হিন্দি বলয় নয়, সব রাজ্যেই বিক্ষোভে কৃষকরা
২১ ডিসেম্বর ২০২০দিল্লির সীমানায় কৃষক বিক্ষোভ ২৭ দিনে পড়ল। শৈত্যপ্রবাহকে উপেক্ষা করে, রাস্তায় পড়ে থেকে, দিনের পর দিন তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের দাবি মানার ব্যাপারে সরকারের উপেক্ষা ও অনীহা জানার পরেও তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে আসেননি। তবে দিল্লির সীমানায় যাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাঁরা মূলত হিন্দি বলয়ের কৃষক। এসেছেন পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ থেকে। ওড়িশার মতো কিছু রাজ্য থেকে অল্প কিছু কৃষক এসেছেন। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, এটা কি শুধু হিন্দি বলয়ের কৃষকদের আন্দোলন?
বামপন্থী কৃষক নেতা হান্নান মোল্লা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এই ধারণা ভুল। দক্ষিণ ভারতের প্রতিটি রাজ্যে কৃষকরা লাগাতার আন্দোলন করছেন। কর্ণাটকে ১৪ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে। দক্ষিণের সব রাজ্যেই লাগাতার কালেক্টরেটের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। আজ সারা দেশের প্রায় এক লাখ জায়গায় শহিদ দিবস পালন করা হয়েছে। আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে ৪০ জন কৃষক মারা গেছেন বা আত্মহত্যা করেছেন। তাঁদের সম্মানে এই শহিদ দিবস।'' হান্নান মোল্লার দাবি, আন্দোলনকে এখন নীচের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে বোঝানো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গেও সব গ্রামে গিয়ে বোঝানোর কাজ চলছে।
এই কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত আছে প্রায় ৩৫টি সংগঠন। তার মধ্যে হিন্দি বলয়ের সংগঠন আছে, আবার দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে সক্রিয় সংগঠনও আছে। তা সত্ত্বেও দিল্লিতে যে শুধু হিন্দি বলয়ের রাজ্য থেকে কৃষকরা এসেছেন এবং গত ২৭ দিন ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তার কারণও আছে। গাজিপুর সীমান্তে মূলত উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড থেকে কৃষকরা এসেছেন। ডিডাব্লিউকে তাঁরা জানিয়েছেন, উত্তর প্রদেশে বিভিন্ন জায়গায় কৃষকদের আটকে দেয়া হচ্ছে। উত্তর প্রদেশ থেকে তো বটেই, উত্তরাখণ্ড ও রাজস্থান থেকে কৃষকদের আসতে দেয়া হচ্ছে না। যে কৃষকরা উত্তর প্রদেশ থেকে আসছেন, তাঁদের বড় অঙ্কের জরিমানার নোটিস দেয়া হচ্ছে। কেউ গাড়ি বা ট্রাক নিয়ে এলে তাদের চালান কাটা হচ্ছে। যত ভাবে সম্ভব কৃষকদের আটকাবার চেষ্টা করছে সরকার। আর দিল্লিতে কেবল আশপাশের রাজ্য থেকেই এসে দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ দেখানো সম্ভব।
স্বরাজ পার্টির নেতা দেবেন্দ্র যাদবও একটি কৃষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তিনি জানিয়েছেন, দেশের সব জায়গায় কৃষকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে এবং তাঁদের বিক্ষোভ আরো বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী আগামী শনিবার যখন মন কি বাত বলবেন, তখন কৃষকরা দেশজুড়ে থালাবাটি বাজাবেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর কথা তাঁরা শুনতে চান না। প্রবীণ সংবাদিক ও কৃষি বিশেষজ্ঞ হরবীর সিং ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বহু রাজ্যে কৃষকরা আন্দোলন করছেন। অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্ণাটকে প্রতিদিন কৃষক বিক্ষোভ হচ্ছে। দূরত্বের জন্য তাঁরা দিল্লিতে আসেননি ঠিকই, কিন্তু নিজের নিজের রাজ্যে বিক্ষোভে সামিল। সব কৃষকের পক্ষে দিল্লি এসে আন্দোলন করা সম্ভব নয়।''
দিল্লি না আসার আরো কারণ আছে। আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''অনেক রাজ্য থেকেই কৃষকরা দিল্লিতে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কৃষক নেতারা তাঁদের মানা করে দিচ্ছেন। যেমন মধ্যপ্রদেশ। দিল্লির সীমানায় বিক্ষোভে মধ্যপ্রদেশ থেকে অল্প কৃষক এসেছেন। কিন্তু বাকিদের মানা করা হচ্ছে, কারণ, ট্রেনে বিনা টিকিটে চড়লেই এখন ধরে জেলে পুরে দেয়া হচ্ছে। এরা গরিব কৃষক। দিল্লিতে আসার খরচ আছে। এখানে খাওয়ার খরচ আছে। শরীর খারাপ হলে দ্রুত নিজের বাড়িতে ফিরতে পারবেন না। তার উপর আন্দোলনে যোগ দিলে সরকারের কোপে পড়ার সম্ভাবনা আছে। সে সবও তাঁদের খেয়াল রাখতে হচ্ছে।''
হান্নান মোল্লার দাবি, ফসল কাটার কাজ এখন শেষ হয়েছে বা হচ্ছে। তাই প্রতিদিনই বেশি করে কৃষক আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন। পাঞ্জাব থেকে ১৫ হাজার কৃষক গতকাল দিল্লিতে এসেছেন। মহারাষ্ট্র থেকে চার হাজার কৃষক আসছেন। যাঁরা পারছেন, আসছেন। বাকিরা নিজের নিজের রাজ্যে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। বিহারে আগামী সপ্তাহে বিধানসভা অভিযান করবেন কৃষকরা। ঝাড়খণ্ডে তাঁরা বিধানসভা অভিযান করে ফেলেছেন। অসমে তাঁরা আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করছেন। তাই এটা সর্বভারতীয় আন্দোলন, শুধু হিন্দি বলয়ের নয়।