1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিকের মেরুদণ্ড দেখলেই মামলা ঠুকে দাও

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কেন শাসকের বিরুদ্ধে খবর লিখলেই মামলা ঠুকে দেওয়া হচ্ছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে? বার বার একই সমাপতন, নাকি নেমেসিস।

https://p.dw.com/p/4Wcka
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ছবি: PRABHAKAR/DW

বছরকয়েক আগের লিক হয়ে যাওয়া একটি ভিডিও-র কথা মনে পড়ছে।বীরভূমে তৃণমূলের তৎকালীন দোর্দণ্ডপ্রতাপ সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দলীয় বৈঠকে জনৈক ব্যক্তিকে 'গাঁজা কেসে' গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিচ্ছেন। জনৈক বিরোধী শিবিরের। ফলে 'ভুয়া' গাঁজা কেস দিয়ে তাকে শ্রীঘরে ঢোকানোর বন্দোবস্ত। শ্রী মণ্ডল অবশ্য এখন নিজেই শ্রীঘরে, জেলের ভাত খাচ্ছেন।

ভুয়া কেসের ইতিহাস পশ্চিমবঙ্গে আগে ছিল না, এমন নয়। রাজনৈতিক শত্রুকে সবক শেখাতে ভুয়া কেসে গ্রেপ্তারের ঘটনা আগেও ঘটেছে। বিতর্কিত আইন এনে রাজনৈতিক বন্দিদের বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখার ইতিহাসও ভূভারত জানে। তবে গত এক যুগে বর্তমান শাসক দল ভুয়া কেস, ভুয়া অভিযোগের তালিকা কার্যত শিল্পের জায়গায় নিয়ে গেছে। অপছন্দ হলেই তাকে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে মাওবাদী বলে। মনে পড়ছে শিলাদিত্য চৌধুরীর কথা! মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করার জন্য তাকে মাওবাদী ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রশ্ন করার দায়ে রাতারাতি মাওবাদী বনে গেছিলেন প্রেসিডেন্সির এক ছাত্রী।

তখনো সাংবাদিকদের সরাসরি আক্রমণ করা হতো না। অপছন্দ হলে সাংবাদিকদের পিঠে লাগিয়ে দেওয়া হতো পক্ষপাতের তকমা। ইদানীং, তাদেরও গ্রেপ্তার করার 'চক্রান্ত' শুরু হয়েছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচী।

দেবমাল্যের কথায় ঢোকার আগে ২০২০ সালের ঘটনায় ফিরে যাওয়া যাক। ইইউটিউবে একটি চ্যানেল পরিচালনা করেন শফিকুল ইসলাম। সেখানেই রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন সুরজ আলি খান। ২০২০ সালের জুন মাসে মধ্যরাতে পুলিশ তাদের বাড়িতে হানা দেয়। দুই সাংবাদিক তো বটেই গ্রেপ্তার করা হয় শফিকুলের স্ত্রীকেও। অপরাধ, ওই দুই সাংবাদিক এক ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করেছেন।

পরবর্তী সময়েআদালত ওই দুই সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়ার কথা বলে। প্রশ্ন ওঠে অভিযোগ সত্য হলেও কী ব্ল্যাকমেলিংয়ের অপরাধে কোনো ব্যক্তিকে মাঝরাতে এভাবে গ্রেপ্তার করা যায়? একজন নারীকে এভাবে গ্রেপ্তার করা যায়? তারা তো দাগি অপরাধী নন! শফিকুলের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের সমাজ-রাজনীতিতে রীতিমতো আলোড়ন ফেলেছিল। বস্তুত, শাসকদলের দিকেই আঙুল উঠেছিল সে সময়। কারণ, তার কিছুদিন আগেই রাজ্যসরকারের দুর্নীতি নিয়ে খবর করেছিল। সে খবরের সত্যতা কতটা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। প্রয়োজনে শাসকদল তা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। কিন্তু ওই খবরের পরেই যখন সাংবাদিককে তুচ্ছ মামলায় মাঝ রাতে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন প্রশ্ন তৈরি হওয়া স্বাভাবিক যে, মামলাটি কি ভুয়া?

সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কার্যত দেখা গেল সাংবাদিক দেবমাল্যের ক্ষেত্রে। অবৈধ মদের কারবার নিয়ে খবর করেছিলেন দেবমাল্য। সেখানে শাসক এবং প্রশাসনের যুক্ত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ঠিক তার পরেই দেখা গেল জামিনঅযোগ্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হলো তাকে। প্রশ্ন ওঠে, বার বার এমন সমাপতন কি সত্যিই সম্ভব? সাংবাদিক বিশেষ কোনো খবর করলেই কীভাবে জামিন অযোগ্য অপরাধ করে ফেলে সে? কীসের ইঙ্গিতবাহী এই গ্রেপ্তার?

দেবমাল্য জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু তার জামিন সাংবাদিকের কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টার যথেষ্ট উত্তর নয়। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, রাজনৈতিক নেতারা যদি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে রক্ষাকবচ পেতে পারেন, তাহলে সাংবাদিকেরা পাবেন না কেন?

সমস্যা হলো, এই পশ্চিমবঙ্গের শাসকই ভিনরাজ্যে সাংবাদিক খুন হলে, সাংবাদিক নিগ্রহ হলে বড় বড় ভাষণ দেয়। সাংবাদিক-প্রেম দেখাতে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়। তারা ভুলে যান, শাসকের পুরস্কারের প্রয়োজন নেই সাংবাদিকদের। মাথা উঁচু করে সাংবাদিকতা করার পরিবেশটুকুই তাদের কাছে এক এবং একমাত্র পুরস্কার।

মাথা উঁচু করে সাংবাদিকদের জন্য সেই পরিবেশের আবহটুকু জারি রাখার সৎসাহসটাই আসলে নেই শাসকপক্ষের। কী কেন্দ্রে, কী রাজ্যে!