সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ
৩০ নভেম্বর ২০১৩রবিবার থেকে হরতাল বা অবরোধ আসতে পারে - এমন ধারণা আগে থেকেই ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে৷ তাই ছুটির দু'দিন শুক্রবার ও শনিবার জরুরী কাজগুলো সেরে ফেলার চেষ্টাও ছিল তাদের৷ এ কারণে অনেকে রাজধানীর বাইরে চলে যান৷ হঠাৎ করে শনিবার থেকে অবরোধ শুরু হওয়ায় তারা আর রাজধানীতে ফিরতে পারেননি৷
সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বসবাসরত ব্যাংক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, তাঁর মেয়ের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর শেষ পরীক্ষা ছিল শনিবার৷ রাতে যখন তিনি শুনলেন শনিবার ভোর ছয়টা থেকে অবরোধ তখন তিনি বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন পরীক্ষা হবে কি-না৷ কিন্তু কোনভাবেই নিশ্চিত হতে না পেরে সকালেই অবরোধের মধ্যে মেয়েকে নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হন৷ স্কুলে গিয়ে জানতে পারেন পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে৷
রফিকুল ইসলামের মতো অনেক অভিভাবকই এভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এমনিতেই শুক্রবার ছিল ছুটির দিন৷ তারপর রাতে অবরোধের ঘোষণা আসায় তাদের পক্ষে রাতের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেয়ার সুযোগ ছিল না৷ সকালেই মন্ত্রীর নির্দেশে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত পৌঁছে দেয়া হয়৷
অনেক চাকরিজীবীকেও পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে৷ শনিবার বিকেলে কারওয়ান বাজারে কথা হয় শেখ মো. নূর আলীর সঙ্গে৷ তিনি একটি কর্পোরেট হাউজে চাকরি করেন৷ পহেলা ডিসেম্বর পুরনো চাকরি বাদ দিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেয়ার কথা৷ শুক্রবার ও শনিবার দু'দিন ছুটি থাকায় নতুন কর্মস্থলে যোগ দেয়ার আগে গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় গিয়েছিলেন৷ শনিবার ঢাকায় ফিরে রবিবার যাওয়ার কথা ছিল নতুন কর্মস্থলে৷ কিন্তু হঠাত্ অবরোধের ঘোষণায় দারুন বিপাকে পড়েন তিনি৷ এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই শনিবার ভোরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন৷ প্রথমে ভ্যানে, এরপর নছিমনে, তারপর টেম্পু, বাস, রিক্সা ও সবশেষ সিএনজিতে করে তাঁকে ঢাকায় পৌঁছাতে হয়েছে৷ এভাবে ঢাকার বাইরে যাওয়া চাকরিজীবীরাও কঠিন দূর্ভোগে পড়েছেন৷
রিজভী গ্রেপ্তার
এদিকে অবরোধের ঘোষণা দেয়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যেই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সেদলের যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ ভোর রাত ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে দলীয় কার্যালয় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়৷ বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘রিজভীকে আটকের সময় নয়া পল্টনের কার্যালয় তছনছ করা হয়েছে৷ মই ও রশি বেয়ে বেয়ে দোতলার দরজা ভেঙে ঢুকে রিজভীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ৷ তাকে প্যান্টও পরতে দেয়া হয়নি, লুঙ্গি পরা অবস্থায় তাকে মাইক্রোবাসে তোলা হয়৷''
রিজভীর সঙ্গে কার্যালয়ে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদকেও আটক করে পুলিশ৷ তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি কার্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার আটটি কক্ষের আসবাবপত্র ও দরজা ভাঙ্গা হয়েছে৷ এর মধ্যে দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কক্ষও রয়েছে৷ পুলিশ দু'টি কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নগদ অর্থ, রিজভীর ল্যাপটপ ও কয়েকটি মোবাইল সেট নিয়ে গেছে৷
শনিবার বিকেলেই রুহুল কবির রিজভীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত৷ তাঁকে শাহবাগে বাসে আগুন দেয়ার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বিকালে ঢাকার আদালতে হাজির করে পুলিশ৷ এই মামলায় রিজভীকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ৷ আদালত ৪ ডিসেম্বর শুনানির দিন ঠিক করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন৷
গণতন্ত্রের ওপর ‘পদাঘাত'
বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানকে গণতন্ত্রের ওপর ‘পদাঘাত' বলে মন্তব্য করেছেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন৷ শনিবার দুপুরে নয়া পল্টনে প্রধান বিরোধী দলের কার্যালয় পরিদর্শনে যায় পেশাজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল৷ বিএনপি কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখে খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আজ (শনিবার) এখানে এসে গণতন্ত্রের নামে যা দেখলাম, তা বর্বর সমাজেও সম্ভব নয়৷ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার বসার চেয়ার ও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বসার চেয়ার যেভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে, তাতে গণতন্ত্রের প্রতি পদাঘাত করা হয়েছে৷''
উল্লেখ্য, অবরোধ চলাকালে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে ইসরাইল হোসেন (২৬) নামে এক শিবির কর্মী নিহত হয়েছেন৷ এছাড়া বগুড়ার মোকামতলায় পিকেটারদের ধাওয়ার কারণে একটি বাস দ্রুত চলে যাওয়ার সময় বাসের ছাদে থাকা এক যাত্রী পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন৷