সেনেগালকে হারিয়ে ফ্রান্সকে পেলো ইংল্যান্ড
৪ ডিসেম্বর ২০২২কোনো আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচেই রবিবারের আগে কখনো মুখোমুখি হয়নি ইংল্যান্ড এবং সেনেগাল। অথচ দুই দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই যে পরস্পরের খুবই চেনা! হবেই না বা কেন, সেনেগাল দলের অধিনায়ক কালিদু কুলিবালিসহ মোট ১০ জন ফুটবলার খেলেন ইংলিশ লিগে। বেশিরভাগই প্রিমিয়ার লিগে, কেউ ঠিক নীচের ধাপ চ্যাম্পিয়নশিপে। ম্যাচের আবহে তাই তীব্র প্রতিদ্বন্দিতার আভাস, কিন্তু আল বায়াত স্টেডিয়ামে শুরুর দিকের মিনিট ত্রিশেক বাদে বাকি সময়টা ইংরেজ শাসনই চলেছে।
অথচ ইসমাইল সারের শটটা জর্ডান পিকফোর্ডের হাতে না লাগলে গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো। আফ্রিকান নেশন্স কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সেনেগাল, দলটির ২৬ ফুটবলারের ২৪ জনই খেলেন ইউরোপের নামী ক্লাবে। গোলরক্ষক এদুয়ার্দু মেন্দি, অধিনায়ক কালিদু কুলিবালি দুজনেই চেলসির নিয়মিত খেলোয়াড়। ইংল্যান্ডের ফুটবলারদের অন্ধিসন্ধি তো তাদের ভালোই জানার কথা। কিন্তু বিশ্বকাপের মঞ্চে কাজে এলো না তার কিছুই।
শুরুর আধঘন্টা সুযোগ বেশি তৈরি করেছে সেনেগালই। গতিশীল, সাবলীল আক্রমণে তারা ইংল্যান্ডের রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত রাখলেও সাদিও মানের মতো একজন দক্ষ ফরোয়ার্ডের অভাবে গোলের দেখা পায়নি তেরাঙ্গার সিংহরা। ম্যাচের ৩১ মিনিটে ইসমাইল সার বাম দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে গিয়ে গোলপোস্টে শট নিতে গেলে সামনে হাত ছড়িয়ে নিশানা নষ্ট করার অভিপ্রায় পিকফোর্ডের। সারের শটটা লাগে পিকফোর্ডের বাম হাতে। পরের মিনিটেই বল নিয়ে উঠতে থাকা সারকে পেছন থেকে জোরালো ফাউল করেন কাইল ওয়াকার।
এক মিনিট পর প্রতিপক্ষের ভুল পাসে পেয়ে যাওয়া বলে কাউন্টার আক্রমণে ইংল্যান্ড, নেতৃত্বে জুড বেলিংহ্যাম। তার কাছ থেকে হ্যারি কেইন হয়ে বক্সের ভেতর বল পেলেন জর্ডান হেন্ডারসন, বাম পায়ের জোরালো শটে বল জালে পাঠাতে কোনো ভুল হয়নি লিভারপুল অধিনায়কের। জাতীয় দলে হেন্ডারসনের এটি মাত্র দ্বিতীয় গোল। ৩২ বছর ১৭০ দিন বয়সি হেন্ডারসন বিশ্বকাপে গোল করা ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সবচেয়ে বেশি বয়সি ফুটবলার। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে টম ফিনি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে গোল করেছিলেন ৩৬ বছর ৬৮ দিন বয়সে। অন্যদিকে ১৯ বছর বয়সে জুড বেলিংহ্যাম সবচেয়ে কম বয়সি হিসেবে গোলে অ্যাসিস্ট করা কৃতীদের তালিকায় নাম লেখান।
গোল পেয়েই যেন জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় জেগে ওঠে 'থ্রি লায়নস'। একের পর এক আক্রমণে তারা ব্যতিব্যস্ত করে তোলে সেনেগালের রক্ষণ। প্রথমার্ধ শেষ হবার আগেই ইংল্যান্ড পেয়ে যায় দ্বিতীয় গোলের দেখা, হ্যারি কেইনের পায়ে। বেলিংহ্যাম কয়েকজনকে কাটিয়ে পাস দেন ফিল ফডেনকে। তার কাছ থেকে বল পেয়ে যান কেইন, লম্বা দৌড়ে মাঠের মাঝামাঝি জায়গা থেকে দৌড়ে এসে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বক্সের ভেতর ঢুকে যান টটেনহাম তারকা। একই শহরের দল চেলসির গোলরক্ষককে কোনো সুযোগ না দিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে বল জালে পাঠান কেইন। একই সঙ্গে গোলের বাঁশি ও মধ্যবিরতির সংকেত দেন রেফারি, অর্থাৎ ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ।
বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে প্রথমার্ধের আগেই ২-০তে এগিয়ে ইংল্যান্ড, এ যেন এক বিরল দৃশ্য। গত আসরেই রাউন্ড অব সিক্সটিন থেকে সামনে এগিয়ে যেতে টাইব্রেকারে গড়িয়েছিল কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ। এবারে অনেকটা হেসেখেলেই কোয়ার্টার ফাইনালে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। প্রথমার্ধে ২ গোলের পর দ্বিতীয়ার্ধে, ম্যাচের ৫৭ মিনিটে বুকায়ো সাকার গোলে ৩-০ তে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। আরো কয়েকটা সুযোগ পেলেও আর গোলের দেখা পায়নি ইংল্যান্ড, সেনেগালও আর খুব একটা ঘুরে দাঁড়াবার প্রচেষ্টা দেখায়নি।
৩-০ গোলে সেনেগালের বিপক্ষে জিতে শেষ আটে পা রাখলো ইংল্যান্ড, বিশ্বকাপে তারা এখন পর্যন্ত করেছে ১২ গোল। অধিনায়ক হ্যারি কেইন ম্যাচ শেষে সেটাই বললেন, ‘‘গোলের হিসেব রাখা আমাদের কাজ নয়, আমাদের কাজ গোল করা। আমাদের দলে ভালো ফরোয়ার্ড, ভালো মিডফিল্ডার আছে, কেন গোল হবে না!''
১৯৮২ সালের স্পেন বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথম বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা হচ্ছে ইংলিশ চ্যানেলের দুই পাড়ের দুই প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের। ১০ ডিসেম্বর এই একই মাঠে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে লড়বে ইংল্যান্ড। আফ্রিকার চ্যাম্পিয়নদের তারা বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে রবিবার, পারবে কি বিশ্বচ্যাম্পিয়নদেরও ফেরত পাঠাতে?