রাশিয়ার অবস্থান ক্রমশই ‘উদ্ভট' হচ্ছে
২০ মার্চ ২০১৮ডয়চে ভেলে: মিস্টার জনসন, ক'দিন আগে আপনি বলেছিলেন যে, খুব সম্ভবত প্রেসিডেন্ট পুটিন স্বয়ং সাবেক ডাবল এজেন্ট সের্গেই স্ক্রিপালের উপর স্নায়ুর বিষ প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ এই মনোভাব সমর্থনের জন্য আপনার বা ব্রিটিশ সংসদের কাছে কি কোনো প্রমাণ আছে?
বরিস জনসন: প্রথমেই বলা দরকার যে, আমাদের মতে, রুশ জনগণ বা রাশিয়া এই আক্রমণের জন্য দায়ী নয়৷ রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের কোনো বিবাদ নেই৷ ক্রেমলিন ও রুশ রাষ্ট্র বর্তমানে যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই নিয়েই সমস্যা৷ আমি যা বলেছিলাম, তার কারণ ছিল এই যে, যদি কী পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা দেখেন, তাহলে দেখবেন যে, সেটা ছিল নভিচক গোত্রীয় একটি রাসায়নিক৷ আমাদের পোর্টন ডাউনের বিজ্ঞানীরাই তা বলেছেন৷ আরো ভাবতে হবে যে, সের্গেই স্ক্রিপালকে হত্যার উপযুক্ত লক্ষ্য বলে শনাক্ত করা হয়েছে এবং ভ্লাদিমির পুটিন স্বয়ং বলেছেন যে, বিশ্বাসঘাতকদের – অর্থাৎ মিস্টার স্ক্রিপালের মতে দলত্যাগীদের বিষ দেওয়া উচিত৷ কাজেই এটা শুধুমাত্র একটি রুশ স্নায়ুর বিষ হতে পারে৷
পুটিন নিজে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন তা প্রমাণ করার মতো কোনো নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে আপনার কাছে?
উনি নিজেই গোটা প্রক্রিয়াটার দায়িত্বে – ব্রিটেনে আমরা যেরকম বলে থাকি৷ কেউ না কেউ দায়ী এবং যুক্তরাজ্যে আমাদের মতে সাক্ষ্য-প্রমাণ ও আক্রমণের জন্য দায়িত্ব রুশ রাষ্ট্রের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করছে, আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কোর ক্ষেত্রে যেমন ঘটেছিল৷ আপনার হয়তো মনে আছে যে, অবশেষে পোলোনিয়ামের সূত্র খুব স্পষ্টভাবে রুশ রাষ্ট্রের দিকে নির্দেশ করছিল৷ শেষমেষ মিস্টার পুটিনের উপর ভার, কাজেই তিনি দায়িত্ব ও শাস্তিযোগ্যতা এড়াতে পারেন না৷
আপনি ,অর্থাৎ ব্রিটিশ সরকার চলতি তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা না করে এই বিবৃতি দিলেন কেন?
কেননা পুটিনের রাশিয়ার সঙ্গে এ ধরনের সমস্যা থাকলে কি ঘটে, সে বিষয়ে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে৷ বারো বছর আগে লন্ডনে আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কোর হত্যাকাণ্ড ঘটে৷ তখন সেটা একটা চমকপ্রদ ঘটনা ছিল৷ যুক্তরাজ্য বিপুল সাবধানতা ও ধীরতার সঙ্গে অগ্রসর হয় ও আমরা মিস্টার কোভতুন ও মিস্টার লুগোভয় – যারা দায়ী বলে বিশেষভাবে সন্দেহ করা হচ্ছিল – (এই দুজনের) বহিষ্কারের জন্য রুশ বিচার প্রণালীর সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই৷ অবশেষে আমরা যা পাই, তা হলো, আমাদের বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার আমন্ত্রণের প্রতি এক ব্যঙ্গাত্মক প্রত্যাখ্যান৷ কাজেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব দরকারি বলে মনে করি যে, ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যে ধরনের স্নায়ুর বিষ ব্যবহার করা হয়নি, তা যদি বেপরোয়াভেবে স্যালিসবেরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তবে তার কূটনৈতিক ফলশ্রুতি সইতে হবে৷
আপনি বলতে চাইুছেন, নভিচক স্নায়ুর বিষ রাশিয়া থেকে এসেছে৷ এত তাড়াতাড়ি তা বের করতে পারলেন কী করে? ব্রিটেনের কাছে কি নভিচকের নমুনা আছে?
আপনাকে স্পষ্ট করে বলছি... আমি যখন তার সাক্ষ্য-প্রমাণ দেখি, যেমন পোর্টন ডাউনের কর্মীরা, পরীক্ষাগার...
কাজেই তাদের কাছে নভিচকের নমুনা আছে...
হ্যাঁ, আছে৷ আর তারা সন্দেহাতীতভাবে জানিয়েছে৷ আমি নিজে (সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীকে) জিজ্ঞাসা করেছি; আমি বলেছি, ‘‘আপনি নিশ্চিত তো?'' তিনি বলেছেন যে, সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই৷ কাজেই আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি, তা করা ছাড়া আমাদের খুব কম বিকল্প ছিল৷ তবে এবারকার পরিস্থিতি আর ১২ বছর আগে আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কোর ঘটনার সঙ্গে ফারাকটা হলো এই যে, এবার আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজ অনেক বেশি সহানুভূতিশীল, রাশিয়া বিগত কয়েক বছরে যে ধরনের আচরণ করছে, সে বিষয়ে অনেক বেশি অবহিত৷ ব্রাসেলসের আলোচনাচক্রে যখন বাকি সব ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি, তখন প্রায় এমন কোনো দেশই ছিল না, যারা (রুশ তরফে) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো ধরনের অনিষ্টকারী বা ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী আচরণের শিকার হয়নি৷
কিন্তু একটি সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছেন যে, আপনি এ বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতা কামনা করেন৷ পুটিনের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করার পর সেটা কিভাবে সম্ভব, বলে আপনি মনে করেন?
প্রধানমন্ত্রী (টেরেসা মে) যেমন বলেছেন, আমরা বেছে নিতে দিয়েছি৷ আমরা বলেছি, দেখো, পদার্থটা নভিচক৷ সেটা কিভাবে তোমাদের ভাঁড়ার থেকে বেরিয়ে স্যালিসবেরির রাজপথে ব্যবহৃত হলো, তার যদি কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা থাকে, তাহলে এসো, আমরা একযোগে কাজ করে রহস্যের সমাধান করি৷ অপরদিকে যদি কোনো ব্যাখ্যা না থাকে, তাহলে আমরা ধরে নিতে বাধ্য হবো যে, রুশ রাষ্ট্রের নির্দেশেই এ ঘটনা ঘটেছে৷ আমরা কোনো উত্তর পাইনি৷ আমাদের বহু ব্যঙ্গাত্মক টুইট আর ট্রল পাঠানো হয়েছে৷
ক্রেমলিন বলছে, তারা সংশ্লিষ্ট পদার্থটির নমুনা পেতে চায়৷ আপনি কি রুশ তদন্তকারীদের পদার্থটি পরখ করার সুযোগ দেবেন?
আমি ক্রেমলিনের গোয়েন্দাদের সৌজন্য সহকারে বলতে বাধ্য হবো যে, আমরা রাসায়নিক সমরাস্ত্র বর্জন সংগঠনের বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞদের উপরেই আস্থা রাখবো৷ দেখা যাক, তারা কী বলেন৷ রাসায়নিক সমরাস্ত্র চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটেনের পক্ষে সেটাই বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়া৷ এছাড়া আমি বলতে বাধ্য যে, নভিচক নিয়ে যা যা ঘটেছে, সে ব্যাপারে রুশ অবস্থান আমার কাছে ক্রমেই আরো বেশি উদ্ভট হয়ে উঠছে৷
ব্রিটিশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী উভয়েই কিছু কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছেন; ব্রিটেন থেকে ২৩ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে ও রুশ তরফ থেকেও তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া এসেছে৷ আপনি কি আর কোনো ব্যবস্থা নেবেন?
আমরা ২৩ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছি, যারা সম্ভবত কূটনীতিকের ছদ্মবেশে গুপ্তচর ছিলেন; এছাড়া আমরা আরো কিছু পদক্ষেপ নেবো৷ আমরা বিশেষ করে আমাদের সীমান্ত আরো জোরদার করছি; যুক্তরাজ্যে বেআইনিভাবে অথবা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থসম্পদ রোখার জন্য আমাদের হাতে একাধিক আইনের অস্ত্র আছে, আমরা সেগুলো প্রয়োগ করতে পারি৷ জাতীয় অপরাধ সংস্থা ও জাতীয় অর্থনৈতিক অপরাধ গোষ্ঠী রয়েছে৷ তারা তাদের কাজ করবে৷ কিন্তু মনে রাখবেন, যুক্তরাজ্যে আইনের শাসন কায়েম, কাজেই রাজনীতিক হিসেবে আমি বলতে পারি না, ওর টাকা বাজেয়াপ্ত করো অথবা এটা করো কিংবা সেটা করো৷ (এদেশে) ওভাবে কাজ চলে না৷
ঝানা নেমৎসোভা/এসিবি