1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

১৫০ আসনে ইভিএম নেই, তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে

হারুন উর রশীদ স্বপন
২৪ জানুয়ারি ২০২৩

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এ প্রস্তাব বাতিল হওয়ায় ১৫০ আসনে ইভিএম-এ ভোটের পরিকল্পনা থেকে সরেছে নির্বাচন কমিশন৷

https://p.dw.com/p/4Mdu8
আগের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তখন ইভিএমের বিরোধিতা করেছিল।
আগের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তখন ইভিএমের বিরোধিতা করেছিল।ছবি: Abdul Halim

নির্বাচন কমিশন বারবার বলে আসছিল ইভিএমে ভোট হলে নির্বাচনে কারচুপি বন্ধ করা সহজ হবে। সঙ্গে তারা ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা দেয়ারও পরিকল্পনা করছিল। এখন ‘আর্থিক কারণে' সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। কিন্তু কাগজের ব্যালটের ভোটেও কি নির্বাচন কমিশন কারচুপি ঠেকাতে পারবে? কীভাবে?

১৫০ আসনে এই ইভিএম প্রকল্পের জন্য নির্বাচন কমিশনের চাহিদা ছিল আট হাজার সাতশ' ১১ কোটি টাকা। একনেকের ১৭ জানুয়ারির বৈঠকে তাদের বরাদ্দ প্রস্তাব ওঠার কথা থাকলেও ওঠেনি। কমিশনের আশা ছিল পরের বৈঠকে হয়ত বরাদ্দ হবে। কিন্তু এরইমধ্যে পরিকল্পনা কমিশন এই বরাদ্দের ব্যাপারে অসম্মতি জানিয়েছে। তারা লিখিতভাবে জানায়, "বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় ‘ইভিএমের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপন' প্রকল্পটি আপাতত বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তাই প্রকল্পটি নির্বাচন কমিশনে ফেরত পাঠানো হলো।”

তারপর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাওও বলেছেন, এখন ইভিএমের পিছনে টাকা খরচ করার সময় নয়। খাদ্যের ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

গত বছরের ২৩ আগস্ট নির্বাচন কমিশন ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্ত শাসক দল আওয়ামী লীগ ছাড়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তখন ইভিএমের বিরোধিতা করে।

নির্বাচনের জন্য ইভিএম একটি দুর্বল পদ্ধতি: ড. বদিউল আলম মজুমদার

গত সংসদ নির্বাচনে কিছু আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ইভিএমের ব্যবহার হয়। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, তাদের কাছে এক লাখ ৫০ হাজার ইভিএম  আছে। তা দিয়ে ৬০-৭০টি আসনে ইভিএমে নির্বাচন করা যায়। কিন্তু প্রায় অর্ধেক মেশিনই এখন নষ্ট। প্রকল্পে সেই মেশিনগুলো ঠিক করার বরাদ্দও ছিল।এখন সেটাও আটকে গেল।

ইভিএমের বাজেটের বাইরেও নির্বাচন কমিশন এক হাজার ২২৫ কোটি টাকার নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনার প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ, মোটরযান ও জ্বালানি, গোয়েন্দা, অপারেশনাল ও নিরাপত্তা সামগ্রী। আর চার লাখ সিসি ক্যামেরা কেনার জন্যও তারা অর্থ চেয়েছে।

কিন্তু নর্বাচন কমিশন সীমিত আকারে হলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে অনঢ় আছে। ইভিএমের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল রকিবুল হাসান জানান, "এই প্রকল্পের আওতায় এক লাখ ৫০ হাজার ইভিএম আছে। তবে সব কর্মক্ষম নাই। আমরা এখন কোয়ালিটি চেকিং ( কিউসি) শুরু করেছি। এই কাজ শেষ হলে বলা যাবে কতগুলো ইভিএম ব্যবহার উপযোগী আছে।”

বলা হচ্ছে যে কয়টি ইভিএম আছে সেগুলো দিয়ে ৬০টি আসনে ভোট করা সম্ভব। কোয়ালিটি চেকিং জানা যাবে আসলে কতগুলো আসনে ইভিএমে নির্বাচন সম্ভব।

কারচুপি রোধ হবে কীভাবে?

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, "নির্বাচনের জন্য ইভিএম একটি দুর্বল পদ্ধতি। তাই যত বেশি আসনে ইভিএমে নির্বাচন হবে তত বেশি ভোটের ফলাফল প্রভাবিত করার সুযোগ থাকবে। ইভিএমে  নির্বাচনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি নির্বাচন কমিশন, তবে ১৫০ আসনে আর পারছে না। কিন্তু ৫০ আসনেও যদি হয়, তাহলে ওই ৫০ আসনে শাসকরা চাইলে ফলাফল প্রভাবিত করতে পারবে।”

তার কথা, "আসলে মূল বিষয় হলো নিরপেক্ষ, দক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশন যে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় এটা নিয়েই অনেকের মধ্যে সন্দেহ আছে।”

নির্বাচন কমিশন অনেক কথা বলে সময় ব্যয় করে ফেলেছে: ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ

তিনি বলেন, "ইভিএম আর কাগজের ব্যালট যে পদ্ধতিতেই ভোট নেয়া হোক না কেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে না। নির্বাচনকে বহুভাবে প্রভাবিত করা যায়। কারণ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনি পক্ষপাতদুষ্ট, প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট, নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট।”

আর জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ (জানিপপ)-এর চেয়ারম্যন অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ মনে করেন, "এখনো ঠিক নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে শেষ পর্যন্ত কতগুলো আসনে ইভিএমে নির্বাচন হবে। কারণ, সর্বোচ্চ ১৫০ আসনের পরিকল্পনা স্থগিত হয়েছে, বাতিল নয়। অর্থ সংকটের কারণে এটা করা হচ্ছে। তবে যে মেশিনগুলো আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নির্বাচন কমিশন করবে বলেই মনে হয়।”

তার কথা, "নির্বাচন কমিশন অনেক কথা বলে সময় ব্যয় করে ফেলেছে। এখন তাদের কাজ করা উচিত। ইভিএম বা ব্যালট পেপার যেভাবেই নির্বাচন হোক, সেটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা করা দরকার, কমিশন এখনো তা করেনি। এখন তাদের সেটার জন্য জাম্প স্টার্ট করা উচিত।”

তবে তিনি মনে করেন, " ইভিএম রিরোধীদের জন্য একটি সুযোগ, কারণ, এই পদ্ধতিতে জালিয়াতির সুযোগ কম। কিন্তু সব কিছু নির্ভর করে নির্বাচন কমিশনের দৃঢ়তা  ও নিরপেক্ষতার ওপর।”