1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হিজাব নিষিদ্ধ করায় মানবাধিকার সংগঠনের তীব্র সমালোচনা

২৫ মার্চ ২০০৯

নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকারসংগঠন হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ জার্মানির ৮টি রাজ্যে স্কুল শিক্ষিকাদের মাথায় হিজাব পরা নিষিদ্ধ করার তীব্র সমালোচনা করেছে৷ তারা জানিয়েছে, এই নিয়মের ফলে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন মুসলমান নারীরা৷

https://p.dw.com/p/HJB3
ছবি: dpa

সারা জার্মানিতে ১৬টি রাজ্যের মধ্যে ৮টি রাজ্যেই আইন করে স্কুল শিক্ষিকাদের জন্যহিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ সরকারী স্কুলগুলোতে কোন অবস্থাতেই কোন শিক্ষিকা হিজাব পরে ক্লাস নিতে পারবেন না ঐ সব রাজ্যে৷

৯০ দশকের শেষের দিকে হঠাৎ করেই মাথায় হিজাব পরা নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়ে যায় জার্মানিতে৷ সে সময় বাডেন ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের আফগান বংশোদ্ভূত স্কুল শিক্ষিকা – ফারিশতা লুদিন বেশ জোর গলায় বলেছিলেন, তিনি মাথায় হিজাব পরে স্কুলে পড়াবেন৷ স্কুল কর্তৃপক্ষ তাতে বাধা দিয়েছিল৷ কিন্তু তিনি তা মেনে নেননি৷ তিনি আইনের আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং কার্লসরুয়ের সাংবিধানিক আদালতে মামলা করেন৷ ২০০৩ সালে আদালত রায় দেয়, কোন আইনী নিষেধাজ্ঞা ছাড়া মুসলমান শিক্ষিকাদের মাথায় হিজাব পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যাবে না৷ তবে এর মধ্যে দিয়েই পরিষ্কার বুঝিয়ে দেয়া হয় যে, আইন প্রণয়ন করে মাথায় হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা যেতে পারে৷ ফলশ্রুতিতে পরবর্তী ৫ বছরে ৮টি রাজ্যে আইন করে স্কুল শিক্ষিকাদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়৷ ৮টি রাজ্যের মধ্যে বাডেন ভ্যুর্টেমব্যার্গ, বাভারিয়া, বার্লিন, হেসে, লোয়ার স্যাক্সনি, নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া এবং জারল্যান্ডে আইন করে স্কুলে কর্মরত অবস্থায় মাথায় হিজাব পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়৷

২৬ ফেব্রুয়ারি বার্লিনে প্রায় ৭৩ পাতার এক প্রতিবেদন পেশ করে হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ৷ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘নিরপেক্ষতার নামে বৈষম্য'৷ ২০০৮ সালে বিভিন্ন সমীক্ষা চালিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়৷ বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে অন্তত ৭২ জনের সঙ্গে কথা বলা হয়, সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়৷ এদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ছিলেন৷ এদের মধ্যে ছিসেন প্রায় ৩৪ জন মুসলমান নারী যাঁরা সরাসরি এই নিষেধাজ্ঞার ভুক্তভোগী৷

হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ-এর ইউরোপীয় প্রধান আইনজীবী হালেহ চাহরোখ বলেন, অনেকেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন৷ তাঁরা প্রসবকালীন ছুটিতে গিয়ে আর কর্মস্থলে যোগদান করেননি৷ পেশার কারণে ধর্মকে এড়িয়ে যেতে চান নি তাঁরা৷এঁদের কেউ কেউ চলে গেছেন অন্যান্য রাজ্যে, যেখানে এই বাধা নেই৷ কেউ কেউ আবার এই দেশ ছেড়েই চলে গেছেন৷ তবে অনেক মহিলা চাকুরী টিকিয়ে রাখতে হিজাব পরা বন্ধ করেছেন৷ তবে তাঁদের হিজাব না পরা শুধুমাত্র কর্মস্থলেই সীমাবদ্ধ৷

ভুক্তভোগী অনেক নারীই জানিয়েছেন, এই আইনের পর তাঁরা নিজেদের পরবাসী মনে করছেন - যেন জার্মানি আর তাঁদের দেশ নয়৷ অথচ অনেকের জন্ম এখানেই অথবা জন্মের পরপরই পরিবারের সঙ্গে চলে এসেছেন জার্মানিতে এবং তার পর থেকে এখানেই বসবাস করছেন৷ হঠাৎ করে তাঁরা নিজেদের বিচ্ছিন্ন বলে মনে করছেন৷

হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ- এর প্রতিবেদনে জানানো হয় - যাঁরা মাথায় হিজাব পরছেন, তাঁরা অনেক ঝুঁকি নিচ্ছেন৷ অনেকেই পড়াশোনায় বেশ ভালো করলেও কোন চাকুরী তারা পাচ্ছেন না, কারণ তাঁরা কোন অবস্থাতেই ধর্মকে উপেক্ষা করে পেশাকে অগ্রাধিকার দিতে রাজি নন৷ হয় চাকুরী – নয়তো মাথায় হিজাব দেয়া – যে কোন একটিকে তাঁরা ধরে রাখতে চান৷ অনেকেই চাকুরীতে যোগদান করতে পারছেন না, কারণ হিজাব পরে কোন অবস্থাতেই স্কুলের কর্মস্থলে প্রবেশ করা যাবে না৷

হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ জার্মানির সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে তাদের এই আইনী নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করতে অনুরোধ জানিয়েছে৷

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এই রিপোর্ট নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে৷ নারী সংগঠন ‘তের দ্য ফাম' দাবি করেছে, কিছু রাজ্যে স্কুল শিক্ষিকাদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে যে আইন পাশ করা হয়েছে তা যেন শিথিল করা না হয়৷ এই সংগঠন মনে করে, যে-সব মুসলিম মেয়েরা এই নিষেধাজ্ঞায় খুশি অথবা যাদের হিজাব পরতে বাধ্য করা হয় তাদের কথা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে৷

প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারুক