1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিয়োগ দুর্নীতিতে অপরাধীদের সাজা হবে: উপেন বিশ্বাস

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৯ এপ্রিল ২০২৩

ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি উদঘাটন করেছেন তিনি। লালুপ্রসাদ যাদব জেলে গিয়েছেন তারই তদন্তের কারণে। সাবেক সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গের নিয়োগ দুর্নীতির অনেককে আইনের আওতায় আনতে ভূমিকা রাখছেন। তার সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে

https://p.dw.com/p/4QhsR
উপেন বিশ্বাস বলেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠের বাড়িতে টাকা মজুত হলো, সেটা সরকার জানবে না, এটা কেমন করে হয়?
উপেন বিশ্বাস বলেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠের বাড়িতে টাকা মজুত হলো, সেটা সরকার জানবে না, এটা কেমন করে হয়?ছবি: Payel Samanta/DW

ডয়চে ভেলে: বিহারের মুখ্যমন্ত্রীকে দুর্নীতির দায়ে জেলে পুরে কর্মজীবনে সারা ভারত জুড়ে আপনি আলোচনায় এসেছিলেন৷ এখন পশ্চিমবঙ্গে যখন নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় চলছে, তখনও বারবার উঠে আসছে আপনার নাম। শুরুতে একটু বলবেন, বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগটা কী ছিল? তার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে জেলে পুরতে কতদিন সময় লেগেছিল?

উপেন বিশ্বাস: পাটনা হাইকোর্টের নির্দেশে আদালতের নজরদারিতে পশুখাদ্য মামলার সিবিআই তদন্ত শুরু হয়। তখন আমি সিবিআইয়ের পূর্বাঞ্চলের যুগ্ম অধিকর্তা ছিলাম। এক্ষেত্রে পশু খাদ্যের জন্য বিপুল টাকা বরাদ্দ হলেও আদৌ কোনো পণ্য সরবরাহ করা হতো না। পশুখাদ্য না দিয়েই সরবরাহকারীরা টাকা পেয়ে যেতো। ১৯৯৬ সালে লালুপ্রসাদের নামে মামলা দায়ের হয়। এক বছরের মধ্যে আমরা তার নামে চার্জশিট পেশ করি। এখানে উল্লেখযোগ্য এটাই যে, তাকে আমরা সিবিআই হেফাজতে নিইনি। জেল হেফাজতে রেখেই জেরা করে গিয়েছি। ১৯৯৭ সালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সাত বছর বাদে লালুপ্রসাদ দোষী সাব্যস্ত হন। প্রভাবশালী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই সাত বছর সময়টা কিন্তু কম। সাধারণভাবে প্রভাবশালীরা বিচার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার জন্য হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে নানা বিষয়ের উত্থাপন করতে থাকেন। তাতে অনেক দেরি হয়ে যায়।

সেই দুর্নীতিতে অনেকগুলি মামলা নিয়ে আপনাদের কাজ করতে হয়েছিল।

পশুখাদ্য সংক্রান্ত অভিযোগে ৭০-৭১ টা মামলা হয়েছিল। সাতটি মামলার আসামি ছিলেন লালুপ্রসাদ। ৭০টি মামলারই দোষীদের সাজা হয়। অর্থাৎ ১০০ শতাংশ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা গিয়েছে। এজন্য বিপুল আয়োজন করতে হয়েছিল। ৬০-৭০ জন অফিসারকে বিহারে এনে আমাকে তদন্ত চালাতে হয়েছে। শুধু সিবিআই নয়, এটা পৃথিবীতেই রেকর্ড!

সিবিআই কর্মকর্তা হিসেবে স্মরণীয় কিছু কাজ করে আপনি অবসরে গেলেন। একসময় রাজনীতিতেও এলেন। বর্তমান শাসক দল তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। এই পর্বটি সম্পর্কে একটু জানতে চাই।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীনই তার সঙ্গে আমার আলাপ। ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০০১ সালে আমার অবসরের পর এক বছরের জন্য চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করে সুপ্রিম কোর্ট। সেই বছর থেকেই মমতা প্রতিটি নির্বাচনের আগে আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য অনুরোধ করতেন। আমি রাজি হতাম না। কিন্তু ২০১১ সালে পরিবর্তনের আন্দোলনের সঙ্গে আমি জড়িয়ে পড়ি। বিবেকের ডাকেই মমতার পাশে দাঁড়াই। বিশেষত মরিচঝাঁপির গণহত্যা নিয়ে আমার ক্ষোভ ছিল। মমতাই আমাকে পরিবর্তনের সাথী হওয়ার অনুরোধ করেন।

বাগদা কেন্দ্রে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন। সহজেই জয় পেয়েছিলেন

হ্যাঁ, আমি মমতাকে বলি বাগদার মানুষরা বছরখানেক ধরে আমার কাছে আসছে। তাদের অনুরোধ, আমি যেন ওই কেন্দ্রেই ভোটে লড়ি। কিন্তু সেখানে একজন বিধায়ক আছেন। তখন মমতা বলেন, আপনি যে কেন্দ্রে চান, সেখানেই লড়বেন। কিন্তু ২০১৬ সালে আমি ভোটে লড়তে চাইনি। বাগদায় তৃণমূলেরই একটা গোষ্ঠী আমাকে হারাতে উঠেপড়ে লেগেছিল। এটা মমতাও জানতেন। তবুও আমাকে লড়তে হয়। কিন্তু আমি দলের কাছ থেকে ভোটে লড়ার জন্য টাকা নিইনি। সেই সময় সিপিএম নেতা গৌতম দেবও বলেছিলেন, সব বিধায়ককে সারদার টাকা দেওয়া হয়েছে, শুধু উপেন বিশ্বাস নিতে চাননি।

বাগদায় হারের পর নতুন ভূমিকায় আপনাকে দেখা গিয়েছিল। আপনাকে এসসি-এসটি বোর্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়। হারের পর দল ছাড়তে চেয়েছিলেন বলে শোনা যায়।

আমি তেমনটাই ভেবেছিলাম। বাগদায় আমি হারার আড়াই ঘণ্টার মধ্যে মমতা আমাকে ফোন করেন। বলেন, ক্যাবিনেট মন্ত্রীর পদমর্যাদায় আপনি সরকারের সঙ্গে থাকবেন। মুখ্যমন্ত্রী যদি ফোন করে একথা বলেন, তার প্রস্তাব নাকচ করা যায় না। আমি রাজি হলাম।

এনআরসি-র সূত্রেই কি দলের সঙ্গে দূরত্ব?

কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব আইন আনার পর আমি তাকে সমর্থন করি। এ ব্যাপারে সংশোধনী চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখি। তৃণমূল এই আইনের বিরোধিতা করে। আমার সঙ্গে দলের মতপার্থক্য হওয়ায় আমি তৃণমূল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। ২০২১-এর এপ্রিলে তৃণমূল ছাড়ি। সেই বছরের বিধানসভা ভোটে মমতা আমাকে নিরাপদ আসন থেকে জিতিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। অনেকের মনে হয়েছিল, আমি বিজেপিতে যোগ দিতে পারি। কিন্তু আমি আর মমতার প্রস্তাবে রাজি হইনি।

'সারদা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করার সমস্যা আছে'

লালুপ্রসাদের বিরুদ্ধে তদন্ত দিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলাম। পশ্চিমবঙ্গে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত নিয়োগ দুর্নীতি। ক্ষেত্রে তৃণমূল দাবি করছে, এর সঙ্গে দল সরকারের যোগ নেই। এটা কয়েকজন ঘটিয়েছেন। এই দাবি সম্পর্কে কী বলবেন?

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। ১২ বছর তৃণমূলের মহাসচিব ছিলেন। যিনি মুখ্যমন্ত্রী, তিনি দলের সর্বোচ্চ নেত্রী। কেউ বিধায়ক, কেউ সংগঠনের নেতা, কেউ বা ব্লক প্রেসিডেন্ট। তাহলে দল এবং সরকার উভয়ই এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠের বাড়িতে টাকা মজুত হলো, সেটা সরকার জানবে না, এটা কেমন করে হয়?

আবার দেখুন, আদালত চাকরি বাতিলের পর মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হলো, যারা অসৎ উপায়ে চাকরি পেয়েছে, তাদেরনিয়োগ বাতিল করা হবে না।তাহলে কে দায়ী? টাকা দিয়ে যে চাকরি পেয়েছে, তাকে যদি আপনি সমর্থন করেন,  তাহলে আমি বলতে পারি আপনিও বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশীদার। কোথায় দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি?

পরীক্ষায় পাশ করেও হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থী চাকরি পাননি। অনেকের চাকরির বয়স চলে গেছে, অনেকের চলে যাচ্ছে। তাদের জায়গায় পরীক্ষায় পাস না করা কিংবা পরীক্ষাই না দেওয়া অসংখ্য মানুষ টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছেন। যারা তাদের চাকরি দিয়েছেন, তাদের একজনের নাম আপনি দিয়েছিলেন 'সৎ রঞ্জন'। সম্প্রতি তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার বিরুদ্ধে একটি এলাকারই শতাধিক ব্যক্তিকে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেবার অভিযোগ তাকে কেন আপনি সব বলেছিলেন আমাদের পাঠকদের একটু বুঝিয়ে বলবেন?

২০১১ সালে আমি বাগদা কেন্দ্রের বিধায়ক নির্বাচিত হই। ২০১২ সালে জনসংযোগের সময় একজন অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী আমার কাছে বিষয়টি জানান। আমি আমার দলের ছেলে-মেয়েদের জিজ্ঞেস করে দেখি ওরাও জানে। পরে তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাই আমাকে বলেছিল, ওই ব্যক্তি টাকা নিয়ে চাকরি দেয়। চাকরি দিতে না পারলে টাকা ফেরত দেয়। দু বছরের বেশি চাকরি না হলে টাকা সুদসহ ফেরত দেয়। সে কারণেই ওর নাম দিই 'সৎ রঞ্জন' যে আসলে চন্দন মণ্ডল। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কেও আমি আদালতে বলেছি, এটা আমার কাছে একটা রূপকথার মতো। যখন ঠিক করি যে, আমি আর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকবো না, তখন বিবেকের ডাকে এই বিষয়টা বলার সিদ্ধান্ত নেই। যদিও সরাসরি নয়, সৎ রঞ্জনের রূপকথা হিসেবে।

এই রঞ্জনের কথা আপনি আগেই জানতে পেরেছিলেন, তাহলে এত দেরিতে তার কথা প্রকাশ করলেন কেন?

অনেকে এই প্রশ্ন তুলেছে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ২০১২ সালেই আপনি এফআইআর করলেন না কেন? তাকে যে উত্তর দিয়েছি, সেটাই আপনাকে বলছি। দলের তরফে পুলিশ-প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের ভার নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাতেই থাকে। আমি সেই ক্ষমতার অধিকারী ছিলাম না। আমার কথা থানার কনস্টেবলও শুনতো না! এলাকার শীর্ষ আমলা থেকে পুলিশ অফিসার সবাই চন্দনের কথা জানতো। এমনকি মুখমন্ত্রীর এক ভাইও জানতেন। তিনি চন্দনের কালীপুজোতেও গিয়েছিলেন। বলা হতো, সবাই ওর কাছ থেকে 'খেয়েছে'। এই 'খেয়েছে' কথাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আর এখন সবাই এই দুর্নীতি চক্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন।

ঠিক। একটা গ্রামের মানুষ কত সহজে বলে দিচ্ছে, নিয়োগ দুর্নীতির মাস্টার প্ল্যান সরকার তৈরি করেছে। কিন্তু আমরা সবটা বলতে পারি না। আমাদের প্রতিষ্ঠা, নিরাপত্তার কথা ভাবি। বোঝার চেষ্টা করি, সাক্ষ্য প্রমাণ আছে কিনা। আমরা জানলেও সব কথা বলতে পারি না। এই গোপন করার একটা কষ্ট আছে।

সেই 'সৎ রঞ্জন' ওরফে চন্দন মণ্ডল গ্রেপ্তার হওয়ার পরে দাবি করেছেন, আপনি নাকি আপনার নিজের কিছু মানুষকে তার মাধ্যমে চাকরি দিতে চেয়েছিলেন। তা হয়নি বলেই নাকি চন্দনকে ফাঁসিয়েছেন। তার এই দাবি সম্পর্কে কী বলবেন?

একজন অভিযুক্ত অনেক কথাই বলতে পারে। একেবারেই অবান্তর বিষয়। চন্দন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমরা পরস্পরকে চিনিও না। আর আমি সিবিআইতে থাকার সময় দেখেছি, অপরাধীরা খড়কুটোর মতো কোনো একটা বিষয়কে আঁকড়ে ধরে রক্ষা পেতে চায়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

দুর্নীতির তদন্ত ঘিরে বিস্তর হইচই হচ্ছে।  সারদা, নারদ কেলেঙ্কারির সময়ও হয়েছিল। কিন্তু সেসব মামলার কোনো নিষ্পত্তি হলো না। কেন এমনটা হলো যদি বলেন।

সারদা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করার সমস্যা আছে। এক্ষেত্রে নথিপত্রের অভাব আছে। সে কারণে চূড়ান্ত ট্রায়াল শুরু করা যাচ্ছে না। নারদ মামলায় অভিযুক্তরা টাকা চাননি। তাদের স্যামুয়েল ম্যাথু টাকা দিয়েছেন। এটা আপনাদের ভাষায় 'স্টিং অপারেশন'। আমরা বলি 'ট্র্যাপ'। সিবিআই এর অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই ধরনের 'ট্র্যাপ' কেসের ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা দোষী সাব্যস্ত হয় না। বেকসুর খালাস হয়ে যায়। আমার কাছে সারদা এবং নারদ মামলা 'ক্লোজড চ্যাপ্টার'।

বিহারের দুর্নীতির পর্দাফাঁস করেছেন আপনি। এখন পশ্চিমবঙ্গের দুর্নীতির তদন্ত নিবিড়ভাবে দেখছেন। বলা ভাল, আপনি এই তদন্তকে দিশা দেখিয়েছেন। বিহার বাংলার পরিস্থিতির মধ্যে পার্থক্য কতটা?

আমি তদন্ত প্রক্রিয়ার কথা বলতে পারি। বিহারের সাধারণ মানুষ আমাদের নানা ভাবে তদন্তে সহযোগিতা করেছে। লালুপ্রসাদ যাদবের সরকার বা দল তদন্তে বাধা দেয়নি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সিবিআই কি ততটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে? নিয়মিত তাদের আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে। হাইকোর্টের নির্দেশে যে তদন্ত হচ্ছে তাতে সহযোগিতা করা কি সরকারের কর্তব্য নয়? এখানে সরকার ও দল বিরোধিতা করছে। এটা গণতন্ত্রে কাম্য নয়। বিহারে আমাকে তদন্ত করতে দেয়া হয়নি, এটা কখনো বলতে পারিনি। এটাও বলব, এখানে সংবাদমাধ্যম তার ভূমিকা পালন করেনি। দুর্নীতিকে সামনে আনাই তাদের কাজ। আপনি ভয় পেয়ে বা অন্য কোন স্বার্থে যদি দুর্নীতিকে চাপা দেন তাহলে আপনারও অপরাধ থেকে যায়।

চাকরি দুর্নীতির তদন্ত শেষ করে দোষীদের ধরতে সিবিআইয়ের আর কী কী করা উচিত বলে মনে করেন?

যে মামলাগুলিতে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের আভাস আছে, প্রভাবশালীরা যুক্ত আছেন, সেই মামলাগুলোর দ্রুত চার্জশিট করে বিচার প্রক্রিয়া চালু হোক। বেআইনিভাবে নিযুক্ত হাজার হাজার প্রার্থীর পিছনে দৌড়াতে হবে না। আমি দায়িত্বে থাকলে গোটা রাজ্য থেকে ৬০ জনকে বেছে নিয়ে তালিকা তৈরি করতাম। তার উপরের পর্যায়ে মন্ত্রী থেকে পর্ষদ-বোর্ড-কমিশনের কর্তাদের নাগাল আপনি পেয়ে গিয়েছেন। ওই ৬০ জনের বিষয়টিকে হাতিয়ার করে আমার চেষ্টা হবে আর তিন-চার মাসের মধ্যে চার্জশিট দিয়ে দেয়া। আর এখন সুবিধা রয়েছে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের। বছর দুই-একের মধ্যেই দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া সম্ভব। সাত বছর সময় লাগবে না। 

রাজ্য সরকার এবং রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা না থাকায় সিবিআই তদন্তে ভরসা করা হয়। সিবিআই- যদি তদন্তে এত সময় নেয় বা তদন্ত শেষ করে দোষীদের শাস্তি দিতে না পারে, তাহলে মানুষ সুবিচার পাবে কী করে?

মনে রাখবেন নিয়োগ দুর্নীতির মামলা কিন্তু সারদা-নারদের মতো নয়। এখানে পর্যাপ্ত নথিপত্র আছে। যারা অপরাধী তাদের সাজা হবেই। কিন্তু সেজন্য সময় লাগবে। আর যারা গান্ধীমূর্তির পাদদেশে মাসের পর মাস অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের হতাশার কারণ নেই। আদালত চাকরি বাতিল করছে, সেই শূন্যস্থানে যোগ্যদের চাকরি দিতে হবে সরকারকে। দুর্নীতির তদন্ত কবে শেষ হবে, সেদিকে আন্দোলনকারীদের তাকিয়ে থাকতে হবে না।

উপেন বিশ্বাস এখন তারকার মর্যাদা পাচ্ছেন। আরো একবার। তা হলে আবার কি রাজনীতিতে ফিরবেন? ফিরলে রাজনীতির নতুন ইনিংস কোন দলের হয়ে খেলবেন?

আমি ঠিক করেছি আর সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেবো না। রাজনীতির অভিজ্ঞতা আমার হয়ে গিয়েছে। কোনো দলের হয়ে ভোটে লড়বো না।