1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাউথ আফ্রিকায় শেষ আফগান ‘স্বপ্নযাত্রা’

১০ নভেম্বর ২০২৩

আহমেদাবাদে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রান তুলেছিল আফগানিস্তান৷ সেই রান ৪৭.৩ ওভারেই পেরিয়ে গেছে আফ্রিকা, ৫ উইকেটের জয়ে শেষ করেছে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব৷

https://p.dw.com/p/4YgTY
Indien | ICC Men's Cricket World Cup | Afghanistan v Südafrika
ছবি: Ajit Solanki/AP/picture alliance

সাউথ আফ্রিকার সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই, আর আফগানিস্তানের সেমিফাইনাল স্বপ্নও এই ম্যাচের আগেই কার্যত শেষ৷ তবে আফগানদের সামনে সুযোগ ছিল এবার তাদের বিশ্বকাপ অভিযান জয় দিয়ে শেষ করার৷ আশা জাগিয়েও সেটা তারা পারেনি বটে, তবে বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে তারা বিদায় নিচ্ছে মাথা উঁচু করেই৷ সেমিফাইনালের স্বপ্নটা অধরা থেকে গেছে, তবে ভারত থেকে আরও বড় স্বপ্নের রেশ নিয়ে তারা ফিরতে পারছে দেশে৷

সত্যিকার অর্থে এই বিশ্বকাপে যদি কোনো চমকে দেওয়া দল থাকে, সেটা আফগানিস্তানই৷ আগের দুই বিশ্বকাপে যাদের মাত্র একটি জয়, তারাই এই বিশ্বকাপে হারিয়েছে তিন সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলংকাকে৷ সাথে নেদারল্যান্ডসসহ চার জয়ের পর সেমির স্বপ্নও ছিল বাস্তব৷ অস্ট্রেলিয়ার সাথে জয় পেলে হয়তো সেটাও হয়ে যেত, হয়নি গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় এক ইনিংসের জন্য৷ তবে ম্যাক্সওয়েল যে ধাক্কা দিয়েছেন, আফ্রিকার সাথে সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে তারা লড়াই করেছে এই ম্যাচেও৷ সেটার বড় কৃতিত্ব আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের৷

এই বিশ্বকাপের আগে আট ওয়ানডেতে ওমরজাইয়ের রান ছিল ১৩৭৷ তিনি আজ আরেকটু হলেই পেয়ে যেতেন নিজের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি৷ এই বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের হয়ে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটাও পেতে পেতে পাওয়া হয়নি, ৯৭ রানে থামতে হয়েছে তাকে৷

সেঞ্চুরিটা ওমরজাইয়ের হয়তো প্রাপ্য ছিল৷ নিজের জন্য তো বটেই, আফগানিস্তানের জন্যও৷ নিজেদের দেশে এখন পর্যন্ত একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচও যারা খেলতে পারেনি, অনুশীলন-প্রস্তুতি সবকিছু নিতে হয় দূরের আমিরাতে- তাদের জন্য বিশ্বকাপে ভালো করাটাই তো দুর্দান্ত একটা ব্যাপার৷ আর নব্বই দশকের শুরুতেও যাদের কোনো ক্রিকেট বোর্ড ছিল না, যাদের সবচেয়ে বড় তারকা রশিদ খানের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ক্রিকেট-কোচিং নেই, যাদের ক্রিকে্টের শুরুটাই শরণার্থী শিবিরের অনিশ্চিত ও টানাপোড়েনের দিনগুলো থেকে- তাদের জন্য এই বিশ্বকাপের অর্জন রীতিমতো রূপকথাই৷

তবে সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়ে মধুরেণ সমাপয়েৎ হলে সেই রূপকথার গল্পটা আরও একটা ক্লাইম্যাক্স পেত৷ সেটা হয়নি, তবে আফগানরা বিনা লড়াইয়ে আত্মসমর্পণ করেনি৷ আফগান স্পিনাররা ভালোমতোই চেপে ধরেছিলেন প্রোটিয়া ব্যাটারদের৷ এই টুর্নামেন্টে রান তাড়া করতে গিয়ে একবার হেরেছে আফ্রিকা, আরেকবার হারতে হারতে জিতেছে৷ আজ আগের ম্যাচের মতো অতোটা খাবি খেতে হয়নি, কিন্তু জয়টা খুব সহজেও আসেনি৷ রেসি ভ্যান ডার ডুসেন না থাকলে আজ গল্পটা অন্যরকমও হতে পারত৷

ভ্যান ডার ডুসেন যখন ক্রিজে আসেন, তার আগে আফ্রিকা পেয়ে গিয়েছিল দারুণ একটা শুরু৷ ম্যাচটা যে এতদূর গড়াবে, কুইন্টন ডি ডক ও টেন্ডা বাভুমাদের শুরু কিন্তু সেটা বলছিল না৷ ডি কক স্বপ্নের মতো একটা বিশ্বকাপ কাটাচ্ছেন, আজও শুরু থেকে বড় কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন৷ ওমরজাইকে ছয় মেরে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন আজও তিনি ছন্দে আছেন৷ অন্য পাশে বাভুমা অবশ্য বেশ ভুগছিলেন তার হ্যামস্ট্রিংয়ের জন্য, দৌড়াতেই রীতিমতো কষ্ট হচ্ছিল তার৷ শেষ পর্যন্ত ২৮ বলে ২৩ রান করে মুজিব উর রেহমানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে এলেন ডিপ স্কয়্যার লেগে৷ ১১ ওভারের মধ্যে তখন ৬৪ রান তুলে ফেলেছে আফ্রিকা৷

দুই ওভার পর উদযাপনের আরও বড় উপলক্ষ পেয়ে গেল আফগানরা৷ এবার ডি কক মোহাম্মদ নবীকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে হলেন এলবিডব্লু, ফিরে গেলেন ৪১ রানে৷ আম্পায়ার অবশ্য আউট দেননি, কাজে এসেছে নবীদের রিভিউ৷ ভ্যান ডার ডুসেন আর এইডেন মার্করাম এরপর দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন৷ এমনকি ২৫ রান করে যখন মার্করাম আউট হলেন তখনও ঈশান কোনে মেঘ দেখতে পায়নি আফ্রিকা৷ সেটা একটু একটু দেখতে পেল ক্লাসেন ১০ রানে রশিদ খানের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার পর৷ ১৩৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আফ্রিকা তাদের সহজ লক্ষ্যটা তখন খানিকটা কঠিন মনে করাচ্ছিল৷

এরপর ডেভিড মিলার আর ডুসেন মিলে আর বিপদ হতে দেননি৷ দুজন যখন মোটামুটি থিতু তখন আবার নবীর আঘাত, এবার তাকে ২৪ রানে ফিরতি ক্যাচ দিলেন মিলার৷ ১৮২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে এবার হয়তো কিছুটা অস্বস্তি আফ্রিকার ড্রেসিংরুমে৷

এরপর অ্যান্ডাইল ফেহলেকায়োকে নিয়ে ধীরেসুস্থে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন ডুসেন৷ সিঙ্গেল নিয়েই একটু একটু করে জয়ের বন্দরে তরী ভেড়াচ্ছিলেন দুজন৷ শেষ ২৪ বলে ২৩ রান যখন দরকার, তখনও দুজন দেখেশুনেই খেলছিলেন৷ শেষ পর্যন্ত নাভিন উল হকের ৪৮তম ওভারকেই ম্যাচ শেষের জন্য বেছে নিলেন ফেহলেকায়ো৷ ছয়, চার, ছয় মেরে শেষ করে দিলেন আফগানদের সব আশা৷ তবে ডুসেনই ছিলেন দুই দলের আসল পার্থক্য৷ ৯৫ বলে ৭৬ রানের ইনিংসটা ম্যাচসেরার পুরস্কারও এনে দিয়েছে তাকে৷ এই বিশ্বকাপেই আগে দুই সেঞ্চুরি ছিল তার, তবে রান তাড়ায় ঠান্ডা মাথার এই ইনিংসটা পরিস্থিতির বিচারে সেঞ্চুরির মতোই মূল্যবান৷

Indien | ICC Men's Cricket World Cup | Afghanistan v Südafrika
জয়ের পর মাঠ ছাড়ছেন সাউথ আফ্রিকার ভ্যান ডার ডুসেন (ডানে) ও অ্যান্ডাইল ফেহলেকায়ো (বামে)৷ছবি: Ajit Solanki/AP/picture alliance

আজকের ম্যাচের মূল নায়ক যদি ভ্যান ডার ডুসেন হন, তবে পার্শ্বনায়ক অবশ্যই দুজন৷ একজন আফ্রিকার জেরাল্ড কোটজিয়া, চার উইকেট নিয়ে যিনি আফগান ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছেন৷ আরেকজনকে অবশ্য ট্র্যাজেডির নায়ক বলাই ভালো, আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ৯৭ রানের ইনিংসটাই স্বপ্ন দেখাচ্ছিল আফগানদের৷ দুর্ভাগ্য তাদের, সেটা জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি৷

অথচ আফগান দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহীম জাদরান শুরুটা ভালোই করেছিলেন, ৮ ওভারেই তুলে ফেলেছিলেন ৪১ রান৷ নবম ওভারেই স্পিনার কেশব মহারাজকে আক্রমণে নিয়ে এসেছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক টেন্ডা ওভারেই, প্রথম বলেই ব্রেকথ্রু মহারাজের৷ স্লিপে ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে ২২ বলে ২৫ রান করে ফিরে গেলেন গুরবাজ, আরো একটা ম্যাচে শুরু পেয়েও বড় স্কোর করতে পারলেন না৷

আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইব্রাহীম জাদরানও শুরুটা পেয়েছিলেন৷ কিন্তু সেটা আজ আর বড় করতে পারলেন না, কোটজিয়াকে হুক করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে, ফিরলেন ১৫ রান৷ অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদিও টিকলেন না বেশিক্ষণ, ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে খানিকটা পথ হারিয়ে ফেলেছিল আফগানরা৷

এরপর রহমত শাহকে নিয়ে কিছুটা হাল ধরেছিলেন ওমরজাই৷ দুজনের ৩৯ রানের জুটি ভাঙে এনগিডির বলে রহমত ক্যাচ দিলে, ফেলতে ফেলতেও সেটি শেষ পর্যন্ত ধরে ফেলেন ডেভিড মিলার৷ ইকরাম আলী খিলও এরপর কোটজিয়ার বলে আউট হলে ১১২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে আফগানরা৷ খানিক পর সেটা হয়ে যায় ১১৬ রানে ৬ উইকেট, যখন মোহাম্মদ নবীও ফিরে যান এনগিডির বলে৷

তবে ওমরজাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন টেল এন্ডারদের নিয়ে৷ প্রথমে তাকে সঙ্গ দিয়েছেন রশিদ খান, ৪৪ রান এসেছে দুজনের সপ্তম উইকেট জুটিতে৷ এর মধ্যে ৭১ বলে ওমরজাই পেয়েছিলেন ফিফটি, এই টুর্নামেন্টে এটি তার তৃতীয়৷ এরপর নূর আহমেদ এসে ২৬ রানের ইনিংস খেলে আরও এগিয়ে দিয়েছিলেন আফগানদের৷ নূরের ক্যাচ ধরেই এই ম্যাচে ষষ্ঠ ডিসমিসাল হয়ে গেছে কুইন্টন ডি ককের, ছুঁয়েছেন বিশ্বকাপে এক ম্যাচে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও সরফরাজ আহমেদের গড়া সবচেয়ে বেশি ডিসমিসালের রেকর্ড৷

এরপর মুজিব ও শেষ ব্যাটসম্যান নাভিনকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন ওমরজাই৷ ইব্রাহীমের পর দ্বিতীয় আফগান ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির খুব কাছাকাছিও চলে গিয়েছিলেন৷ শেষ ওভারে চার রান করলেই পেয়ে যেতেন ওয়ানডেতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি, কিন্তু দুর্দান্ত এক শেষ ওভারে সেটা হতে দেননি রাবাদা৷ ৯৭ রানে অপরাজিত থেকে ‘এত কাছে, তবুও এতদূরের’ অতৃপ্তি নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরতে হয়েছে ওমরজাইকে৷

দিন শেষে সেই অতৃপ্তি সঙ্গী হয়েছে আফগানিস্তানেরও৷ আজ জয় পেলে এই বিশ্বকাপের গল্পটা আরও রঙিন হতে পারত তাদের৷ তবে যা হয়েছে, তা নিয়ে তারা গর্ব করতেই পারে৷ স্রোতের সাথে তো সবাই বৈঠা বাইতে পারে, কিন্তু বিরুদ্ধে বৈঠা বেয়ে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে কয়জন?

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আফগানিস্তান ৫০ ওভারে ২৪৪ (ওমরজাই ৯৭*, নূর ২৬, রহমত ২৬; কোটজিয়া ৪/৪৪; মহারাজ ২/২৫, এনগিডি ২/৬৯)

সাউথ আফ্রিকা ৪৭.৩ ওভারে ২৪৭-৫ (ভ্যান ডার ডুসেন ৭৬*, ডি কক ৪১, ফেহলেকায়ো ৩৯; নবী ২/৩৫, রশিদ ২/৩৭)

ফল: আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী

ম্যাচসেরা: রেসি ভ্যান ডার ডুসেন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য