1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুচেতনা থেকে সুচেতন বুদ্ধদেবের কন্যা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২২ জুন ২০২৩

নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত হতে চান পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর কন্যা। সুচেতনা ভট্টাচার্য থেকে সুচেতন।

https://p.dw.com/p/4SvSV
এলজিবিটিকিউ
ছবি: IMAGO/NurPhoto

রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মেয়ে সুচেতনা। তিনি রূপান্তরকামী পুরুষ হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেছেন। চলতি মাসে পিপলস রিলিফ কমিটির একটি কর্মশালায় অংশ নেন তিনি। এলজিবিটিকিউ প্লাস সমাজের স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় নিজের বক্তব্য পেশ করেন। তাতেই আগল ভেঙে সুচেতনার নতুনভাবে আত্মপ্রকাশের ইঙ্গিত ছিল।

এর পর একান্ত ব্যক্তিগত পরিসরে যে বিষয়টি ছিল, বুধবার সেটি প্রকাশ্যে এনেছেন বুদ্ধ-কন্যা। তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন, সুচেতন ভট্টাচার্য হিসেবেই পরিচিত হতে চান। আধার, ভোটার কার্ডে এ জন্য পরিবর্তন করতে চান তিনি। আইনি দিক থেকে এই বদলের জন্য পদক্ষেপ নিতে চান। আর সর্বোপরি, অস্ত্রোপচার করে নারী থেকে শরীরে পুরুষ হতে চান সুচেতন।

সুচেতনার রূপান্তর

সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে সুচেতন বলেছেন, "সম্প্রতি একটি কর্মশালায় গিয়েছিলাম। এ ধরনের সভায় এটাই আমার প্রথম অংশগ্রহণ। সেখানে আমাদের সমাজের মানুষজনের সঙ্গে আলাপ হয়। অনেক কিছু জানতে পারি। এই কর্মশালাই আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করেছে।" এখানেই তিনি প্রশ্ন করেন, "আমি সুচেতনা নই, সুচেতন। রূপান্তর ঘটাতে কী কী করতে হবে?"

সুচেতনার নারী শরীরে দীর্ঘদিন ধরেই বাস পুরুষ সুচেতনের। ৪১ বছরের সুচেতন ১৮ বছর ধরে এক নারীর সঙ্গে বাস করছেন। সুচেতনের ভাষায়, "বন্ধুদের সঙ্গে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছি। নিজের প্রকৃত পরিচয় কীভাবে সামনে আনা যায়, সেটা নিয়ে ভাবনাচিন্তাছিল। ৪০-এর কোঠায় এসে পড়ার পর মনে হয়, এটাই সময়।"

‘নিজেকে সুচেতন ঘোষণা করতে শরীর পরিবর্তনের দরকার নেই’

এই দীর্ঘ সময় সুচেতন ও তার সঙ্গী পরিবার এবং স্বজন-বন্ধুদের পাশে পেয়েছেন। কিন্তু বৃহত্তর সমাজের অভিজ্ঞতা সবসময় সুখকর হয়নি। সুচেতন বলেন, "আমাদের সমাজ সমকামী নারী ও রূপান্তরকামী পুরুষের পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন নয়। তবে রূপান্তকামীদের একটা বড় অংশ যেভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, সেটা আমার ক্ষেত্রে হয়নি।"

স্বজনদের সাহায্য

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এখন খুবই অসুস্থ। স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য রয়েছেন স্বামীর সঙ্গে। সঙ্গীকে নিয়ে আলাদা থাকেন সুচেতন। একটি ইউটিউব চ্যানেলের কাজ নিয়ে তিনি ব্যস্ত। সঙ্গী বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। সুচেতন চান না, রূপান্তরের বিষয়টা নিয়ে তার মা-বাবা কোনো ভাবে বিব্রত হয়ে পড়ুন। তাই নিজের মতো নবপরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন।

ছোটবেলা থেকেই সুচতনের মধ্যে পুরুষের সত্তা জেগে উঠেছিল। তখন কেমন ছিল অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া? সুচেতন বলেছেন, "আমি বুঝতে পারতাম নিজেকে। মা-বাবাও বুঝেছিলেন। তাদের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি।" এই অতীতকে পুঁজি করে যৌন সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াতে চাইছেন একসময়ের বাম রাজনৈতিক কর্মী।

সুচেতনের কৃতিত্ব

প্রগতিশীল পরিবারের সদস্য হওয়ায় সমর্থন পেয়েছেন ঠিক কথাই। কিন্তু সেটাই কি আত্মপ্রকাশের পথে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল না? কর্মশালার অন্যতম বক্তা, অভিনেত্রী উষসী চক্রবর্তী বলেন, "সেলিব্রেটি বাবার সন্তান হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন ছিল। এই সিদ্ধান্ত প্রান্তিক মানুষের লড়াইয়ে শক্তি জোগাবে।"

সিদ্ধান্ত যে কঠিন তা বোঝা যাচ্ছে নেটিজেনদের একাংশের ভাষায়। এই 'ট্রোল' দেখে বিচলিত নন সুচেতন। তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার আন্দোলনে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'প্রান্তকথা'র কর্ণধার বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় কর্মশালায় ছিলেন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "নিজেকে সুচেতন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য শরীর পরিবর্তনের দরকার নেই। নিজের মনের প্রকাশই যথেষ্ট। সেই আইনি অধিকার রূপান্তরকামীদের রয়েছে। এই ঘোষণা অনেক মানুষকে উৎসাহ জোগাবে।"