সার্বিয়ায় খনি কোম্পানির বিরুদ্ধে নারীদের সংগ্রাম
সার্বিয়ার এক গ্রামের নারীরা তাদের গ্রামের মধ্য দিয়ে খনির ট্রাক চলাচল আটকে দিতে পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছেন৷
খনি শহর
ছবিতে সার্বিয়ার পূর্বাঞ্চলের বোর শহর দেখা যাচ্ছে৷ কাছেই চলছে খননের কাজ৷ পাশের ক্রিভেলি গ্রাম ঘেঁষে থাকা পাহাড় থেকে ছবিটি তোলা হয়েছে৷ খননকাজের জন্য ক্রিভেলি গ্রামের ঘরবাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে৷ কিছু বাড়ি ভেঙেও গেছে৷
লড়াই করতে প্রস্তুত
৭৮ বছর বয়সি ভুকোসাভা রাডিভোয়েভিচ মাঝরাস্তায় বসে আছেন৷ পেছনে একটি ছোট সেতু দেখা যাচ্ছে৷ সেটি দিয়ে যেন খনি কোম্পানির ট্রাক পার হতে না পারে সেজন্য গত জানুয়ারিতে ব্যারিকেড বসিয়েছেন গ্রামের নারীরা৷ পালাক্রমে তারা পাহারা দিয়ে থাকেন৷ হলুদ বোর্ডে লাল কালি দিয়ে লেখা ‘ব্লকেড’৷ তার নীচে সময়সীমা উল্লেখ করা আছে- দিনরাত ২৪ ঘণ্টা৷
‘আমরা গ্রাম রক্ষা করছি’
৭৯ বছর বয়সি গৃহিনী স্তানা জর্গোভানোভিচ বলেন, ‘‘আমরা আমাদের বাড়ি ও গ্রাম রক্ষা করছি, যেখানে আমরা জন্মেছি৷ আমাদের সুন্দর গ্রামের জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে৷’’ খনির কারণে ক্রিভেলির ভূমি দূষিত হওয়ায় সবজি ফলানো সম্ভব হচ্ছে না৷
পরিত্যক্ত গ্রাম
সত্তরের দশক থেকেই ক্রিভেলি গ্রামে খননকাজ চলছে৷ তবে ২০১৮ সালে এক চীনা কোম্পানি দায়িত্ব নেওয়ার পর উৎপাদন চার গুন বেড়েছে৷ ফলে বর্জ্য বেড়েছে বহুগুন৷ তাই চীনা কোম্পানিটির সাবসিডিয়ারি সার্বিয়া জিজিন কপার খনি এলাকা থেকে গ্রামবাসীদের সরানোর কাজ শুরু করেছে৷ ছবিতে ক্রিভেলি গ্রামের কাছের একটি গ্রামের অবস্থা দেখা যাচ্ছে৷
নতুন বাড়ির আশা
২২ বছর বয়সি তেওদোরা তোমিচও মাঝেমধ্যে পাহারায় বসেন৷ ‘‘আমরা জিজিন কোম্পানিকে দেখাতে চাই যে আমরা এখনও আছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷ ‘‘আমি অন্য কোথাও নতুন গ্রামের আশা করছি যেখানে খনির কোনো প্রভাব থাকবে না৷ ক্রিভেলি গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ভ্ল্যাক্স অর্থোডক্স খ্রিষ্টান৷ তারা নতুন জায়গায় একসঙ্গে যেতে চান৷
১০০ মিলিয়ন ডলার খরচের দাবি
চীনের জিজিন কোম্পানি রয়টার্সকে এক বিবৃতিতে বলেছে, পরিবেশগত ক্ষতি এড়াতে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করা হয়েছে৷ সে কারণে ক্রিভেলি গ্রামের পরিবেশ উন্নত হয়েছে বলে দাবি করছে তারা৷
‘আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে’
ক্রিভেলির এক শিক্ষক স্লাভিচা লাজারেভিচ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে৷ আমি আশা করছি আমরা সবাই একসঙ্গে নতুন জায়গায় যেতে পারবো যেন আমরা আমাদের সম্প্রদায়টা টিকিয়ে রাখতে পারি৷’’ তিনি সেখানে নতুন স্কুল স্থাপিত হবে বলে আশা করছেন যেখানে তিনি কাজ করতে পারবেন৷
কোম্পানির প্রস্তাব সন্তোষজনক নয় বলে অভিযোগ
অন্যত্র সরে যেতে খনি কোম্পানির পক্ষ থেকে যে অর্থ প্রস্তাব করা হয়েছে তা যথেষ্ট নয় বলে গ্রামবাসীরা মনে করছেন৷ ৫৮ বছরের দেবিকা কস্তানদিদনোভি বলছেন, ঐ অর্থ দিয়ে একক অ্যাপার্টমেন্ট কেনা সম্ভব নয়৷ তবে কোম্পানির দাবি, স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা মেনে স্থানান্তর পরিকল্পনা প্রস্তাব করা হয়েছে৷