সড়কে দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড
২১ এপ্রিল ২০১৮এর মধ্যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্রীও পা হারিয়েছেন৷ তার আগে দুই বাসের মাঝখানে পড়ে হাত হারিয়েছিলেন রাজীব হোসেন৷ পরে জীবনটাই হারান তিনি৷
সড়কে এসব ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলতে নারাজ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি৷ তারা বলছে, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড৷ তাদের হিসেবে প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে জীবন হারাচ্ছেন ৬৪ জন৷ আর ৮৭ ভাগ বাস-মিনিবাস কোন আইন মানছে না৷
সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সড়কে তো কোন আইন নেই৷ যে যার মতো চলছে৷ এখানে বিআরটিএ বা পুলিশ কেউ তাদের অরাজকতা দেখছে না৷ কেউ তাদের বাধ্য করছে না, আইন মানতে৷ ফলে দিন দিন তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে৷ আসলে চালকদের আইন মানতে বাধ্য করতে হবে৷''
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ‘সড়কে নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা, উত্তরণের উপায়' শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শনিবার৷ জাতীয় প্রেসকাবের ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক বলেন, ‘‘সড়ক খাতে অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতি মুহূর্তে জনগণকে জীবন দিতে হচ্ছে৷ নারী, প্রতিবন্ধীদের যাতায়াতের জন্য পরিবহনে কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি৷ কিছু প্রভাবশালীর কারণে এ খাতে শৃঙ্খলা থাকছে না৷ নৈরাজ্য কমাতে সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে৷ এই নৈরাজ্য বন্ধে জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে৷''
এই পরিস্থিতিতে নিজের অসহায়ত্বের কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷ শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি নিজেও অসহায়, অসহায়ত্ব আমার মধ্যেও কাজ করে৷ আমি কি মানুষ নই? আমি মন্ত্রী, আমি কি দায় এড়াতে পারব?''
আরেক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এসব বিষয় নিয়ে কার সঙ্গে আলাপ করব? আসলে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে৷''
চালকদের কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা সত্য, দক্ষ চালকের অভাব আছে৷ আমরা বাধ্য হয়েই অদক্ষ দালকদের হাতে গাড়ি তুলে দিচ্ছি৷ এই চালকদের মধ্যে লাইসেন্স নেয়ার প্রবণতাও কম৷ বিআরটিএর সমস্যা থাকতে পারে, আমরা আলোচনা করে এটার সমাধান করার চেষ্টা করছি৷''
অদক্ষ চালকদের হাতে কেন গাড়ি দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘অদক্ষদের হাতে গাড়ি দেয়ার পরও চালকের অভাবে অনেক গাড়ি বসে থাকে৷ দেশে ১৫ থেকে ২০ লাখ চালকের সংকট রয়েছে৷ এই জায়গাটাতো পূরণ হচ্ছে না৷ আমরা বিভিন্নভাবে চালকদের সচেতন করার চেষ্টা করছি৷ এখন আমরা সবাই মিলে মাঠে নেমেছি৷''
এর আগে ২০১৫ সালের জুনে কারওয়ানবাজারের স্টার কাবাবের সামনে দুই বাসের পাল্লায় একটি বাস উল্টে গিয়ে প্রাণ হারান এক যুবক৷ ২০১৪ সালে মারা যান সাংবাদিক জগলুল আহম্মেদ চৌধুরী৷ তাঁকে কারওয়ানবাজারে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়৷
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসে ঢাকায় ৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গবেষণায় এসেছে, যানজটের কারণে ঢাকায় এখন যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার৷ গত বছর বিশ্বব্যাংকের হিসাবে তা ছিল ঘণ্টায় সাত কিলোমিটার৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কম গতির শহরে এত প্রাণহানির পেছনে দায়ী চালকের বেপরোয়া মনোভাব৷
রাস্তায় চালকদের এই বেপরোয়া আচরণ দেখার দায়িত্ব ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের৷ ট্রাফিক বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা প্রতিনিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছি৷ আমরা এনফোর্সমেন্টের বাইরে সচেতনতার কাজও করছি৷ আসলে এত অল্প সড়কে এত বেশী গাড়ি- কাকে কি বলব৷ হ্যাঁ- চালকদের দোষ তো আছেই৷ রাস্তার মধ্যে দেখবেন মানুষ দৌঁড়ে পার হচ্ছে৷ সব কিছু মিলিয়ে আমরা বিআরটিএ ও পরিবহন মালিকদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছি৷
এই অব্যবস্থাপনা রোধ করার উপায় কী? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷