন আকর্ষণ। কিন্তু পুরান ঢাকা বা সোনারগাওকে চেনানোর মতো গাইড কই? পুরান ঢাকার ইতিহাস কই। বরং পুরান ঢাকাকে নতুন ঢাকা বানানোর প্রতিযোগিতা আমাদের। প্রায়ই শুনি, রাতের আঁধারে পুরোনো কোনো ঐতিহাসিক ভবন ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। একটা বিষয় কিন্তু পরিস্কার বাংলাদেশে কেউ নতুন ঢাকা বা পূর্বাচল দেখতে আসবে না, আসলে পুরান ঢাকাই দেখতে আসবে।

নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীকেন্দ্রিক পর্যটন ভাবনাও অনেক আকর্ষণীয় হতে পারে। কাশ্মীর গেলে আমরা সবাই ডাল লেকে হাইস বোটে রাত কাটাই। কিন্তু কাপ্তাই লেক বা ভরা হাওর কি ডাল লেকের চেয়ে কম সুন্দর। ভরা বর্ষায় উত্তাল পদ্মায় রাত কাটানোর মতো এক্সাইটিং প্যাকেজ আপনি কয়টা পাবেন। ইদানীং হাওর বা কাপ্তাই লেকে হাউস বোটে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা হচ্ছে। এটাকে আরো নিরাপদ, আরো সাশ্রয়ী, আরো আরামদায়ক করতে হবে। সুইজারল্যান্ড যাওয়ার ইচ্ছা যাদের, তারা তো সাজেকে গিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারেন। শুধু সাজেক নয়, বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় আরো কত অনাবিষ্কৃত সৌন্দর্য্য আছে, আমরা হয়তো জানিই না। পার্বত্য এলাকায় অনেক আকর্ষণীয় ও এক্সাইটিং ট্রেইল আছে। অতকিছু দরকার নেই চা বাগান বা সুন্দরবন বা লাউছাড়ার বিস্তীর্ণ সবুজ সামনে রেখে বৃষ্টি

দেখার মজাটাও কি কম? অথচ আমাদের সৌন্দর্য্যের আধার পার্বত্য এলাকাকে আমরা এখনও পুরোপুরি নিরাপদই করে তুলতে পারিনি। বাংলাদেশের মানুষ তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে না গিয়ে দার্জিলিং ছুটে যায়।

বাংলাদেশে পাহাড় এবং সমতল মিলে অনেক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বাস। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব কৃষ্টি, ঐতিহ্যবাহী খাবার ও পানীয়। সেই আদিবাসী গ্রামে বা চা শ্রমিকদের সাথে থাকাও হতে পারে পর্যটনের বিশেষ আকর্ষণ। কিন্তু আমরা তো আমাদের আদিবাসীদের স্বীকৃতিই দিতে চাই না। তাদের বিশ্বের সামনে তুলে ধরা তো অনেক পরের কথা আমাজনে যেতে না পারি, সুন্দরবনে তো চাইলেই যাওয়া যায়। কিন্তু সুন্দরবনকে কি আমরা পর্যটকদের কাছে নিরাপদ ও আনন্দদায়ক করতে পেরেছি?

বাংলাদেশের মত ঋতুবৈচিত্র্য বিশ্বের কয়টি দেশের আছে? এখানে প্রত্যেকটি ঋতুর আলাদা রূপ আছে। আপনি প্রতিটি ঋতু আলাদাভাবে অনুভব করতে পারবেন। একজন

ভিনদেশীর কাছে সেই সৌন্দর্য্য কি আমরা পুরোপুরি তুলে ধরতে পেরেছি? বিদেশ থেকে আসা মানুষ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আতিথেয়তা আর সারল্যে মুগ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা পর্যটকদের স্বাগত জানাতে তৈরি নই। সরকারের পরিকল্পনাহীনতা, মনোযোগের অভাব তো আছেই; নানা চেষ্টা সত্ত্বেও বেসরকারি খাত পুরোপুরি বিকষিত হয়নি। আমি খুব ঘুরেছি, তা নয়। কিন্তু অল্পবিস্তর অভিজ্ঞতা থেকে বুঝি বাংলাদেশ অনেক ব্যয়বহুল। কক্সবাজারের হোটেল ভাড়া অন্য অনেক দেশের চেয়ে বেশি। এটা জানার জন্য আপনাকে সব জায়গায় যেতেও হবে না। ইন্টারনেটে বসেই তুলনাটা করতে পারবেন। দাম বেশি, কিন্তু সেবার মান যাচ্ছেতাই। পর্যটনের মূল সাফল্য হলো, একবার গেলে বারবার যাওয়ার আকাঙ্খা তৈরি হওয়া। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক জায়গা সৌন্দর্য্যে এগিয়ে থাকলেও সেবায় এতটাই পিছিয়ে থাকে, কেউ দ্বিতীয়বার যাওয়ার সাহস পান না।

মানুষ জরুরি কাজে কোথাও গেলে আরাম-আয়েশ খোজেঁ না। প্রয়োজনে রেলস্টেশনে রাত কাটাতেও সমস্যা হয় না তার। কিন্তু যদি বেড়াতে যায়, তাহলে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ সুবিধাটাই পেতে চাইবেন। সর্বোচ্চ সুবিধা মানে কিন্তু ফাইভ স্টার সুবিধা নয়। মোটামুটি থাকার ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন টয়লেট সুবিধা, ন্যায্যমূল্যে খাবার, সাশ্রয়ী পরিবহন সুবিধা তো একদম ন্যূনতম চাওয়া। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক এলাকায় এই সুবিধাগুলোও নেই। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আগ্রহে দেশে এখন নতুন নতুন অনেক পর্যটন স্পট গড়ে উঠেছে। কিন্তু সেসব এলাকায় যাওয়ার ভালো রাস্তা নেই। টয়লেট সুবিধাও অপ্রতুল। বিশেষ করে নারীদের জন্য বেড়ানো মানেই যে হাজারটা ঝক্কি। আছে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা। পর্যটন স্পটগুলোতে ইচ্ছামত হোটেলভাড়া, পরিবহন ভাড়া, খাওয়ার দাম আদায় করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতিবাদ করলে হেনস্থা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেকে মান ইজ্জত বাঁচাতে বাড়তি দাম দিয়ে কোনোরকমে ফিরে আসেন।

দেশের বাইরে বেড়ানোর জন্য ট্যুর অপারেটরদের নানারকমের প্যাকেজ থাকে। অনেকে কাঙ্খিত দেশের ভিসা নিয়ে নিজ উদ্যোগে বেড়ানোর পরিকল্পনা করেন।

অনেকে আবার সব দায়িত্ব ট্যুর অপারেটরদের ওপর ছেড়ে দেন। বাংলাদেশে অনেক ভালো অপারেটরের অনেক আকর্ষনীয় প্যাকেজ আছে। অনেকে আবার চালাকি করেন। অনলাইন কেনাকাটার মত ছবি দেখানো হয় এক প্যাকেজের, বাস্তবে মেলে তার উল্টো। অধিকাংশ প্যাকেজ যেহেতু প্রিপেইড, তাই পর্যটকের খুব বেশি কিছু করার থাকে না। ফিরে এসে প্রতিবাদ করেও লাভ হয় না। আমি নিজে একবার কলকাতা গিয়ে মানসম্পনস্ন হোটেল না পেয়ে অন্য হোটেলে উঠেছিলাম। প্রিপেইড সেই হোটেলের টাকাটা গচ্চা গিয়েছিল।

কোভিডের সময় গোটা বিশ্বই স্থবির হয়ে গিয়েছিল। পর্যটন শিল্পও তাই একদম শূন্যে নেমে এসেছিল। কোভিডের পর আবার ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে কোভিড বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তার ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশেও। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা অর্থনীতিকে আরো গাড্ডায় ফেলেছে।

মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিটে অনেকদিন ধরেই। আর সংকট হলে মানুষের পরিকল্পনায় প্রথম কোপটা পড়ে বেড়ানোতে। ডলারের মূল্যও পাগলা ঘোড়া চড়ে বসেছে বলে, বেড়ানোর খরচও বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হারে। তাই পর্যটন শিল্প কোভিডের আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি। এখন যা বাস্তবতা, ফিরতে অনেক সময় লাগবে।

তবে মানুষের বেড়ানোর আকাঙ্খা তো আর থেমে থাকবে না। এইসময়ে আমরা যদি অভ্যন্তরীন পর্যটনকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি, আখেরে লাভ আমাদেরই। তাই আমাদের দেশী পর্যটন স্পটগুলোকে আরো সাশ্রয়ী, ন্যূনতম সুবিধাসম্পন্ন করে তুলতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে পর্যটন স্পটগুলো যাতে নারীবান্ধব হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি বা সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি' গদগদ আবেগের এই গান দিয়ে আমরা পর্যটক টানতে পারবো না। আমাদের আবেগ আছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে তো বাইরের মানুষের আবেগ থাকবে না। এ জন্য চাই প্রয়োজনীয় নীতিমালা, সমন্বিত পরিকল্পনা এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। চাই অবকাঠামো, নিরাপত্তা এবং প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলা। আমাদের দেশের অনেকেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়ান পর্যটক হিসাবে। কিন্তু চলুন আগে নিজের দেশটা দেখি।

‘বহু দিন ধ'রে বহু ক্রোশ দূরে

বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে

দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,

দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া

একটি ধানের শিষের উপরে

একটি শিশিরবিন্দু।‘

এই শিশিরবিন্দুর সৌন্দর্য্য দেখেই তো কাটিয়ে দেয়া যায় অনেকটা সময়।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান