সেতু ভেঙে নতুন হবে
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮দক্ষিণ কলকাতা শহরতলী এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণার সঙ্গে সংযোগরক্ষাকারী মাঝেরহাট সেতুর বয়স হয়েছিল ৫০ বছর৷ ৪ সেপ্টেম্বর আচমকা ভেঙে পড়ার পর ধরা পড়ে, সেতুপথটির রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ছিল, যে দায়িত্ব ছিল রাজ্য পূর্ত দপ্তরের হাতে৷ প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনায় কম হলেও এই সেতু ভেঙে পড়ার পর এক ব্যাপক পথকষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে শহরের ওই অংশের বাসিন্দাদের৷ পুলিশের তৎপরতায় ঘুরপথে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করলেও দুর্ভোগ থাকছেই৷ এই পরিস্থিতিতে রেল দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে, নীচের রেলপথের ওপর দিয়ে অস্থায়ী যাতায়াতের পথ চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার৷ শুক্রবার রাজ্য সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করলেন, সেতুটি মেরামতির সুযোগ নেই৷ পুরনো সেতুটি পুরোটাই ভেঙে ফেলতে হবে৷ তার জায়গায় নতুন সেতু তৈরি হবে, যার জন্য এক বছর সময় বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ রাজ্যের মুখ্যসচিবের তদারকিতে এই নির্মাণের কাজ করবে রাজ্য পূর্ত দপ্তর৷
দুর্ঘটনার দু'দিন পর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, কেন সেতুটি হঠাৎ ভেঙে পড়ল তা জানতে তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন চান৷ এই তদন্তও মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে করেছিল পূর্ত দপ্তর এবং কলকাতা পুলিশ৷ এবং দৃষ্টান্তমূলকভাবে অত্যন্ত নিরপেক্ষ তদন্ত হয়েছে, যেখানে সেতুপথটির রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের দায় এসে পড়েছে পূর্ত দপ্তরেরই ঘাড়ে৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, ২০১৬ সালেই মাঝেরহাট সেতুর বেহাল দশার রিপোর্ট জমা পড়েছিল পূর্ত দপ্তরে এবং মেরামতির কাজ শুরু করার কথা ছিল৷ কিন্তু পূর্ত বিভাগ সেই কাজ শুরু করেনি৷ সুতরাং সেতু ভাঙার দায় তারা নিতে বাধ্য৷ এর পাশাপাশি মেট্রো রেলের কাজের জন্যেও সেতুটির ক্ষতি হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন তদন্তকারীরা৷
মুখ্যমন্ত্রী তার পরেও নিশ্চিত হতে চান৷ তিনি জানিয়েছেন, তদন্ত এখানেই শেষ হচ্ছে না৷ আরো বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে৷ তারপর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী আরো জানান যে, তিনি জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রোর কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে যে খবর রটেছে, তা ঠিক নয়৷ তিনি প্রথমেই বলেছিলেন, যতদিন না তদন্ত শেষ হচ্ছে, মেট্রোর কাজ বন্ধ থাকবে৷ সেই মতো ঠিক সাত দিনই কাজ বন্ধ ছিল৷ ‘‘‘যে কাজ আমি শুরু করেছি, সেটা আমি কী করে বন্ধ করব!'' বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রসঙ্গত, তিনি কেন্দ্রে রেলমন্ত্রী থাকার সময়ই বাজেটে প্রস্তাবিত হয়েছিল এই রেল প্রকল্প৷
তবে মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পর দেরিতে হলেও শহর এবং রাজ্যের অন্য সেতুগুলির দুরবস্থার দিকে নজর গেছে সরকারের৷ জরুরি ভিত্তিতে ২০টি সেতু চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলির মেরামতি অবিলম্বে শুরু হতে চলেছে৷ পাশাপাশি তৈরি হয়েছে কমিটি, যার কাজ হবে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সেতুগুলির ‘স্বাস্থ্য' পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়া৷ তবে এর পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীন সৌন্দর্যায়নেরও ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে৷ কেন সেতুগুলির উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের মূল দায়িত্ব এড়িয়ে সেগুলিতে রঙ করা আর বাহারি আলো লাগানোর পিছনে কোটি কোটি টাকা সরকার খরচ করে, সেই প্রশ্ন উঠছে৷ উল্লেখ্য মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরই সরকারের প্রথম টনক নড়ে যে, সেতু সাজানোর জন্য সার দিয়ে মাটি ভর্তি ফুলগাছের টব বসানোর কারণে শহরের বেশ কয়েকটি সেতুর ওপর ভার বেড়েছে, যা ভবিষ্যতে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে৷ তারপরই সবক'টি সেতু থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সমস্ত ফুলের টব, যেগুলি এখন নেহাতই অনাদরে পড়ে আছে সেতুর পাশে, রাস্তার ধারে৷