সাত খুনের সাজা বহাল
২৪ জুলাই ২০১৪নিহত হাফিজউদ্দিনের ভাই রিয়াজউদ্দিন আহমেদ রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা খুব একটা খুশি হতে পারিনি৷ ওই হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আবদুল আজিজ মিয়ার সাজা বাড়ানো হলে খুশি হতাম৷'' নিম্ন আদালত রায়ে আবদুল আজিজের ১০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছিলেন৷ রিয়াজউদ্দিন বলেন, ‘‘ওই খুনের নির্দেশদাতা ছিলেন আবদুল আজিজ৷ তার সর্বোচ্চ সাজা হলে আমরা খুশি হতাম৷''
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন আবদুস ছালাম ওরফে মতি ও জাহিদ হোসেন ওরফে নাটকা বাবু৷ তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন৷ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জন হলেন আবদুল আলিম ওরফে শাহীন, মুন্না, কালু ওরফে কাইল্যা, দেলোয়ার হোসেন ওরফে আন্ডা, আমির হোসেন ওরফে আমিরা, মাহাতাব হোসেন, মনির পাটোয়ারী, দিল মোহাম্মদ ওরফে মতি ও মোজাম্মেল৷ এদের মধ্যে প্রথম পাঁচজন কারাগারে, পরের দুজন জামিনে ও শেষ দু'জন পলাতক৷ আর আবদুল আজিজকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ তিনি জামিনে আছেন৷ আদালত আবদুল আজিজসহ তিন আসামিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন৷
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ৩০শে জানুয়ারি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হুমায়ুন কবির বিজয়ী হন৷ পরদিন তার সমর্থকরা বিজয় মিছিল বের করলে লালবাগের নবাবগঞ্জ রোডে পরাজিত প্রার্থী বিএনপি সমর্থিত আব্দুল আজিজ মিয়ার সমর্থকরা এলোপাতাড়ি গুলি চালায়৷ ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে ৬ জন ও পরে হাসপাতালে আরো একজন মারা যান৷ সেই সময়ে এই ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে৷ খুনিদের বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনও হয়৷
নিহতরা হলেন লালবাগ এলাকার দেলোয়ার, গাজী, নজরুল, আনোয়ার, হাফিজউদ্দিন, আজিজ ও শাহ আলম৷ ঘটনার পর তখনকার বিজয়ী কমিশনার হুমায়ুন কবির ১৯ আসামির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৭০ থেকে ৮০ জনের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন৷ তখন থেকে মামলাটি সেভেন মার্ডার হিসেবে পরিচিতি পায়৷ মামলায় দণ্ড পাওয়া সবাই বিএনপি নেতা আবদুল আজিজ মিয়ার কর্মী ও সমর্থক৷
ঘটনার পর সাড়ে ৩ মাস তদন্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ১৯৯৪ সালের ১৪ মে ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে৷ ১লা আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়৷ বিচার চলাকালে আসামি আবদুল মজিদ মৃত্যুবরণ করেন৷ আবদুল মজিদ মামলার অন্যতম আসামি আজিজের বাবা৷
জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ও বিশেষ জেলা জজ আদালত ২০০৮ সালের ৭ই মে রায় ঘোষণা করেন৷ রায়ে দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, ৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আট আসামিকে খালাস দেয়া হয়৷ নিম্ন আদালতের রায়ের পর পলাতক দুই আসামি ছাড়া অপর আসামিরা আপিল করেন৷ ডেথরেফারেন্স শুনানির জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে৷ চলতি মাসের শুরুতে ডেথরেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়৷
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির উল্লাহ বলেন, অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের সাজার রায় বহাল রেখেছেন৷ আসামিদের ডেথরেফারেন্স মঞ্জুর ও আপিল খারিজ করে এই রায় দেয়া হয়েছে৷ তবে রায়ে খুশি নন আসামিপক্ষের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান৷ তিনি জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করা হবে৷ মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই আসামির জরিমানার আদেশ বাতিল করা হয়েছে৷ জামিনে থাকা তিনজনকে ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে৷ আসামিপক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, খুরশীদ আলম খান ও এ এস এম শাজাহান৷