1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যায় পানিবন্দি ১৮ লাখ মানুষ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ জুন ২০২৪

বন্যা কবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জে পানিবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন ১৮ লাখ মানুষ৷ জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ৷

https://p.dw.com/p/4hK1v
সিলেটে বন্যা (ফাইল ফটো)
সিলেট ও সুনামগঞ্জে পানিবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন ১৮ লাখ মানুষছবি: Mamun Hossain/DW

বৃহস্পতিবার থেকে এই দুই জেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমলেও সিলেট বিভাগের অপর দুই জেলা মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ নতুন করে প্লাবিত হতে শুরু করেছে৷ সিলেটের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস বুলবুল জানান, জেলায় মোট ৩০৭টি কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ২১ হাজার বন্যাদুর্গত মানুষ৷

তিনি আরো বলেন, ‘‘তারা (বন্যাদুর্গত মানুষেরা) তিন দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন৷ আর পুরো সিলেট শহরে এখন পানি৷ এছাড়া উপজেলাগুলোও প্লাবিত হয়েছে৷ তবে আজকে (বৃহস্পতিবার) শহরে পানি সামান্য কমেছে৷''

সুনামগঞ্জের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ইমন জানান, ‘‘৬৯৪ টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ২৩ হাজার বন্যাদুর্গত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন৷''

প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, দুই জেলার অন্তত ১৮ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন৷ এরমধ্যে সুনামগঞ্জে আট লাখ এবং সিলেট জেলায় ১০ লাখ৷

সিলেট মহানগরীর মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীর তীরবর্তী বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷ নগরীর লোকজন চরম দুর্ভোগে জীবন কাটাচ্ছেন৷ গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের পাশাপাশি বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায়৷ সিলেটে ২০ দিনের মধ্যে এটি দ্বিতীয় দফা বন্যা৷ সিলেটজুড়ে ৮৬৪টি গ্রাম ও এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷

‘নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় নদীর দুই পাশের জনপদ প্লাবিত হচ্ছে’'

সিলেট শহরের বাসিন্দা দিপু সিদ্দিকী জানান, ‘‘চলতি মাসের প্রথম দিনই সিলেট শহর একবার প্লাবিত হয়৷ এখন দ্বিতীয় দফায় আবার প্লাবিত হওয়ায় শহরের মানুষ অনেক কষ্টে আছেন৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘শহরের মধ্য দিয়েই সুরমা নদী প্রবাহিত হওয়ায় ওই নদীর পানি বাড়লেই শহরের দুই দিক প্লাবিত হয়৷ তবে আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে পানি কমতে শুরু করেছে৷ কিন্তু কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়তে থাকায় সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা প্লাবিত হচ্ছে৷''

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুন পাড়া, ধোপাখালী, বাঁধনপাড়া, বলাকা, মোহাম্মদপুর, ষোলঘর, পশ্চিম হাজীপাড়া, তেঘরিয়া, নবীনগর, কাজীর পয়েন্ট, মল্লিকপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা এখনো পানিবন্দি রয়েছেন৷ শহরের বিত্তবানেরা বিভিন্ন হোটেলে আশ্রয় নিয়েছেন৷ কেউ কেউ ক্লিনিকের বিভিন্ন কক্ষেও পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন৷ বিপাকে পড়েছেন, নিম্ন আয়ের মানুষেরা৷ বাজারে এক-দুইটি দোকান খোলা পাওয়া গেলেও নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন দোকানিরা৷

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ, ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, গ্রামীণ রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় বন্যার পানি উঠেছে৷ শান্তিগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷ তাহিরপুরে ১০-১৫টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে৷ শাল্লা উপজেলার অনেক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে৷

শাল্লার আটগাঁও ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রাহুল চদ্র দাস জানান, ‘‘ইউনিয়নের অনেক এলাকা পানির নিচে চলে গেছে৷ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, রাস্তাঘাট, ফসলের ক্ষেত পানির নিচে চলে গেছে৷ কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও অনেকেই পানি কমার আশায় এলাকায়ই অবস্থান করছেন৷ তবে আরেকটু পানি বাড়লে তারাও থাকতে পারবে না৷''

‘বৃষ্টি কমলে বন্যা কমে আসবে’

সুনামগঞ্জের নার্সিং ইনস্টিটিউট আশ্রয়কেন্দ্রে সপরিবারে আশ্রয় নেয়া ওসমান গনির বাড়ি পৌর এলাকার সুলতানপুরে৷ তিনি জানান, ‘‘পুরো শহরই ডুবে গেছে৷ আমরা দুইশ পরিবার এখানে আশ্রয় নিয়েছি৷ গবাদি পশুসহ যা হাতে করে আনতে পেরেছি তা নিয়ে এসেছি৷ বাসাবাড়ি ফার্নিচার সব পানির নিচে৷''

সপরিবারে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন তৈয়বুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার পানির খুব সংকট৷ আমাদের তিন বেলা খিচুড়ি খেতে দিচ্ছে৷ সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন নারী ও শিশুরা৷ এখানে নানা ধরনের পোকামাকড় উঠে যাচ্ছে৷ সবাই গাদাগাদি করে আছি৷''

বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানি বৃহস্পতিবার সামান্য কমলেও মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে৷ আর বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে দেশের মধ্যাঞ্চলও প্লাবিত হতে পারে৷

বন্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘন্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলে এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকবে৷ অন্যদিকে, মৌলভী বাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু-খোয়াই নদীর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে৷

দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি সমতলে বাড়ছে এবং কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুরে বন্যা হতে পারে৷ তিস্তা নদী ২৪ ঘন্টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে৷

বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানিও৷ পানি বেড়েছে পদ্মাতেও৷ সুরমা ছাড়া দেশের উত্তর পূর্বেও সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে৷

বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সজল কুমার রায় জানান, ‘‘ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে৷ সেখান থেকে পানির ঢল আসছে৷ আর আমাদের সিলেট অঞ্চলেও প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে৷ ফলে এই বন্যা হচ্ছে৷ বৃষ্টি কমলে বন্যা কমে আসবে৷ তবে ভাটিতে এই পানি সরে যাওয়ার সময় দেশের মধ্যাঞ্চল কিছু সময়ের জন্য প্লাবিত হতে পারে৷''

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২০ দিন ধরে সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে৷ প্রায় প্রতিদিনই অতি ভারী বর্ষণ হচ্ছে৷ ২৪ ঘন্টায় ৮৯ মিলিমিটারের বেশি হলেই তা অতি ভারী বর্ষণ হিসাবে দেখা হয়৷ গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে ১২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে৷ চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত এমন ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি৷

আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘‘দেশের অভ্যন্তরে প্রচুর বৃষ্টির সঙ্গে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের বৃষ্টির পানিও খাড়াভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে৷ কারণ সিলেট অঞ্চলের চেয়ে ওই অঞ্চলের উচ্চতা অনেক বেশি৷ আর এর সঙ্গে এখানকার বৃষ্টির পানি যুক্ত হচ্ছে৷ পলির কারণে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় নদীগুলোর দুই পাশের জনপদ প্লাবিত হচ্ছে৷''