1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সার্বিয়ার রোমহর্ষক খুলির টাওয়ার

১৮ জুলাই ২০২৪

ইতিহাসের অনেক অধ্যায় সম্পর্কে মানুষ খবর রাখলেও সেই যুগের মানুষ সম্পর্কে খুব স্পষ্ট ধারণা পাওয়া কঠিন৷ সার্বিয়ায় এক প্রকল্পের মাধ্যমে এক যুদ্ধে নিহত যোদ্ধাদের মুখচ্ছবি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4iSF0
Schädel | Homo floresiensis und moderner Schädel
পাশাপাশি দুটি কঙ্কালছবি: Peter Brown/NATURE/picture alliance

১৮০৯ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সার্বিয়ার প্রথম বিদ্রোহে নিহত যোদ্ধাদের মাথার খুলি পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ চেগার লড়াই বলে পরিচিত সেই ঘটনায় প্রাণ হারানো যোদ্ধাদের মুখচ্ছবি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা৷

নৃতত্ত্ববিদ হিসেবে নাতাসা শারকিচ সেই প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা৷ বার্সেলোনা-ভিত্তিক এই বিজ্ঞানীর টিম ইটালির ট্রিয়েস্টে শহরের এক ল্যাবে প্রযুক্তির সাহায্যে মুখচ্ছবি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ নাতাসা বলেন, ‘‘নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের অর্থ, ব্যক্তিবিশেষের কংকালের অবশিষ্ট অংশের পরীক্ষা করা৷ এ ক্ষেত্রে আমাদের হাত-পা বাঁধা, কারণ আমাদের কাছে গোটা কংকাল নেই৷ এমনকি সম্পূর্ণ খুলিও পাই নি৷ ফলে আমাদের শুধু মুখচ্ছবি ফুটিয়ে তোলার কাজে মন দিতে হচ্ছে৷''

সেই গা ছমছমে টাওয়ারের মধ্যে বর্তমানে ৫৮টি খুলি রয়েছে৷ অতীতে সেখানে ৯০০-রও বেশি খুলি ছিল৷ কয়েকটি এখনো খুব ভালো অবস্থায় রয়েছে৷ নাতাসা শারকিচ বলেন, ‘‘আমরা লিঙ্গ, বয়স, এমনকি শরীরে চোটের মতো আরো কিছু বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করতে পারি৷ তারপর মুখচ্ছবি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ সেই সব মানুষ ঠিক কেমন দেখতে ছিলো, তা যথেষ্ট বাস্তবভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়৷''

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে মিলান সিমোনোভিচ সার্বিয়ার কবরখানায় গবেষণা চালাচ্ছেন৷ তিনিও নাতাসার টিমের সদস্য৷ তাঁর মতে, অনন্য এই সৌধের প্রকৃত চরিত্র তুলে ধরার সময় এসে গেছে৷ মিলান বলেন, ‘‘মানুষ গিয়ে এই সব খুলি দেখে বটে, কিন্তু সেই বিষয়ে কোনো গভীর উপলব্ধি নেই৷ এই ডিজিটাল মাত্রার মাধ্যমে অতীতের এই ব্যক্তিদের মুখচ্ছবি সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে৷ নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও সেগুলির ফলাফলের ভিত্তিতে আমরা এই মানুষগুলির জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারি৷''

১৮০৯ সালের ৩১শে মে চেগার লড়াই হয়েছিল৷ এক দিনের সেই সংঘর্ষে প্রায় ৪,০০০ সার্ব ও প্রায় ১০,০০০ অটোমান যোদ্ধা নিহত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়৷ অনেক প্রাণহানি সত্ত্বেও অটোমান সৈন্যরা শেষ পর্যন্ত সার্বদের মারাত্মকভাবে পরাজিত করেছিল৷ বিজয়ী বাহিনী সার্বদের ভয় দেখাতে মাথার খুলি দিয়ে এক টাওয়ার তৈরি করে৷ নিহত যোদ্ধাদের মাথার খুলি সেখানে রাখা হয়েছিল৷

‘স্কাল টাওয়ারের নতুন মুখ' নামের প্রকল্পের মাধ্যমে নাতাসা সারকিচ ও তাঁর টিম ব্যতিক্রমি এই সৌধের পরিচিতি আরো বাড়াতে চায়৷ নাতাসা বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পেরেছি, যে এই স্কাল টাওয়ার যথেষ্ট পরিচিত নয়৷ এমনকি স্লোভেনিয়ার কয়েকজন তরুণ সহকর্মীও সে বিষয়ে জানতেন না৷ আমি বুঝেছিলাম, যে শুধু মুখচ্ছবি ফুটিয়ে তোলাই আমাদের একমাত্র কাজ নয়, এই সৌধটিকে আরো বেশি দৃশ্যমান করে তোলাও জরুরি৷''

প্রকল্প শেষ হলে দর্শকরা এক স্ক্রিনে চেলে টাওয়ারে রাখা খুলির মালিকদের মুখচ্ছবি দেখতে পারবেন৷ প্রায় ২০০ বছর পর সেই মানুষগুলি আবার নিজেদের চেহারা ফিরে পাবেন ও ইতিহাস তুলে ধরতে পারবেন৷

ইয়েলেনা জুকিচ-পেজিচ/এসবি