1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংসদ আসলামুল হকসহ নদী দখলদার ৫৭ হাজার

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ ডিসেম্বর ২০২০

মিরপুরের সাংসদ আসলামুল হকের অবৈধ নদী ও জলাশয় দখলে কোনো বাধা না থাকলেও উচ্ছেদ হয়নি এখনো৷ বিআইডাব্লিউটিএ বলছে আপিল বিভাগে তার আবেদনের কোনো নিস্পত্তি হয়নি৷ কিন্তু আইনজীবী বলেছেন, ‘‘আপিল থাকলেও উচ্ছেদে কোনো বাধা নাই৷’’

https://p.dw.com/p/3mkb7
Bangladesch | Baggerarbeiten
ছবি: bdnews24

জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের হিসেব অনুযায়ী সারাদেশে নদী ও জলাশয় দখলদার ৫৭ হাজার ৩৯০ জন৷ আর এরমধ্যে ঢাকায় আট হাজার ৮৯০ জন৷ সারাদেশে এপর্যন্ত ১৮ হাজার ৫৭৯ জনকে উচ্ছেদ করা হয়েছে৷ ঢাকায় উচ্ছেদ করা হয়েছে এপর্যন্ত সাত হাজার ৭৭ জনকে৷ তবে ঠিক কি পরিমান নদী ও জলাশয় দখল হয়েছে তার সঠিক হিসাব তাৎকক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার৷ তিনি বলেন, ‘‘এর পরিমান কয়েক হাজার একর হবে৷'' 

‘‘আসলামুল হক এখনো আপিল করেননি’’

নদীরক্ষা কমিশন ঢাকা-১৪ (মিরপুর) আসনের সংসদ আসলামুল হকের আবেদনেই তার নদী ও জলাশয় দখলের পরিমান ৫৪ একর বলে হিসাব করেছে৷ আর এই হিসাব হাইকোর্টেও দাখিল করা হয়েছে৷ এরমধ্যে সরাসরি বুড়িগঙ্গা এবং তুরাগ নদী ১৩ একর, নদী বন্দরের (ল্যান্ডিং স্টেশন) সীমার জমি আট একর এবং বাকি জমি ড্যাপের আওতাভুক্ত ফ্লাড ফ্লো জোন৷ নদী দখল করে সেখানে তিনি ‘আরিশা প্রাইভেট ইকোনমিক জোন' এবং ‘ মায়িশা গ্রুপের' পাওয়ার প্লান্ট গড়ে তুলেছেন৷

গত মার্চে বিআইডাব্লিউটিএ উচ্ছেদ করতে গেলে আসলামুল হক বাধা দেন৷ উচ্ছেদের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে যান৷ গত সপ্তাহে হাইকোর্ট চূড়ান্ত শুনানি করে উচ্ছেদে কোনো বাধা নাই বলে জানিয়েছে৷

নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, গত সপ্তাহেই তারা বিআইডাব্লিউটিএ, ঢাকা জেলা প্রশাসন ও রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আসলামুল হকের দখল করা নদী ও জলাশয় উদ্ধার করার জন্য চিঠি দিয়েছে৷ কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘উচ্ছেদে যেহেতু কোনো বাধা নাই তাই আমরা দ্রুত উচ্ছেদ শুরু করতে বলেছি৷ তবে অগ্রগতি প্রতিবেদন আমরা পাইনি৷''

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে ঢাকার চার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলখ্যা নদীর অবৈধ উচ্ছেদ চললেও বিআইডাব্লিউটিএ এমপি আসলামুল হকের অবৈধ দখল উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি৷ তারা কারণ হিসেবে আপিল প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে৷

বিআইডাব্লিউটিএর চেয়াম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, ‘‘আমরা গত মার্চেই এমপি আসলামুল হকের নদী ও জলাশয় দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালাই৷ উচ্ছেদও করেছি৷ তবে তার ইকোনমিক জোন ও পাওয়ার প্ল্যান্ট উচ্ছেদের সময় তিনি বাধা দেন এবং আদালতে যান৷''
তিনি বলেন, ‘‘হাইকোর্টের পর আসলামুল হক এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন৷ তাই আইনগত প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আছে উচ্ছেদ করা সমীচীন মনে করছিনা৷ তিনি আরো দাবি করেন, বিআইডাব্লিউটিএর উচ্ছেদের দায়িত্ব আট একর, যেখানে নদী দখল করে প্রাইভেট ইকোনামিক জোন ও পাওয়ার প্লান্ট তৈরি হয়েছে৷ বাকি জায়গা উচ্ছেদের দায়িত্ব অন্যান্য সংস্থার৷

২০০৯ সালে নদী রক্ষায় আদেশ দেয় উচ্চ আদালত৷ আর রিটটি করেছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে৷ তিনি বলেন, ‘‘আসলামুল হক এখনো আপিল করেননি৷ আপিল করবেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন৷ আর হাইকোর্ট বলেছেন উচ্ছেদে কোনো বাধা নাই৷ আমার মনে হচ্ছে বিআইডাব্লিউটিএ আসলামকে সুবিধা করে দিচেছ৷ প্রতিষ্ঠানটির মধ্যে তার লোক আছে বলে মনে হচ্ছে৷ যারা নানা অজুহাত তৈরি করছে৷''

‘‘কমিশনের কথা দেশের যে কোনো সংস্থা মানতে বাধ্য’’

নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘কমিশনের কথা দেশের যে কোনো সংস্থা মানতে বাধ্য৷ এমনকি সরকারও৷ আসলামুল হকের অবৈধ দখল উচ্ছেদে কোনো বাথা নাই৷ তারপরও বিআইডাব্লিউটিএ যদি শেষ আদালত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায় সেটা তাদের ব্যাপার৷'' 

ঢাকার চারপাশের চারটি নদীতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে প্রায় ৯০ ভাগ অবৈধ দখল এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানান বিআইডাব্লিউটিএর চেয়ারম্যান৷ এর মধ্যে পুরনো ঢাকার সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের একটি কোল্ড স্টোরেজ, একটি গুদাম ও একটি ফিলিং স্টেশনও আছে৷ নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও নোয়াপড়াসহ সারাদেশে উচ্ছেদ অভিযান চলছে৷ নদীরক্ষা কমিশন সারাদেশের যে তালিকা দিয়েছে তা যাচাই বাছাই করেই এই অভিযান বলে তিনি জানান৷ তবে মামলা ও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে কিছু অবৈধ দখলদাদের তারা উচ্ছেদ করতে পারছেন না৷

ঢাকা শহরের চারপাশে উচ্ছেদের পর যাতে আবার নদী ও জলাশয় দখল না হয় সেজন্য ৮৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নও করছে বিআইডাব্লিউটিএ৷ এরমধ্যে রয়েছে নদীর সীমানা পিলার স্থাপন, ওয়াকওয়ে তৈরি, গার্ডেনিং, পথচারীদের বসার জায়গা ও ছোট ছোট বিনোদন পার্ক৷