1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জীবনের বিনিময়ে চামড়া শিল্প!

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১১ ডিসেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশে চামড়া শিল্পে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অধিকাংশই ৫০ বছর হওয়ার আগে মারা যান৷ ট্যানারির বিশাক্ত পরিবেশে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া কাজ করার কারণেই তাঁদের এ পরিণতি৷ আর এই শ্রমিকদের একটা বড় অংশের বয়স ১৮ বছরের নীচে৷

https://p.dw.com/p/1HLtB
Symbolbild Asien Kinderarbeit Bangladesch
ছবি: picture alliance/ZUMA Press

প্রধানত ঢাকার হাজরিবাগ এলকাতেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে দেশের ট্যানারিগুলো৷ সংখ্যার বিচারে কম করে হলেও ২০০টি ট্যানারি তো হবেই৷ আর এ সমস্ত ট্যানারিতে কাজ করেন অন্তপক্ষে ২৫ হাজার শ্রমিক৷ ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহার করা হয় ক্রোমিয়াম, খার এবং অ্যাসিড৷ শ্রমিকরা কোনো ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া খালি পায়ে এবং খালি হাতে এই প্রক্রিয়াজাতের কাজ করেন৷ ফলে ক্যানসার ও চর্মরোগ সহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হন তাঁরা, যা তাঁদের অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়৷

শুধু তাই নয়, এখানকার বর্জ্য আশেপাশের পরিবেশও দূষিত করে৷ ট্যানারিগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে ২২ হাজার কিউবিক লিটার বিষাক্ত বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে এবং তা দূষিত করছে বুড়িগঙ্গার পানি, হাজারিবাগের মাটি ও বায়ুকে৷ শ্রমিক ছাড়াও ঐ এলাকার বাসিন্দাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে৷ বলা বাহুল্য, হাজারিবাগ খুবই ঘনবসতিপূর্ণ একটি এলাকা৷ সেখানে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন৷ আর এই ট্যানারিগুলো তাঁদের সকলের জীবন দুর্বিসহ করে তুলছে৷

Bildergalerie Bangladesch Müllhalden
ছবি: Getty Images

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ-র এক গবেষণায় থেকে জানা যায় যে, ‘এই শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন৷ বিশেষ করে শিশুরা, যারা এই শিল্পে কাজ করছে, তাদের অবস্থা নাকি খুবই খারাপ৷ কারখানায় ব্যবহৃত সালফিউরিক অ্যাসিড, ক্রোমিয়াম এবং সীসা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ তার ওপর এ সব কারখানায় কোনো বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা নেই, নেই কোনো ‘ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট'-ও৷'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক গবেষণায় বলা হয়, ‘‘চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত ক্রোমিয়াম মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর৷ তাই ট্যানারিতে শ্রমিকরা যেভাবে খালি গায়ে ও খালি হাতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন, তাতে এই রাসায়নিক প্রবেশ করে তাঁদের ফুসফুসে ও চামড়ায় ক্যানসার হতে পারে৷ এছাড়া নানা ধরনের চর্মরোগও দেখা দিতে পারে৷''

ইকবাল হাবিব

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বা বাপা-র মুখপাত্র ইকবাল হাবিব ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুধু ট্যানারি নয়, তাদের কেন্দ্র করে করে ছোট ছোট আরো অনেক অপরিকল্পিত কারখানা গড়ে উঠেছে বাংলাদেশে৷ সেসব কারখানায় ট্যানারির কঠিন বর্জ্য, যেমন টুকরো চামড়া, গরুর হাড়, চর্বি, দাঁত – এগুলো পুড়িয়ে পোল্ট্রি ফিডসহ আরো নানা জিনিস তৈরি করা হয়৷ এ সব কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া পুরো এলাকাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে৷''

তিনি বলেন, ‘‘ট্যানারি এবং ঐ সব ছোট ছোট কারখানার কারণে পুরো হাজারিবাগ এলাকার মানুষ, মাটি, পানি এবং বাতাস এখন বিষে আক্রান্ত৷ আর এর সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ ও বুড়িগঙ্গাও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে৷ অথচ জীবন ও পরিবেশের ক্ষতি করে, এমন ট্যানারির ব্যবসা কিন্তু ঠিকই ফুলে ফেঁপে উঠছে৷ ট্যানারির মালিকরা শ্রমিকদের ঝুঁকির মধ্যে কাজ করালেও, মজুরি দেয় কম৷ এমনকি তাঁদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাও করে না৷''

প্রসঙ্গত, পরিবেশ আইনজীবী সমিতির আবেদনে আদালত ২০০৫ সালে হাজারিবাগের চামড়া কারখানা ঢাকার বাইরে সরিয়ে নেয়ার আদেশ দেয়৷ কিন্তু বার বার সময় চেয়েও এখনও এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি৷

বাংলাদেশ এ বছর ১.১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করেছে উন্নত বিশ্বে৷ গত বছর এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১.১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷

বন্ধুরা, আপনারা কি কখনও হাজারিবাগে গেছেন? দেখেছেন চামড়া কারখানার শ্রমিকদের দুর্বিসহ জীবন? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য