1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
প্যানোরামাসাউথ আফ্রিকা

সিল সংরক্ষণে দক্ষিণ আফ্রিকায় উদ্যোগ

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিশ্বের অনেক প্রান্তে কিছু প্রাণী ইকোসিস্টেমে ভারসাম্য রাখার চাবিকাঠি৷ আফ্রিকার দক্ষিণ উপকূলে এক সিল প্রজাতি সেই ভূমিকা পালন করছে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে বিজ্ঞানীদের মনে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷

https://p.dw.com/p/4l547
সাউথ আফ্রিকার সিল
এক ধরনের অ্যালজি সিলের মস্তিষ্ক বদলে দিয়ে তাদের আগ্রাসী করে তুলছেছবি: DW

ব্রেট গ্ল্যাসবি নামের এক ডুবুরি বিশেষ এক উদ্ধার কাজে অংশ নিচ্ছেন৷ সেই কাজের জন্য নিপুণ হাত চাই, যাতে লক্ষ্যবস্তু আহত না হয়৷ দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরের সমুদ্রতটে সিলদের এক গোষ্ঠীর এক সদস্যকে উদ্ধার করতে হবে৷ ডাইভার হিসেবে তাঁকে বিশেষভাবে তৈরি এক প্ল্যাটফর্মের মাঝে খালি অংশ থেকে হাত গলিয়ে সিলের গলায় আটকে যাওয়া প্লাস্টিকের ফিতে কাটতে হবে৷ তা না হলে প্রাণীটি দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে৷ সৌভাগ্যবশত মিশন সফল হয়েছে৷ টু ওশেনস অ্যাকোয়েরিয়ামের গ্ল্যাসবি বলেন, ‘‘সিলের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে প্রাণীটি বিশ্রাম নিচ্ছে, শুইয়ে আছে৷ গলায় টান অনুভব করবে৷ পাশের সিলের উপর বিরক্ত হয়ে আবার পাশে শুইয়ে পড়বে৷ জানতেও পারবে না যে কোনো মানুষ কিছু করেছে৷''

দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া উপকূলে প্রায় ২০ লাখ কেপ ফার সিল বাস করে৷ অত্যন্ত বুদ্ধিমান এই প্রাণীগুলি এমনকি কেপ টাউনের মতো জায়গায়ও মানিয়ে নিতে পারে৷ কিন্তু সেখানকার পানি প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরা, যা সিলের জন্য বড় হুমকি৷ টু ওশেনস অ্যাকোয়েরিয়ামের মার্টিন ভিলখুন বলেন, ‘‘সক্রিয় বন্দর হিসেবে এখানকার প্লাস্টিক শেষ পর্যন্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে৷ কেপ টাউনের দমকা বাতাস সবকিছু সমুদ্রে ফেলে দেয়৷ তাই আমাদের সুইপার বোট কঠিন পরিশ্রম করে যা পায় তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে৷ একটা জাল বসিয়েও নিকাশি ব্যবস্থার পানি ছেঁকে বস্তুগুলি তুলে নিয়ে আলাদা করা যায়৷''

বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় দক্ষিণ আফ্রিকায় সিল সংরক্ষণের উদ্যোগ

কিন্তু টু ওশেনস অ্যাকোয়েরিয়ামের টিমকে এখনো একক পদক্ষেপ নিতে হয়৷ এমনকি মাছ ধরার ছিপও কাজে লাগাতে হয়ে৷ ২০২৩ সালে তারা প্লাস্টিকের ফাঁস থেকে ১২৪টি সিলকে বাঁচিয়েছেন৷ তবে উপকূল থেকে দূরেও প্লাস্টিক ভেসে বেড়ানোর ফলে সিলের ঝুঁকি বেড়ে গেছে৷ অ্যাকোয়েরিয়ামের মার্টিন ভিলখুন বলেন, ‘‘সিল থেকে মুক্ত করা বেশিরভাগ বস্তুই মাছ ধরার কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত৷ ফলে আমাদের বন্দরের বাইরে থেকেই সেগুলি আসে বলে আমাদের বিশ্বাস৷ খাদ্যের সন্ধানে সিল যখন সমুদ্রের গভীরে যায়, তখন প্রাণীগুলি প্লাস্টিকের জঞ্জালে আটকে পড়ে৷ এর মধ্যে অনেক অংশ বাক্স বাঁধার টেপ, মাছের জাল, নায়লনের দড়ি ইত্যাদি৷ একটি সিল কীভাবে এই তিন ধরনের প্লাস্টিকে জড়িয়ে পড়েছিল, এটা তার উদাহরণ৷ প্রাণীগুলির শরীর থেকে প্রায় ১২টি বস্তু দূর করতে হয়েছিল, যা এক বড় সংখ্যা৷''

আফ্রিকার দক্ষিণ উপকূল সংলগ্ন এলাকার ইকোসিস্টেমের ক্ষেত্রে কেপ ফার সিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ সমুদ্রবিজ্ঞানী ও পানির নীচের ফটোগ্রাফার ডানেল ভেনৎসেলের জন্য এই প্রাণী অন্তহীন অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলে৷ তিনি প্রায় দশ বছর ধরে এই সিলের সঙ্গে সমুদ্রে ডুব মারছেন৷

এই প্রাণী সর্বদা শিকার করতে ব্যস্ত৷ কখনো দিনে নিজেদের শরীরের ওজনের প্রায় এক দশমাংশের সমান খাদ্য গ্রহণ করে৷ ডানেল বলেন, ‘‘প্রজাতি হিসেবে এগুলি যাকে বলে ইকোসিস্টেমের চাবিকাঠি৷ অর্থাৎ এই প্রাণী না থাকলে সেটা প্রায় ভেঙে পড়তে পারে৷ এই প্রাণী মাছ ও স্কুইড খেয়ে সেগুলির সংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য রাখে, অতিরিক্ত মাত্রায় বাড়তে দেয় না৷ এই সিলও হাঙর ও অর্কার মতো প্রাণীর খাদ্য হয়৷ অর্থাৎ আমাদের মহাসাগরগুলিতে হাঙরের সংখ্যা স্থিতিশীল রাখতেও সাহায্য করে৷''

কিন্তু সম্প্রতি মানুষের উপর সিল প্রজাতির হামলার একাধিক ঘটনা উদ্বেগের কারণ হচ্ছে৷ কখনো এমনকি ডাঙার উপরেও এমনটা ঘটছে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষের প্ররোচনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে সিল এমন আচরণ করছে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, মানুষ সম্পর্কে সিলের ভয় কেন কমে যাচ্ছে?

এমন সিলের রক্তের নমুনার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে এক ধরনের টক্সিনের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যেগুলি আফ্রিকার দক্ষিণ উপকূলের বিশেষ এক ধরনের অ্যালজি থেকে এসেছে৷ সেই টক্সিন প্রাণীর মস্তিষ্কের রসায়ন বদলে দিতে পারে এবং তাদের আরো আগ্রাসী করে তোলে৷ সেইসঙ্গে সিলের মধ্যে জলাতঙ্ক রোগের মাত্রাও বাড়ছে৷ সহকারী গবেষক নিকোল কিসভেটার বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কাজ করছি৷ সবাই মিলে আমরা কোনো এক সময়ে সমাধানসূত্র বার করতে পারি৷ কিন্তু এই মুহূর্তে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন৷''

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাণিজ্যিক শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞার কল্যাণে কেপ ফার সিলের সংখ্যা গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের তুলনায় বেড়ে গেছে৷ বর্তমান সংঘাতের সমাধান হিসেবে সিল মাছকে বিরক্ত না করলেই চলবে৷

জেসন বসওয়েল, ভল্ফ গেবহার্ট/এসবি