1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সড়কে দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড

সমীর কুমার দে ঢাকা
২১ এপ্রিল ২০১৮

ঢাকার রাজপথে প্রতিদিনই কেউ না কেউ হাত বা পা হারাচ্ছেন৷ জীবন দিতে হচ্ছে অনেককে৷ সর্বশেষ শুক্রবার বনানীতে বাসের চাপায় রোজিনা আক্তার নামে এক তরুনীকে পা হারাতে হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2wRSp
Bangladesh Bus Unfall
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/GettyImages

এর মধ্যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্রীও পা হারিয়েছেন৷ তার আগে দুই বাসের মাঝখানে পড়ে হাত হারিয়েছিলেন রাজীব হোসেন৷ পরে জীবনটাই হারান তিনি৷

সড়কে এসব ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলতে নারাজ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি৷ তারা বলছে, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড৷ তাদের হিসেবে প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে জীবন হারাচ্ছেন ৬৪ জন৷ আর ৮৭ ভাগ বাস-মিনিবাস কোন আইন মানছে না৷

‘সড়কে তো কোন আইন নেই’

সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সড়কে তো কোন আইন নেই৷ যে যার মতো চলছে৷ এখানে বিআরটিএ বা পুলিশ কেউ তাদের অরাজকতা দেখছে না৷ কেউ তাদের বাধ্য করছে না, আইন মানতে৷ ফলে দিন দিন তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে৷ আসলে চালকদের আইন মানতে বাধ্য করতে হবে৷''

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ‘সড়কে নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা, উত্তরণের উপায়' শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শনিবার৷ জাতীয় প্রেসকাবের ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক বলেন, ‘‘সড়ক খাতে অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতি মুহূর্তে জনগণকে জীবন দিতে হচ্ছে৷ নারী, প্রতিবন্ধীদের যাতায়াতের জন্য পরিবহনে কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি৷ কিছু প্রভাবশালীর কারণে এ খাতে শৃঙ্খলা থাকছে না৷ নৈরাজ্য কমাতে সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে৷ এই নৈরাজ্য বন্ধে জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে৷''

এই পরিস্থিতিতে নিজের অসহায়ত্বের কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷ শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি নিজেও অসহায়, অসহায়ত্ব আমার মধ্যেও কাজ করে৷ আমি কি মানুষ নই? আমি মন্ত্রী, আমি কি দায় এড়াতে পারব?''

‘বাধ্য হয়েই অদক্ষ দালকদের হাতে গাড়ি তুলে দিচ্ছি’

আরেক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এসব বিষয় নিয়ে কার সঙ্গে আলাপ করব? আসলে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে৷''

চালকদের কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা সত্য, দক্ষ চালকের অভাব আছে৷ আমরা বাধ্য হয়েই অদক্ষ দালকদের হাতে গাড়ি তুলে দিচ্ছি৷ এই চালকদের মধ্যে লাইসেন্স নেয়ার প্রবণতাও কম৷ বিআরটিএর সমস্যা থাকতে পারে, আমরা আলোচনা করে এটার সমাধান করার চেষ্টা করছি৷''

অদক্ষ চালকদের হাতে কেন গাড়ি দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘অদক্ষদের হাতে গাড়ি দেয়ার পরও চালকের অভাবে অনেক গাড়ি বসে থাকে৷ দেশে ১৫ থেকে ২০ লাখ চালকের সংকট রয়েছে৷ এই জায়গাটাতো পূরণ হচ্ছে না৷ আমরা বিভিন্নভাবে চালকদের সচেতন করার চেষ্টা করছি৷ এখন আমরা সবাই মিলে মাঠে নেমেছি৷''

এর আগে ২০১৫ সালের জুনে কারওয়ানবাজারের স্টার কাবাবের সামনে দুই বাসের পাল্লায় একটি বাস উল্টে গিয়ে প্রাণ হারান এক যুবক৷ ২০১৪ সালে মারা যান সাংবাদিক জগলুল আহম্মেদ চৌধুরী৷ তাঁকে কারওয়ানবাজারে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়৷

‘এনফোর্সমেন্টের বাইরে সচেতনতার কাজও করছি’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসে ঢাকায় ৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গবেষণায় এসেছে, যানজটের কারণে ঢাকায় এখন যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার৷ গত বছর বিশ্বব্যাংকের হিসাবে তা ছিল ঘণ্টায় সাত কিলোমিটার৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কম গতির শহরে এত প্রাণহানির পেছনে দায়ী চালকের বেপরোয়া মনোভাব৷

রাস্তায় চালকদের এই বেপরোয়া আচরণ দেখার দায়িত্ব ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের৷ ট্রাফিক বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা প্রতিনিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছি৷ আমরা এনফোর্সমেন্টের বাইরে সচেতনতার কাজও করছি৷ আসলে এত অল্প সড়কে এত বেশী গাড়ি- কাকে কি বলব৷ হ্যাঁ- চালকদের দোষ তো আছেই৷ রাস্তার মধ্যে দেখবেন মানুষ দৌঁড়ে পার হচ্ছে৷ সব কিছু মিলিয়ে আমরা বিআরটিএ ও পরিবহন মালিকদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছি৷ 

এই অব্যবস্থাপনা রোধ করার উপায় কী? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷