সুদহার বৃদ্ধিতে বাড়ছে ব্যাংকের আমানত
৭ মে ২০২৩গ্রাহকদের আমানতের সুদহার বাড়িয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো৷ এতদিন চাইলেও তাদের ইচ্ছামাফিক সুদহার বাড়ানোর স্বাধীনতা ছিল না৷ ২০২০ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী ঋণের সুদহার নয় শতাংশ ও আমানতের সুদহার ছয় শতাংশের মধ্যে রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল৷ সবশেষ মুদ্রানীতিতে সেই সীমা তুলে দেয়ার পর আমানত সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় ব্যাংকগুলো সুদহার বাড়িয়েছে৷ এখন গ্রাহকদের আট শতাংশ পর্যন্তও সুদ দিচ্ছে কোনো কেনো ব্যাংক৷ যেখানে গত ডিসেম্বরে গড় সুদহার ছিল মাত্র চার শতাংশের কিছু বেশি৷
এরইমধ্যে যেসব ব্যাংক আমানতে সুদের হার বাড়িয়েছে তার মধ্যে আছে পদ্মা ব্যাংক,সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, এক্সিম ব্যংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক৷ জুলাই নাগাদ আরো অনেক ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে৷
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘এখন সুদের হার কিছুটা বেড়েছে৷ মূল্যস্ফীতির চেয়ে সুদের হার অনেক কম থাকায় মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখায় আগ্রহ হারাচ্ছিল৷”
বিশ্লেষকদের মতে ব্যাংকে মানুষ টাকা রেখে যাতে লাভবান হন সেজন্য আমানতের সুদহার হতে হবে মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে বেশি৷ বর্তমানে মূল্যস্ফীতি প্রায় সোয়া নয় ভাগ৷ সেই হিসেবে আমানতের সুদ হার এখনও কম৷
বাড়ছে আমানতের পরিমাণ
বাংলাদেশে শেয়ার বাজারে অনিশ্চয়তা, সঞ্চয়পত্রে নানা বিধিনিষেধের কারণে ব্যাংকই সাধারণ মানুষের অর্থ জমা রাখার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে নানা ঋণ জালিয়াতির খবরে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়৷ কমে আসে আমানতের প্রবৃদ্ধির হারও৷ ২০২১ সালের মে মাসে যেখানে বার্ষিক আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ, সেখানে গত বছরের ডিসেম্বরে তা সাড়ে পাঁচ শতাংশে নেমে আসে৷ এই হার স্মরণকালের সর্বনিম্ন৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মার্চে তা বেড়ে সাড়ে সাত শতাংশ হয়েছে৷ এক বছরে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এক লাখ ছয় হাজার ৬১৫ কোটি টাকার আমানত বেড়েছে৷ মোট আমানতের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ১৪ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা৷
সুদের হার বৃদ্ধি ছাড়াও এর পেছনে আরো তিনটি কারণ উল্লেখ করছেন ব্যাংকাররা৷ তাদের মতে ইসলামী ব্যাংকের ঘটনায় ব্যাংক খাতে নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে যে অনাস্থা তৈরি হয়েছিল তা এখন অনেকটা কেটেছে৷ বিনিয়োগের অন্য কোনো বিকল্প না থাকায় মানুষ ব্যাংকেই ফিরে আসছেন৷ সেই সঙ্গে তারল্য সংকট কাটাতে ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার ধীর নীতি অনুসরণ করছে৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “ব্যাংকের প্রতি এর আগে মানুষ আাগ্রহ হারিয়ে ফেলছিলো৷ সুদের হার ছিলো অনেক কম৷ আর নানা কারণে আস্থার সংকটও তৈরি হয়েছিলো৷ অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে জমি, ফ্ল্যাট বিলাস সামগ্রী কিনেছেন৷ কিন্তু জমি, ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করলে তাতে অর্থনীতির তেমন লাভ হয় না৷’’
উন্নতি হয়েছে, তবে যথেষ্ট নয়
আমানত বৃদ্ধির হারকে এখনও যথেষ্ট বলে মনে করেন না ব্যাংকাররা৷ ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়াম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘আমানতের সামান্য উন্নতি হয়েছে৷ তবে এটা যথেষ্ট নয়৷ আমানত না বাড়লে ব্যাংক কম ঋণ দেবে৷ বিনিয়োগ কম হবে৷”
তিনি বলেন, ‘‘এর আগে আমানত কমে যাওয়ার প্রধান কারণ ছিলো ডলার সংকট এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া৷ তার সঙ্গে ছিলে ব্যাংকের ওপর আস্থাহীনতা৷ তবে এক ব্যাংকের প্রতি আস্থা কমে গেলে সেখান থেকে টাকা তুলে আরেক ব্যাংকে রাখেন আমানতকারীরা৷”
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদও মনে করেন, আমানতের বৃদ্ধি ইতিবাচক হলেও, যে হারে বাড়ছে তা এখনও যথেষ্ট নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘সুদের হার কিছুটা বাড়ায় মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখা শুরু করেছে৷ এটা ধরে রাখতে হবে৷’’
গত ডিসেম্বরের ছবিঘর দেখুন...