২০১৭ সালে বিজ্ঞানের জগতের নানা চমক
২০১৭ সালে বিজ্ঞানের জগতের কোন ঘটনাগুলি বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে অনুপ্রাণিত করেছে? শনিগ্রহে ক্যাসিনি মহাকাশযানের অন্ত, নাকি নতুন এক্স-রে লেজারের উদ্বোধন, নাকি বনমানুষদের একটি তৃতীয় প্রজাতি? ছবিঘরে পাবেন তার কিছু উত্তর৷
‘মার্চ ফর সায়েন্স’
২২শে এপ্রিল তারিখে সারা বিশ্বের ৬০০টি শহরে নাগরিকরা বিজ্ঞানের স্বাধীনতার জন্য মিছিল করেন৷ এই ‘মার্চ ফর সায়েন্স’-এর উদ্যোক্তা ছিলেন গবেষকরা স্বয়ং৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গবেষণায় রাষ্ট্রীয় অর্থানুকুল্যের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে চান, তারই বিরুদ্ধে ছিল এই বিক্ষোভ৷ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভিত্তি বৈজ্ঞানিক তথ্য হওয়া উচিত, বলে আন্দোলনকারীরা দাবি করেন৷
অতিকায় টেলিস্কোপ
মে মাসে চিলিতে একটি ‘এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ’ নির্মাণ শুরু হয়৷ সেজন্য আটাকামা মরুভূমিতে ৩,০৬০ মিটার উঁচু সেরো আমাজোনেস পাহাড়ের চুড়া ডাইনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিতে হয়৷ সেই সমতলের উপর ৪০ মিটার ব্যাসের টেলিস্কোপটি বসানো হচ্ছে, যা হবে কিনা বিশ্বের বৃহত্তম টেলিস্কোপ৷ এই টেলিস্কোপ দিয়ে ২০২৪ সাল থেকে সুদূর জ্যোতির্পুঞ্জের গ্রহ পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে৷
হোমো সেপিয়েন্স-রা কতদিন ধরে পৃথিবীতে আছে?
মে মাসে নৃতত্ত্বের জগতে হুলুস্থুল৷ দেখা যাচ্ছে, ১৯৬১ সালে মরক্কোয় খুঁজে পাওয়া একটি মানুষের মাথার খুলির বয়স নাকি দু’লাখ নয়, তিন লাখ বছর! তার অর্থ, হোমো সেপিয়েন্স – আমরা যাদের বংশধর – তারা অনেক বেশিদিন ধরে ধরাধামে রয়েছে৷
বৃহস্পতির ঘূর্ণি
জুলাই মাসে জুনো মহাকাশযান বৃহস্পতি গ্রহের যতো কাছ দিয়ে যায়, এর আগে কোনো মহাকাশযান তা করতে পারেনি৷ গ্যাসের গ্রহটির বিষুবরেখার কাছে যে একটি রহস্যময় লাল দাগ আছে – আসলে একটি ঘূর্ণি – তার ছবি পাঠায় জুনো৷ ঐ ঘূর্ণিতে গ্যাসের গতি ঘণ্টায় ৫০০ কিলোমিটারের বেশি৷ ঘূর্ণিটির ব্যাস ১৬,০০০ কিলোমিটার৷ তবে ঘূর্ণিটা নাকি কমে আসছে৷
ডিএনএ কাটার কাঁচি
‘ক্লাস্টার্ড রেগুলারলি ইন্টারস্পেস্ড শর্ট প্যালিনড্রমিক রিপিটস’-এর আদ্যক্ষর মিলিয়ে পদ্ধতিটির নাম সিআরআইএসপিআর/কাস-মেথড৷ বায়োকেমিস্ট্রির এই পদ্ধতিটি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ডিএনএ কাটা বা পরিবর্তন করা যায় (জেনোম এডিটিং)৷ ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ভ্রুণের মধ্যে হৃদরোগের একটি জিন মেরামত করা সম্ভব হয় – যদিও মার্কিন আইনের কারণে তা সংশ্লিষ্ট মহিলার জরায়ুতে বসানো সম্ভব হয়নি৷
সূর্যগ্রহণ
২১শে আগস্ট তারিখে উত্তর অ্যামেরিকার লক্ষ লক্ষ মানুষ একটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখেন – যার বৈজ্ঞানিক মূল্য খুব বেশি না হলেও, সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্যোতির্বিদ্যা ও নক্ষত্রলোক সম্পর্কে কৌতূহল সৃষ্টি করায় সূর্যগ্রহণের জুড়ি নেই৷
বিশ্বের বৃহত্তম এক্স-রে লেজার কাজ শুরু করল
হামবুর্গের কাছে এই গবেষণাকেন্দ্রটি তৈরি করতে আট বছর সময় লেগেছে৷ ‘এক্স-রে ফ্রি-ইলেকশন লেজার’ বলতে বোঝায় একটি ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার লম্বা সুড়ঙ্গ, যার মধ্যে প্রতি সেকেন্ডে ২৭,০০০ এক্স-রে’র ঝলক সৃষ্টি করা হয়৷ এই পন্থায় গবেষকরা বিভিন্ন পদার্থ ও বায়োমলিকিউলের কাঠামো ও প্রতিক্রিয়া যাঁচ করতে পারেন৷ এক্সএফইএল তৈরি করতে ১২০ কোটি ইউরো খরচ হয়েছে৷
ক্যাসিনি, বিদায়!
নাসার ক্যাসিনি স্পেস প্রোব বিশ বছর ধরে মহাশূন্যে ঘোরাফেরা করেছে৷ ২০০৪ সাল থেকে এই ২,১২৫ কিলোগ্রাম ওজনের মহাকাশযান শনিগ্রহের চারপাশে ঘুরছে৷ গত সেপ্টেম্বর মাসে ক্যাসিনিকে পরিকল্পিতভাবে শনিগ্রহের আবহাওয়ামণ্ডলে পুড়ে ছাই হতে দেওয়া হয়৷ সবশেষে ক্যাসিনি ২২ বার শনিগ্রহ ও তার চক্রগুলির ভিতর দিয়ে যায়৷
মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ শেষমেষ নোবেল পুরস্কার পেল!
মানে ঠিক মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ নয়, তবে তার অস্তিত্বের প্রমাণ দেওয়ার জন্য ওয়াইস, থর্ন ও ব্যারিশ, এই তিন বিজ্ঞানী পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেলেন ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে৷ এর কিছু পরেই বহুদূরের দু’টি নিউট্রন তারকার মধ্যে সংঘর্ষ থেকে আসা মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ রেকর্ড করা সম্ভব হয় – শুধু তাই নয়, কোথায় সেই সংঘর্ষ ঘটেছে, তাও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়৷
পোকামাকড় গেল কোথায়?
অক্টোবরের মাঝামাঝি একটি দীর্ঘমেয়াদি জরিপের ফলাফল বিজ্ঞানীদের সচকিত করে – শুধু বিজ্ঞানীদেরই নয়৷ জার্মানির বিভিন্ন স্থানে ২৭ বছর ধরে কীটপতঙ্গের পরিমাণ পরিমাপ করে দেখা গেছে যে, এই ২৭ বছরে প্রায় ৭৫ ভাগ পোকামাকড় উধাও হয়েছে! জরিপটি জার্মানি তথা ইউরোপের জন্য পুরোপুরি প্রতিনিধিত্বমূলক না হলেও, এই ফলাফল যে অশনি সংকেতের সামিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷
বনমানুষদের তৃতীয় প্রজাতি
নভেম্বর মাসে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের গভীর জঙ্গলে ওরাংওটাং বা বনমানুষদের একটি তৃতীয় প্রজাতি আবিষ্কৃত হয় – যদিও সে প্রজাতির মাত্র ৮০০ নমুনা আজও বেঁচে আছে৷ তবে যে হারে অরণ্যনিধন চলেছে, তাতে মানুষের এই সদ্য আবিষ্কৃত সহোদররা ইতিমধ্যেই বিপন্ন বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে৷