1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিরিয়ায় ইসরায়েলের বোমা

২১ মার্চ ২০১৮

সিরিয়া একটি আণবিক চুল্লি গড়ছে সন্দেহে ২০০৭ সালে ইসরায়েলি জঙ্গিবিমান স্থানটির উপর বোমাবর্ষণ করে৷ কিন্তু ঘটনার ১০ বছর পরে এই স্বীকারোক্তি সম্ভবত ইরানের প্রতি একটি প্রচ্ছন্ন হুমকি৷

https://p.dw.com/p/2uh5B
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb

বুধবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী প্রথমবার সরকারিভাবে স্বীকার করে যে, ২০০৭ সালে সিরিয়ার অভ্যন্তরে একটি সম্ভাব্য আণবিক চুল্লির উপর বিমান আক্রমণ চালানো হয়েছিল৷ ২০০৭ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর সংঘটিত বোমাবর্ষণের সঙ্গে ইসরায়েলের সংযোগ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা থাকলেও, ইসরায়েল কোনোদিনই তা স্বীকার করেনি, এমনকি ঘটনাটি সম্পর্কে মিডিয়ার বিবরণও সেন্সর করেছে৷

পূর্ব সিরিয়ার দাইর-এল-জুর অঞ্চলে একটি সম্ভাব্য প্লুটোনিয়াম জ্বালানির আণবিক চুল্লির উপর গোপন অভিযানে আটটি ইসরায়েলি জঙ্গিজেট স্বল্প উচ্চতায় উড়ে গিয়ে বোমাবর্ষণ করে বলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে৷

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘৫ই সেপ্টেম্বর রাত্রে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর জঙ্গিজেট সিরিয়ায় একটি নির্মীয়মান আণবিক চুল্লির উপর সফল আঘাত হানে ও চুল্লিটিকে ধ্বংস করে৷ চুল্লিটি প্রায় সমাপ্ত হতে চলেছিল৷ এই অভিযানে ইসরায়েল ও সমগ্র অঞ্চলটির প্রতি একটি আসন্ন অস্তিত্বের সংকট সফলভাবে অপসারণ করা হয়৷’’

আণবিক চুল্লিটির বিকাশে সিরিয়া উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে৷ দামেস্ক কখনো আণবিক কলকারখানা সৃষ্টির প্রচেষ্টার কথা স্বীকার করেনি এবং ইসরায়েলি আক্রমণের পরও নীরব থাকে৷ শুধুমাত্র বলে যে, সিরিয়ার বায়ুসীমা লঙ্ঘন করা হয়েছে৷

যুদ্ধের আশঙ্কা

সদ্য প্রকাশিত নথিপত্র অনুযায়ী, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা অভিযানটি সম্পর্কে নীরব থাকেন, কেননা, সিরিয়া পাল্টা আঘাত হানবে ও একটি যুদ্ধ শুরু হবে বলে তাদের আশঙ্কা ছিল৷

‘‘ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (সিরিয়ার তরফে) পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল৷ কাজেই অভিযান সংক্রান্ত তথ্য আপামর জনতার সামনে প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়,'' বলেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী৷

২০০৮ সালে মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেন যে, সিরিয়া একটি গোপন আণবিক চুল্লি নির্মাণের চেষ্টা করেছিল, ইসরায়েল সেটির উপর বোমা ফেলে৷ ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ জানায় যে, সংশ্লিষ্ট কারখানাটি খুব সম্ভবত একটি পারমাণবিক চুল্লি ছিল৷

ইরানকে বার্তা?

ইসরায়েল সেনাবাহিনী হঠাৎ দশ বছর আগের সেই অভিযানের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করার সিদ্ধান্ত নিলো কেন, তা স্পষ্ট নয়৷ বিমানহানার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমাট, যার স্মৃতিকথা প্রকাশিত হতে চলেছে৷ ওলমাট ব্যাপারটা ফাঁস করার আগেই কি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই পদক্ষেপ নিতে চেয়েছে?

অপরদিকে এই স্বীকারোক্তি ইরানের প্রতি সাবধানবার্তা হতে পারে, বিশেষ করে ইরান যখন চলতি সিরিয়া সংঘাতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন করছে৷ এই পন্থায় ইরান সিরিয়ায় স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানা স্থাপন করে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে বলে ইসরায়েলের উদ্বেগ৷

চলতি যুদ্ধে ইসরায়েল সিরিয়ায় বিভিন্ন লক্ষ্যের উপর ডজন-ডজন বিমানহানা চালিয়েছে, মূলত লেবাননের শিয়াপন্থি হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীকে অস্ত্র পাচার করা হচ্ছে, এই সন্দেহে৷ হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী আসাদ প্রশাসনের সৈন্যদের পাশাপাশি যুদ্ধ চালাচ্ছে ও হিজবুল্লাহর মুখ্য পৃষ্ঠপোষক হলো ইরান৷

২০০৭ সালের দুঃসাহসী বিমান অভিযানটি ১৯৮১ সালে ইরাকের একটি পারমাণবিক কারখানার উপর ইসরায়োলি আক্রমণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়৷

‘‘২০০৭ সালে (সিরিয়ার) আণবিক চুল্লিটির উপর আক্রমণের বার্তা হলো, ইসরায়েলের অস্তিত্বের পক্ষে ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমন কোনো নির্মাণকার্য বরদাস্ত করা হবে না,’’ বলে ইসরায়েলের সামরিক প্রধান লেফটেনান্ট-জেনারেল গাডি আইজেনকোট একটি বিবৃতিতে মন্তব্য করেছেন৷ ‘‘১৯৮১ সালের বার্তা ছিল তাই, ২০০৭ সালের বার্তা ছিল তাই এবং আমাদের শত্রুদের প্রতি ভবিষ্যতেও এই একই বার্তা থাকবে৷''

বর্তমান দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে, সিরিয়ায় আণবিক চুল্লিটি ধ্বংস হওয়ার কারণেই হয়তো ইসলামিক স্টেট সিরিয়া যুদ্ধের সময় অংশত দাইর-এল-জুর এলাকা জয় করা সত্ত্বেও কোনো পারমাণবিক পদার্থ হস্তগত করতে পারেনি৷ ‘‘একটি পারমাণবিক চুল্লি হাতে পেলে ওরা যে কী করতে পারতো, তা কল্পনার বাইরে,'' বলে ইসরায়েলি মিলিটারি মন্তব্য করেছে৷

এসি/এসিবি (এএফপি, এপি)