1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

২ মাস ভূগর্ভে আটকে থাকার পর এবার মুক্তির অভিযান

১২ অক্টোবর ২০১০

স্মরণাতীত কালের এ এক অবর্ণনীয় দুরবস্থা! টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চিলির উত্তরাংশের কোপিয়ানো’র সেই খনি অভ্যন্তরে আটকে পড়েছিলেন ৩৩ জন শ্রমিক৷ দশটি সপ্তাহ ধরে অমানবিক এক জীবনে রুদ্ধ রয়েছেন এইসব খনি শ্রমিকরা৷

https://p.dw.com/p/PcRt
আটক খনি শ্রমিকদের ছবি ৩১ আগস্ট টেলিভিশনে প্রচারিত হয়ছবি: AP

মঙ্গলবার তাঁদের মুক্ত পৃথিবীর আলো-হাওয়ায় তুলে আনার চূড়ান্ত অভিযানটি শুরু হচ্ছে৷ ১০ সপ্তাহের এই এতোটা সময় ধরে পৃথিবীর আলো-বাতাস থেকে মাটির অনেক গভীরে নিরন্তর টিকে থাকার যুদ্ধ শেষে মঙ্গলবার তাঁরা সব অর্থেই আলোয় আসবেন৷

এটা এখন নিশ্চিৎ যে প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা এই ৩৩ জন খনি শ্রমিকের উদ্ধারাভিযানে অংশ নিতে যাচ্ছেন স্বয়ং চিলির রাষ্ট্রপতি সেবাস্টিয়ান পিনেরা৷ তার সঙ্গে বলিভিয়ার রাষ্ট্রপতি ইভা মোরালেসও থাকবেন৷ উল্লেখ্য, খনিগর্ভে আটকে পড়া ৩৩ শ্রমিকদের মধ্যে ৩২ জনই চিলির আর একজন বলিভিয়ার নাগরিক৷ গোটা পৃথিবীর প্রায় সতেরোশো সংবাদকর্মী ঠিক যেন বুভুক্ষের মতই ওৎ পেতে রয়েছেন এইসব খনি শ্রমিকদের আতংক, যন্ত্রণা আর ক্লেশকর অভিজ্ঞতার কাহিনী ধারণ করার জন্য৷

Flash-Galerie Grubenunglück Chile
মুক্ত হবার অপেক্ষাছবি: picture-alliance/dpa

আজ মঙ্গলবার মধ্যরাতে (গ্রিনিচ মান সময় ৩টা) নাগাদ এই অভিযান শুরু হচ্ছে, এবং এই উদ্ধার অভিযানটি টানা দুই দিন ধরেই চলবে বলে জানা গেছে৷ প্রচন্ড ঝুঁকিপূর্ণ এই অভিযানে বিপদ ঘটার আশংকাও রয়েছে৷ এর আগে সে দেশের খনি মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছিলেন যে, যদিও এর আরো আগেই উদ্ধারের কাজটি শুরু করতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু কারিগরি সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি৷

উদ্ধারকাজ শুরু করার একটি পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টায় সাফল্য পাওয়ার পরপরই এই চূড়ান্ত অভিযানটি শুরু করার দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে৷ বিশেষ যে ক্যাপসুল লিফটের মাধ্যমে আটকে পড়া খনি শ্রমিকদের উপরে তুলে আনা হবে, সেটি'র অভ্যন্তরটি রাঙানো হয়েছে চিলির পতাকার রঙে৷ খনি শ্রমিকদের উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত ধাতব এই ক্যাপসুল লিফটটির নীচ থেকে উপরে উঠতে একেকবারে সময় লাগবে প্রায় পনেরো থেকে বিশ মিনিট৷ হিসেব করলে খনির তলদেশ থেকে উপরের মাটি পর্যন্ত এটির উচ্চতা ছুঁতে দুইটি আইফেল টাওয়ার জোড়া দিতে হবে৷

জানা গেছে, উদ্ধারের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকলেও আটকে পড়া শ্রমিকদের কেউই উপরে উঠে আসার ক্ষেত্রে প্রথমজনটি হতে চাইছেন না৷ পৃথিবীর মুক্ত হাওয়ায় বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার সাধ, স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার তীব্র আকাঙ্খা সত্ত্বেও তারা ভয় পাচ্ছেন এই সুদীর্ঘ খোঁড়ল বেয়ে ওপরে উঠতে৷ জানা গেছে, উদ্ধার অভিযানে প্রথমে দুজন খনি বিশেষজ্ঞ এবং দুজন মেরিন নার্সও নীচে নামবেন৷ তাঁরাই ঠিক করবেন পর্যায়ক্রমে কিভাবে শ্রমিকরা উপরে উঠবেন৷ তাঁদের যাবতীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে৷ ওপরে তোলার সময়ে প্রত্যেককেই একটি বিশেষ ধরণের পোষাক পরতে হবে যা তাঁদের উৎকন্ঠা মাপবে বলেই জানা গেছে৷ এরপর টানা দুইদিন পর্যবেক্ষণে থাকার পরই তাঁরা আবারো তাঁদের সেই স্বাধীন জীবনে ফিরে যেতে পারবেন৷

উল্লেখ্য, আগস্টের ৫ তারিখে আকস্মিক এক দূর্ঘটনার ফলে হতভাগ্য এই ৩৩ জন শ্রমিক প্রায় দুই হাজার একচল্লিশ ফুট গভীরে খনিটির এই অনন্ত কূয়োয় আটকে পড়েছিলেন৷ আজই তাঁরা মুক্তি পেতে চলেছেন৷ আর শত আশংকা, উৎকন্ঠা সত্ত্বেও আটকে পড়া খনি শ্রমিকদের স্বাগত জানাতে উদ্ধারাভিযানের অকুস্থলটির চারপাশে এখন এক বিরল উৎসবের পরিবেশ৷

প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক