আতিকুল ও তাবিথের পাল্টাপাল্টি
২২ জানুয়ারি ২০২০তাবিথ অভিযোগ করেছেন আতিকুলের লোকজনই মঙ্গলবারের হামলায় জড়িত ছিল৷ জবাবে আতিকুল তার এই মন্তব্যকে ছেলেখেলা হিসেবে অভিহিত করেছেন৷ তিনি বলেন, তাবিথের পরিবার দুর্নীতিগ্রস্ত৷ প্যারাডাইস পেপার্সে তাদের নাম এসেছে৷ এর জবাবে তাবিথ বলেন, মশার ওষুধ নিয়ে আতিকুলের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ দুদক খতিয়ে দেখছে৷
পরিবার থেকে গুন্ডামি শেখায়নি: আতিকুল ইসলাম
হামলা নিয়ে তাবিথ আউয়ালের অভিযোগের জবাবে আতিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটি একটি গুরত্বপূর্ণ নির্বাচন৷ সে (তাবিথ) কিন্তু কয়েকবারই বলেছে এটা আমি করাচ্ছি বা আমি এর নেপথ্যে আছি৷ আমি তাকে বলতে চাই, আমার বাবা ছিলেন একজন রিটায়ার্ড এসপি৷ আমার বড় ভাই ১৯৫৮ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন৷ আমার মেজ ভাই বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন৷ আমার আরেক ভাই ছিলেন লে. জেনারেল মাঈনুল ইসলাম৷ আমাদের পরিবারে সবাই কিন্তু যার যার ক্ষেত্রে কাজ করেছেন এবং স্বীকৃতিও পেয়েছেন৷ আমি বিজিএমইএর সাবেক প্রেসিডেন্ট৷ আমাদের রাজধানীকে বিভাবে আরো উন্নত করা যায় সেই ব্যাপারে আমি তাকে আরো মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেব৷ তার যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এই বিষয় নিয়ে আমার সাথে পরামর্শ করতে পারে৷
সে যদি এসব বলতে থাকে তাহলে এটাকে আমি তার ছেলেখেলা বলে আমি মনে করি৷ আরো গুরুত্ব দিয়ে তার কাজ করা উচিত বলে আমার মনে হয়৷ এখানে ৩০-৩২ লাখ ভোটার৷ সিটি কর্পোরেশনে এক থেকে দেড় কোটি লোক বাস করে৷ তাই এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ছেলেখেলা নয়৷ এটা অনেক গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার৷''
আতিকুল আরো বলেন, ‘‘উনি (তাবিথ) কেন বলছেন সেটা উনিই বলতে পারবেন৷ উনি বলছেন আমি এর পেছনে আছি , নেপথ্যে আছি৷ আমি এজন্যই আমার ফ্যামিলির পরিচয় দিলাম৷ আমার ফ্যামিলিতে একজন চিফ জাস্টিস হবেন৷ উনি কোনোদিন গুন্ডামি করবেন না৷ লে. জেনারেল মাঈনুল ইসলাম উনি বিডিআরকে রিফর্ম করলেন৷ উনি কোনোদিন গুন্ডামি করবেন না৷ আমি যে পরিবার থেকে এসেছি আমার বাবা-মা কোনোদিন শেখায়নি আমাদের গুন্ডামি৷ এগুলো আমাদের মাথার মধ্যে নাই৷ আমাদের চিন্তায় নাই৷ এগুলোকে আমরা ধারণ করি না, ধারণ করতেও চাই না৷''
গণজোয়ার দেথে আতিকুল মানসিক অশান্তিতে আছেন তাবিথের এই বক্তব্যের জবাবে আতিকুল বলেন,‘‘আমিতো বলি উনি আমাদের গণজোয়ার দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন৷ তাই তিনি এসব কথা বলছেন৷ এগুলো অনেক কথা বলা যায়৷ এগুলো না বলে উনি মানসিকভাবে কি কি করতে চাচ্ছেন নগরবাসীর জন্য, সেগুলো শুনলে নগরবাসী খুশি হবেন৷ বরং উনি বলুক দুর্নীতির বিরুদ্ধে উনি কী করবেন৷ ওনার পরিবারের মধ্যেইতো দুর্নীতিগ্রস্ত৷ প্যারাডাইস পোপার্সে অনেক কিছুই আছে৷ আমি এগুলো কিছুই বলতে চাই না৷ আমি শুধু বলতে চাই আসুন৷ আমরা দু'জন মিলে ইলেকশন করি৷ কাদা ছোড়াছুড়ি না করে বরং সুন্দর মডেলে একটি ইলেকশন হোক আমাদের জন্য৷''
আতিকুল বলেন, গাবতলীর ঘটনা বিএনপি ইসিকে বলতে পারে৷ ‘‘এটা ইসি দেখুক৷ তদন্ত করে বের করুক৷ আমি গতকালই বলেছি এটা ওনাদের অভ্যন্তরীন কোন্দলের জন্য হতে পারে এবং যারা দোষী তাদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনার জন্য অনুরোধ করছি৷''
আমি আইনগত প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছি: তাবিথ আউয়াল
মঙ্গলবারের হামলার বর্ণনা দিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘‘আমার মাথায় এবং বুকে বারবার আঘাত করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ হামলাটি ছিলো পুরোপুরি পরিকল্পিত৷ প্রথমবার হামলার পর আমি যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলাম তখন আবার হামলার জন্য আসে৷ দুই দুইবার হামলার জন্য আসে না প্ল্যানিং ছাড়া৷ দায়িত্বশীল ব্যক্তির উচিত দায়িত্বশীল কথা বলা৷ যেভাবেই হোক আমি আঘাত পেয়েছি৷ আমিতো ওনার প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রতিপক্ষ৷ অতটুকু হিউম্যানিটি থাকা উচিত৷ এইসব বিষয়কে দল, মত ও রাজনীতির উপরে রাখা উচিত৷ উনি প্রথমবার হয়তো ইলেকশন করছেন, এটা আমি বুঝি৷ ওনার হয়তো ইম্যাচুউরিটি আছে৷ ওনার মন্তব্যকে আমি কোনোভাবেই দেখছি না৷ আশা করছি আগামীতে উনি ওনার দলকে রিকোয়েস্ট করবেন যাতে এই ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকে৷ ওনার পক্ষে যদি গণজোয়ার এসে থাকে সেটা ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ করবেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘ওনাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন আমার অনেক কাছে৷ ওনার উপস্থিতি ওখানে কেন? যদি ইন্টারনাল কিছু হয় উনি কি ওখানে এসে তাকিয়ে দেখবে, না আমি ওনার সামনে ইন্টারনাল ঝগড়া করব? ওনার উপস্থিতিই হলো মেইন ইস্যু৷ সে ফিজিক্যালি (শারীরিকভাবে) আমাকে হার্ম করেছে৷ এখন আমি আইনগত প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছি৷ আশা করি আইনগভাবে একটা জাস্টিস (বিচার) পাব৷
তাবিথ আউয়াল জানান, তিনি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন৷ তারা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত করবেন৷ ‘‘আমি পুলিশের কাছেও আমার ক্রিমিন্যাল মামলা করতে গিয়েছিলাম গতকাল৷ কিন্তু দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল বলেছেন উচ্চ মহল থেকে প্রভাবের কারণে তিনি অভিযোগ নেননি৷ আমি আবারো অভিযোগ করার চেষ্টা করবো৷''
তিনি দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘একটা ইলেকশন করতে গেলে অনেকরকম অপপ্রচার হয়৷ এটা কোনো সমস্যা নয়৷ আমার বিরুদ্ধে এরকম অনেক কিছু দুদক বা সংশ্লিষ্টরা তদন্ত করছে৷ ওনাকে প্রশ্ন করা উচিত মেয়র অবস্থায় ওনার বিরুদ্ধে মশার ওষুধের দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে৷ এবং দুদক তা খতিয়ে দেখছে৷ এরকম কালো দাগ নিয়ে তিনি অন্যের ব্যাপারে কিভাবে কথা বলতে পারেন৷''