1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিডিইউ-র আঙ্গেলা ম্যার্কেল

১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯

তদানিন্তন পূর্ব জার্মানিতে সিডিইউ বা খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন ছিল এমন একটি দল, যেখানে খ্রিষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী নানা ধরণের মানুষ স্থান করে নিয়েছিলেন৷

https://p.dw.com/p/Jf29
আঙ্গেলা ম্যার্কেলছবি: AP

কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থার মধ্যে থেকেও যতটা সম্ভব বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৎপর হতে চেয়েছিলেন তারা৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেল কিন্তু ছিলেন না তাদের মধ্যে৷

আঙ্গেলা ম্যার্কেল এর জন্ম ১৯৫৪ সালে৷ বাবা ছিলেন লুথেরিয়ান যাজক৷ মেধাবী ছাত্রী আঙ্গেলা পদার্থ বিজ্ঞানে ডক্টরেট করে বিজ্ঞান জগতেই ক্যারিয়ার করতে চেয়েছিলেন৷ রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত হবার ইচ্ছা তার ছিলনা৷

কিন্তু ১৯৮৯ সালের হেমন্তে তখনকার পূর্ব জার্মানিতে পট পরিবর্তনের ঢেউ৷ গণতন্ত্রের দাবিতে সোচ্চার যখন পূর্ব জার্মান জনতা৷ তখন কিছু একটা করার ইচ্ছা জাগে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মনেও ৷ নানা ধারার বিরোধী আর বিরুদ্ধবাদীরা তখন ‘গণতান্ত্রিক জাগরণ' নামে প্রটেস্টান্ট গির্জার ছত্রতলে সংঘবদ্ধ হয়েছিল৷ সেই সময় একটি কম্পিউটার উপহার পেয়েছিল ‘গণতান্ত্রিক জাগরণ'৷ কিন্তু দলের মধ্যে কম্পিউটার চালাবার মত তেমন কেউ না থাকায় এমন একজনকে খুঁজছিলেন সদস্যরা যার এ বিষয়ে জ্ঞান আছে৷ ম্যার্কেল যোগাযোগ করলেন তাদের সঙ্গে৷ অল্প কিছু দিনের মধ্যেই দলের মুখপাত্র হলেন তিনি৷ এর পর দ্রুত এগিয়ে যায় তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার৷ ১৯৯০ সালে সাবেক পূর্ব জার্মানির প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে খ্রিষ্টীয় গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন সি ডি ইউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে৷ সরকার প্রধান হন সিডিইউর রাজনীতিক লোথার দে মেজিয়ের৷ ‘গণতান্ত্রিক জাগরণ'ও অংশীদার হয় সরকারের৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেল নির্বাচিত হন সরকারের সহকারী মুখপাত্র হিসাবে৷ এরপর পূর্ব জার্মান সিডিইউর সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হয়ে যায় ‘গণতান্ত্রিক জাগরণ'৷ এই ভাবে আঙ্গেলা ম্যার্কেলও এসে পড়েন সিডিইউতে৷

Bildergalerie Angela Merkel 3 Buchcover
আঙ্গেলা ম্যার্কেল এর জন্ম ১৯৫৪ সালেছবি: Droemer Knaur

হেলমুট কোলের আশীর্বাদপুষ্ট ম্যার্কেল ১৯৯০ সালের দোসরা ডিসেম্বর, পুনরেকত্রিত জার্মানির প্রথম সংসদীয় নির্বাচনে জার্মানির একেবারে উত্তর পূর্বের ফরপমার্ন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন৷ এই সময় তখনকার চ্যান্সেলর হেলমুট কোল নারী ও যুব মন্ত্রণালয়ের জন্য একজন পূর্ব জার্মান রাজনীতিক খুঁজছিলেন, দে মেজিয়ার ও অন্যান্য পূর্ব জার্মান রাজনীতিকরা তাঁকে আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে নেয়ার পরামর্শ দেন৷ সংসদে মাত্র এক বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেও নতুন দায়িত্ব বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি বুদ্ধিমতী এই নারীর৷ তীক্ষ্ণ মেধার পরিচয় পেয়ে কোলও নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে লাগলেন আঙ্গেলাকে৷ ১৯৯১ সালে সিডিইউর উপ প্রধান এবং ১৯৯৩ সালে মেকলেনবুর্গ ফরপোমার্ন রাজ্য সিডিইউর প্রধান হিসাবে নির্বাচিত হন ম্যার্কেল৷ ১৯৯৪ সালে সংসদীয় নির্বাচনের পর গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান পদার্থ বিজ্ঞানী আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷

বুদ্ধি ও সাহসে ক্ষমতার শীর্ষে

১৯৯৮ সালে সংসদীয় নির্বাচনে হেলমুট কোল পরাজিত হন এবং দলীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকেও অবসর নেন৷ কোলের উত্তরাসূরী সিডিইউর প্রধান হিসাবে নির্বাচিত হন ভল্ফগাং শয়ব্লে৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেল হন জেনারেল সেক্রেটারি৷ শিগগিরই আঙ্গেলা হয়ে ওঠেন শয়েব্লের ডান হাত৷ দুজনে মিলে দলকে শক্ত করার কাজে মন দেন তাঁরা৷ ইউরোপীয় ও রাজ্যসভার নির্বাচনে বিরাট সাফল্যও অর্জন করে তখন খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন৷

এরপর তথাকথিত চাঁদা কেলেংকারি ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের মামলায় জড়িয়ে পড়ে সিডিইউ৷ এই দলের অ্যাকাউন্টে প্রচুর অর্থ জমা হয়েছিল, যার উৎস কারো জানা ছিলনা৷ প্রাক্তন চ্যান্সেলর হেলমুট কোল কিছুতেই চাঁদাদাতাদের নাম ভাঙতে চাননি৷ ফলে গভীর সংকটের মুখে পড়ে সিডিইউ৷ এই পরিস্থিতি থেকে দলকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসেন ম্যার্কেল৷ জার্মানির খ্যাতনামা পত্রিকা ‘ফ্রাঙ্কফুর্টার আলগেমাইনে সাইটুং'-এর এক প্রতিবেদনে সিডিইউকে হেলমুট কোলের ব্যাপারে দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি৷ এর আগে দলের কারো এতটা সাহস হয়নি৷

এরপর এই চাঁদা কেলেংকারির সূত্র ধরে মামলায় জড়িয়ে পড়েন জার্মানির অনেক শিল্পপতি ও রাজনীতিবিদ৷ এ থেকে রেহাই পাননি ভলফগাং শয়েব্লেও৷ ফলে পদত্যাগ করেন তিনি৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সামনে খুলে যায় সিডিইউ- প্রধান হবার রাস্তা৷ ২০০০ সালে ৯৬ শতাংশ ভোট পেয়ে খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়নের প্রধান হিসাবে নির্বাচিত হন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷

wahlkampf in deutschland Angela Merkel 2009 Flash-Galerie
পূর্ব জার্মান সিডিইউর সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হয়ে যায় ‘গণতান্ত্রিক জাগরণ'৷ এই ভাবে আঙ্গেলা ম্যার্কেলও এসে পড়েন সিডিইউতেছবি: picture-alliance/ dpa

দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় চ্যান্সেলর দপ্তর

২০০২ সালে জার্মান সংসদীয় নির্বাচনে এসপিডির পদপ্রার্থী গ্যারহার্ড শ্র্যোয়ডারের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন ম্যার্কেল৷ সিডিইউর সহযোগী দল সিএসইউর প্রধান এডমুন্ড স্টয়বারের প্রবল বিরোধিতার কারণে তাঁকে ছেড়ে দিতে হয় এই প্রার্থিতা৷ নির্বাচনে হেরে যান স্টয়বার৷ আবার খুলে যায় আঙ্গেলার পথ৷

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সে সময় প্রার্থী হলে ম্যার্কেলও পরাজিত হতেন নির্বাচনে৷ তার তিন বছর পর শ্র্যোয়ডার যখন রাজনৈতিক চাপের মুখে সংসদীয় নির্বাচনকে এগিয়ে আনলেন, তখন কারো মনেই প্রশ্ন ছিলনা যে ম্যার্কেলই তাঁকে চ্যালেঞ্জ করবেন৷

২০০৫ সালের নির্বাচনে ম্যার্কেলের জয় যে নিশ্চিত সেটা সবাই ধরে নিয়েছিলেন৷ কিন্তু আর একটু হলেই ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে যেত৷ ২০০৩ সালে ম্যার্কেলের নেতৃত্বে সিডিইউর দলীয় সম্মলনে দলটিকে সামাজিক পুঁজিবাদের ধারণা থেকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ গ্যারহার্ড শ্র্যোয়ডারের সংস্কারনীতি অনেকটা এই ধারার হলেও নির্বাচনী যুদ্ধে ম্যার্কেলের রাজনীতিকে সামাজিক সম্পৃক্ততাহীন বলে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন তিনি৷ নির্বাচনে নাম মাত্র ব্যবধানে এসপিডির চেয়ে সিডিইউ/সিএসইউ এগিয়ে ছিল ৷

মুক্ত গণতন্ত্রী দলের সঙ্গে সংখ্যার দিক দিয়ে সম্ভব না হওয়ায় এসপিডির সঙ্গেই বৃহৎ কোয়ালিশন গঠন করতে হয় সিডিইউ/সিএসইউকে৷ আর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান হিসাবে চ্যান্সেলর পদে আসীন হন ম্যার্কেল৷

দ্বিতীয়বারের মত চ্যান্সেলর দপ্তরের দিকে

জার্মানির আসন্ন সংসদীয় নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মত চ্যান্সেলর হবার সম্ভাবনা রয়েছে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের, মনে করেন পর্যবেক্ষকরা৷ রাজনীতিতে এত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে ম্যার্কেল যে শিক্ষা নিয়েছেন তা কারো বুঝতে অসুবিধা হয় না৷ আর তা হল- রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্পষ্ট নীতি অবস্থান এড়িয়ে চলা৷ গত কয়েক বছরে বৃহৎ কোয়ালিশনে সহযোগী দলের সঙ্গে সব বিষয়ে এক মত পোষণ করেননি তিনি৷ অর্থনৈতিক সংগঠনগুলোর নীতি অবস্থান থেকেও নিরাপদ দূরত্বে থেকেছেন ম্যার্কেল৷ আবার পুরোপুরি মুখও ঘুরিয়ে নেননি৷ এক এক বিষয়ে প্রয়োজন মত বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছেন ম্যার্কেল৷ তাই তো তিনি এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে৷ যা আগের কোনো চ্যান্সেলরের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়নি৷ অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও নির্বাচনে ম্যার্কেল-এর জয়ী হবার সম্ভাবনা রয়েছে৷ কিন্তু জয় এখনও নিশ্চিত হাতের মুঠোয় আসেনি৷ সেটা জানেন ম্যার্কেলও৷ ২০০৫ সালের নির্বাচনেও সবাই ধরে নিয়েছিলেন যে ম্যার্কেলই জয়ী হবেন৷ আর একটু হলেই কিন্তু তা সম্ভব হতো না৷

প্রতিবেদক: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক