সুন্দরবনের অবাক করা সৌন্দর্য্য

সুন্দরবন যেন মাছরাঙার শহর, আমাদের দেশের ১২ প্রজাতির মাছরাঙার প্রায় বেশিরভাগেরই দেখা মিলবে সুন্দরবনে৷ এই ব্রাউন উইংড কিংফিশার বা খয়রাপাখ মাছরাঙার দেখা মেলে সুন্দরী খালে৷ খালের উপরে গাছের ডালে বসে মাছ শিকারের আশায় ওঁত পেতে ছিলো৷ আমাদের অস্তিত্ব টের পেয়ে ক্যা ক্যা করে ডেকে উঠলো৷

সুন্দরবনের কথা মাথায় এলেই চলে আসে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথা৷ তার সাথে সাথে মাথায় আসে হরিণের কথা৷ সুন্দরবন, বাঘ, হরিণ যেন এক সুতোয় গাঁথা মালা৷ সতর্ক এই হরিণ পরিবারটি জামতলিতে কান খাড়া করে আমাদের দেখছিলো৷ এই সদা খাড়া কানই তাঁদের আত্মরক্ষার অন্যতম অস্ত্র৷

বর্ষা যাই যাই করছে, শরৎ এলো বলে৷ ডিমের চর যাওয়ার পথে একরাশ বৃষ্টির পর নীল আকাশের নিচে দেখা এক টুকরো সুন্দরবন৷

সুন্দরবনের করমজলে পাওয়া এশিয়ান ডোয়ার্ফ মাডস্কিপার বা নীল চিড়িং মাছ৷ পুরুষ মাছ স্ত্রী মাছকে আকর্ষিত করার চেষ্টায় পিঠের পাখনা মেলেছে ও রঙ উজ্জ্বল করেছে৷

পুরুষ নীল চিড়িং মাছ৷ ভাটার সময় শিকারের খোজে ব্যস্ত৷ এরা মূলত মাংসাশী৷ ছোট পোকামাকড় এবং অন্যান্য অমেরুদণ্ডী প্রাণী খায়৷

এদের চোখ মাথার উপরে অবস্থিত ও দুই দিকে প্রসারিত৷ এবং বিশেষায়িত পাখনার সাহায্যে কাদায় হেটে বেড়াতে ওস্তাদ৷ মাঝে মাঝে লেজ বাঁকা করে লাফ দেয়৷

করমজলের ভাটায় শ্বাসমূলের পাশে পুরুষ চিড়িং মাছ৷ পাখনা মেলে দূর থেকে সঙ্গিনীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় ব্যস্ত৷ এসময় এদের রঙ উজ্জ্বল হয়ে উঠে৷

অনেক ক্ষণ ধরে নানা রকমের কৌশলের পর অবশেষে একসাথে পুরুষ ও স্ত্রী চিড়িং মাছ৷ কী সুন্দর তাদের একসাথে আসার দৃশ্য!

সাধারণ মাছরাঙা বা কমন কিংফিশার এটি৷ সারা দেশে এদের সহজে দেখা গেলেও সুন্দরবনে দু’বার দেখেছি শুধু৷ খালের পাশে গোলাকার পাতার নিচে বসে একাগ্র চিত্তে মাছ শিকারের আশায়৷

মোট ৩৫টি প্রজাতির সরীসৃপের আবাস সুন্দরবন৷ হরহামেশা কুমীরের দেখা না মিললেও প্রায়ই দেখা মেলে গুই সাপের৷ সাপের খালে দেখা মিলল এই গুই সাপের৷ জোয়ায়ের পানিতে খাল পাড়ি দিচ্ছিলো সে৷

নৌকায় বসে হুট করে আওয়াজ পাওয়া গেলো খালের মধ্য থেকে৷ চকিতে ক্যামেরা তাক করতেই দেখা গেলো একটা খয়রা পাখ মাছরাঙা পানি থেকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে খালি ঠোটে খালের পাশে ডালে এসে বসলো৷ শিকার একেবারেই হাতছাড়া! মিস!