1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘হিন্দু পাকিস্তান' হওয়ার পথে ভারত?

৩১ জুলাই ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে ভারত উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ অনেকে মনে করেন ভারতের ‘বহুত্ববাদের' ওপর এই চাপিয়ে দেয়া ‘হিন্দুত্ববাদ' এক বড় আঘাত৷

https://p.dw.com/p/3N5BM
পাকিস্তানকে নিজেদের ঘোর শত্রু হিসেবে উপস্থাপন করে নির্বাচনী প্রচারণা জিতেছেন মোদি৷ছবি: DW/M. Krishnan

ইন্দোনেশিয়ার পর ভারতেই মুসলিম জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ দেশটিতে এখন প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি মুসলিমের বাস৷ পিউ রিসার্চ সেন্টারের করা এক গবেষণা দেখা গেছে ২০৬০ সালের মধ্যে ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৩০ কোটিরও বেশি৷ অর্থাৎ মাত্র দুই জেনারেশন পরেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বীর দেশ হবে ভারত৷

কিন্তু অন্য সব ধর্মের তুলনায় মুসলিমদের সংখ্যাবৃদ্ধির হার বেশি হলেও ভারতের সংখ্যালঘুদের মধ্যে এখন তারাই সবচেয়ে বেশি শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন৷ ২০১৪ সালে বিজেপির নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ভারতের মুসলিমরা একটু অস্বস্তির মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন৷ ২০০২ সালে গুজরাটে মুসলিমবিরোধী আন্দোলনে তার সম্পৃক্ততা এবং তার দলের কয়েক দশকের হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রচারণাই এর মূল কারণ

মোদি অবশ্য প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি ‘সব ভারতীয়র' প্রধানমন্ত্রী বলে মুসলিমদের আশ্বাস দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু পাঁচ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর অবস্থাটা আসলে কী দাঁড়িয়েছে?

মোদির প্রথম শাসনামলে মুসলিমবিরোধী সহিংসতা উগ্র রূপ নিয়েছিল, এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই৷ গরুর মাংস খাওয়ার অভিযোগে অন্তত ৪০টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ এই ঘটনাগুলোর বেশিরভাগেরই কোনো বিচারও হয়নি৷ ফলে সংখ্যালঘুদের ‘চাইলেই নির্যাতন করা যায়', এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে৷

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের মতো মৌলিক কিছু বিষয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কৌশলগতভাবে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে, যা গণমাধ্যমেও ঠিকমতো আসেনি৷ এই বৈষম্য সবসময়ই ছিল, কিন্তু বিজেপির অধীনে তা ভারতের মাটিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে৷ এর ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিমদের মধ্যে নিজেদের অবাঞ্ছিত মনে করার এক ধরনের প্রবণতা তৈরি হয়েছে৷ বিশেষ করে উত্তর ভারতে মুসলিমরা নিজেদের ভিটেমাটিতেই আর নিরাপদ বোধ করেন না৷

পাকিস্তানকে নিজেদের ঘোর শত্রু হিসেবে উপস্থাপন করে নির্বাচনী প্রচারণা জিতেছেন মোদি৷ কিন্তু অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, ধীরে ধীরে ভারতের সংবিধান থেকে দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর রেখে যাওয়া সেক্যুলারিজম মুছে ফেলে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই বিজেপির মূল লক্ষ্য৷

কয়েক শতকের সহাবস্থান হুমকিতে

তবে, ভারতে যেমন অসহিষ্ণুতা বেড়ে চলেছে, এর বিপরীত দিকে সহাবস্থানের চিত্রও একেবারে কম নয়৷ যেমন ভারতের রাজস্থানে আজমির শরিফে সুফি সাধক মইনুদ্দিন চিশতির দরগায় এখনও দেখা যায় নানা ধর্মের মানুষের ভিড়৷ শুধু মুসলিম না, উপমহাদেশের নানা স্থান থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও সেখানে নিয়মিতই আসেন নানা মানত নিয়ে৷ সবার জন্মস্থান ভারতে প্রচুর হিন্দু, শিখ এবং খ্রিস্টানরাও চিশতিকে একজন গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে শ্রদ্ধা করে থাকেন৷

ভারতে চলমান অসহিষ্ণুতার অনেকটাই ভুলে যাওয়া যায় আজমির শরিফে গেলে৷ প্রায় প্রতি বিকেলেই প্রার্থনাকারীরা কাওয়ালি গায়কদের চারপাশে ভিড় করে থাকেন৷ একদিকে ধুপের গন্ধ, অন্যদিকে রাতের আকাশ ভর্তি তারার মেলা৷ কাওয়ালি গায়কেরা নানা সুফি শিল্পীর লেখা গান সুর করে করে গেইতে থাকেন, এর সঙ্গে চলতে থাকে প্রার্থনা৷ নারী-পুরুষরা একসাথে বসেই যোগ দেন সে উপাসনায়৷ এর মধ্যে কে মুসলিম, কে নন, তা বুঝে ওঠা মুশকিল৷ মইনুদ্দিন চিশতির এই দরগাই ভারতীয় উপমহাদেশে কয়েক শতক ধরে চলে আসা ধর্মীয় সম্প্রীতির চিত্র৷

ভারত ও পাকিস্তানের বেশ কিছু সুফি দরগায় এই চিত্র এখনও দেখা যায়৷ দক্ষিণ এশিয়ায় এসে হিন্দু ধর্ম থেকে অনেক কিছুই নিয়েছে ইসলাম৷ এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক ধরনের নমনীয় ইসলামের৷ যেমন মইনুদ্দিন চিশতির শিক্ষাগুলোর অন্যতম হচ্ছে ‘সবার জন্য ভালোবাসা, কারো জন্য ঘৃণা নয়৷'

 Ajmer Sharif Dargah Schrein in Indien
ভারতের রাজস্থানে আজমির শরিফে সুফি সাধক মইনুদ্দিন চিশতির দরগায় এখনও দেখা যায় নানা ধর্মের মানুষের ভিড়ছবি: AFP/Getty Images/P. Singh

দরগার পেছনেই শহরের ব্যস্ত গলিতে চিশতি ফাউন্ডেশনের অবস্থান৷ ফাউন্ডেশনের করা কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম আন্তসংস্কৃতি ও আন্তধর্ম সংলাপের আয়োজন করা৷ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সায়েদ সালমান চিশতি বলেন, ‘‘আজমির একটি শান্তির জায়গা এবং ভারতের জন্য একটি আশা হয়ে টিকে রয়েছে৷''

সেখানেই এক সেমিনারে সম্প্রতি আজমিরের পাঁচ লাখেরও বেশি বাসিন্দা অংশ নেন৷ ইউনাইটেড রিলিজিয়নস ইনিশিয়েটিভ নেটওয়ার্কের আমন্ত্রণে এক মুসলিম শেখ, হিন্দু পুরোহিত, শিখ ধর্মীয় নেতা এবং আরো কয়েকজন ধর্মগুরু উপস্থিত হয়েছিলেন৷ প্রার্থনার পর ভারতে ধর্মীয় সম্প্রীতি টিকিয়ে রাখার নানা উপায় নিয়ে তারা আলোচনা করেন৷ নিজের বক্তব্য শেষ করে শিখ ধর্মগুরু বলেন, ‘‘ভারতের কাছ থেকে শিখতে পারে পুরো বিশ্ব৷''

এইসবই কেবল মুখের কথা বলে মনে হতে পারে৷ কিন্তু হিন্দুত্ববাদও যেমন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, বিপরীতে এমন সম্প্রীতির উদাহরণ ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে চলেছে৷ জনগণ, সুশীল সমাজসহ সবাই সচেতন না থাকলে যেকোনো মুহূর্তে ভারতের বহুত্ববাদ পড়তে পারে হুমকির মুখে৷

ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফে এক লেখায় প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক রামচন্দ্র গুহ বলেছেন, ভারতের সংবিধানে যে বহুত্ববাদের কথা বলা হয়েছে, তা এখনও সব আশঙ্কা সত্ত্বেও অটুট রয়েছে৷ কিন্তু তিনি একই সঙ্গে সতর্কও করে দিয়েছেন, ‘‘ভারত এখনও হিন্দু পাকিস্তানে পরিণত হয়নি৷ কিন্তু অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সেই পথে যাওয়ার সবচেয়ে বেশি আশঙ্কায় রয়েছে৷''

মারিয়ার ব্রেমার/এডিকে

© কানতারা.ডিই ২০১৯

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য