হেফাজতের ৯৯ ভাগ নেতা-কর্মী কারামুক্ত
২ মে ২০২৩বুধবার ঢাকায় হেফাজত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক আছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে। বৈঠকে এখানো আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে কথা হবে বলে জানান, হেফাজতের নায়েবে আমীর মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী। তিনি জানান, রোববারও দুই নেতা মুক্তি পেয়েছেন তারা হলেন, মাওলানা কামরুদ্দিন ও মিজানুর রহমান। হেফাজতের এক হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মী আটক হয়েছিলেন ২০২১ সালে।
তিনি জানান, এখন যারা আটক আছেন তারা হলেন, হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, সহকারী মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, সাবেক অর্থ সম্পাদক মুফতী মুনির হুসেন কাসেমী, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুফতী হারুন ইজহার, মুফতী নুর হুসাইন নুরানী, রফিকুল ইসলাম মাদানী, আব্দুল মান্নান ও দিদারুল আলম। এই সাতজন ছাড়া আরো তিনজন কর্মী আটক আছেন। তারা হলেন অনিক দত্ত( নও মুসলিম), মো. সোহাগ ও আজিজুল হক।
নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফর ও পরবর্তী ঘটনা এক হাজারে বেশি নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মুফতি হারুন ইজাহারও সবগুলো মামলায় জামিন পেয়েছেন। তবে তার পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতায় তিনি এখনো মুক্তি পাননি। আর শিশু বক্তা হিসেবে আলোচিত রফিকুল ইসলাম মাদানী হাইকোর্টে সব মামলায় জামিন পেলেও চেম্বার আদালত একটি মামলায় জামিন স্থগিত করে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন।
হেফাজত নেতারা বলছেন, তারা আশা করছেন খুব দ্রুতই আটক নেতারা জামিনে মুক্ত হবেন। তবে শুধু মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে সংকট হতে পারে। তিনি ১২টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। তাকে মুক্তি পেতে হলে আরো ২৮ মামলায় জামিন পেতে হবে।
হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২৫০টির মতো মামলা তদন্ত বা বিচার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৩৪টি মামলা হয়। আর ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে তান্ডবের ঘটনায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মোট মামলা হয় ৮৩টি। এর বাইরে আরো মামলা আছে। হেফাজত নেতারা জানান, মামলাগুলো ২০১৩, ২০১৬, ২০১৮, ২০২১ সালের।
গত ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়ে হেফাজতের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান । ওই বৈঠকে ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক ও হেফাজত নেতা মুফতি জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, "ওই বৈঠকে আমরা আমাদের আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি তুললে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দেন। তার ফলও পেতে শুরু করেছি। আমাদের লোকজন মুক্তি পাচ্ছেন।”
তিনি বলেন, "ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের ইফতার মাফিলে যোগ দেন। সেখানেই আমাদের সঙ্গে কথা হয়। আর আমরা এখন মাদ্রাসার নানা কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত আছি। কোনো আন্দোলন সংগ্রাম আমাদের কাজ নয়। সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখন ভালো।”
মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে সরকারের যে কথা হয়েছে তাতে মামলাগুলো প্রত্যাহার বা নিস্পত্তির বিষয়ও ছিলো। কিন্তু গত সপ্তাহে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাতটি মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেই ৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। নেতা-কর্মীরা জামিনে মুক্তি পেলেও মামলাগুলো থেকে যাচ্ছে। তাই পুরো বিষয়গুলো নিয়ে বুধবার আমিসহ আমাদের তিন নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব।”
তিনি বলেন," আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা। আমরা যতদূর সম্ভব সেগুলোর তালিকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়েছি। আমাদেরও গাফিলতি আছে। আমরা সব তালিকা সঠিক সময়ে দিতে পারিনি।”
তার কথা,"সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখন ভালো। আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তাই আমাদের কেনো রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকবে না। ইসলামের জন্য আমাদের ১৩ দফা কর্মসূচি আছে সেটা নিয়ে কাজ করি। আমাদের আর কোনো দাবি দাওয়া নাই। সরকারেরও আমাদের কাছে আর কোনো দাবি দাওয়া নাই। আগামী নির্বাচন নয়, আশা করি কোরবানির ঈদের আগেই আর যারা আটক আছেন তারা মুক্তি পাবেন।”
২০২১ সালের মার্চের ঘটনার পর হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। পরে নতুন কমিটি করা হলেও বিলুপ্ত কমিটির বলতে গেলে কেউই নতুন কমিটিতে জায়গা পাননি। কিন্তু আটক হেফাজত নেতা-কর্মীদের প্রায় সবাই মুক্তি পাওয়ায় বিলুপ্ত কমিটির নেতারাও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তবে তারা মামলাগুলো থেকে যাওয়ায়া উদ্বিগ্ন। হেফাজতের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেন,"মামলাগুলো থেকে যাচ্ছে ; কিন্তু হেফাজত নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন। আশা করি মামলাগুলোও প্রত্যাহার হবে।”
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,"ওই সময়ে একটা সমস্যার কারণে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিলো। হেফাজত একটা দ্বীনি সংগঠন। এর বাইরে আসলে আমাদের কোনো কাজ নেই। থাকবেওনা। আশা করি এখন আমরা সবাই মিলে হেফাজতের কাজ করব।”
এইসব বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে গত ১৩ এপ্রিল তিনি চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলেন, "হেফাজতের পক্ষ থেকে আমাদেরকে কারাবন্দি নেতাদের একটি তালিকা দেয়া হয়েছে। তালিকার অনুযায়ী আমরা তাদের মুক্তির জন্য সুপারিশ করছি। অধিকাংশ নেতাকে এর মধ্যে মুক্তি দেয়া হয়েছে।”
তিনি আরো বলে, "ইসলাম বিস্তারে কাজ করছে হেফাজত। এ দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান। হেফাজতের কার্যকলাপ ইসলাম প্রচারে সহায়তা করছে, এজন্য আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাই।”