1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সর্বজনীন পেনশনের যত সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ আগস্ট ২০২৩

বাংলাদেশে চার ক্যাটাগরিতে সর্বজনীন পেনশন চালু হয়েছে। ১০ কোটি মানুষকে এই সুবিধা দেয়ার চিন্তা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার স্কিমটি চালু করা হয়।

https://p.dw.com/p/4VKeL
বাংলাদেশ অর্থ
ছবি: MD Mehedi Hasan/ZUMA Press/picture alliance

১৮ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য এই ব্যবস্থা। ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত পেনশন স্কিম খোলা যাবে।  কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে এই সুবিধা পাওয়া যাবে। যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি, তারাও এর আওতায় আসবেন, তবে শর্ত হলো, তাদের ১০ বছর চাঁদা পূর্ণ করতে হবে। ৬০ বছরের পর থেকে পেনশন পাওয়া যাবে। পেনশনের বিস্তারিত নিয়ম-কানুন সর্বজনীন পেনশন কতৃপক্ষের ওয়েব সাইটে দেয়া হয়েছে।

একটি এনজিওর প্রধান এ এইচ এম বজলুর রহমান সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধনের দিনেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য ‘প্রগতি' পেনশন স্কিম খুলেছেন। তিনি জানান, "এটা অনলাইনে খোলা খুব সহজ। আমি অনলাইনে খুলেছি। নিয়ম-কানুন খুবই সিম্পল। কোনো ঝামেলা নেই। সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট সময় লাগে।”

তার কথা, "অনেক দিন ধরেই সর্বজনীন পেনশন স্কিমের দাবি ছিল৷ সেটা এই সরকার পূরণ করেছে। এর জন্য আইন হয়েছে, বিধিমালা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। আমি মনে করি, এর মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে।”

নিয়ম-কানুন খুবই সিম্পল: বজলুর

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সায়মা সিদ্দিকা মনে করেন, "এটার অনেক বেশি প্রচার হওয়া প্রয়োজন। মানুষের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সবচেয়ে বেশি যাদের প্রয়োজন সেই নিম্ন আয়ের মানুষ যেন এটার সুবিধা পায়, সেটা নিশ্চিত করা দরকার। তাদের নামে যেন অন্যরা এই সুবিধা না নেয়।”

আর রেজাউল করিম পাটোয়ারি মনে করেন, "সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি দেশের মানুষের একটা নেতিবাচক মনোভাব আছে। সেটা কাটাতে পারলে মানুষ এই পেনশন স্কিমের প্রতি আগ্রহী হবে।” একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই তরুণ এখনো পেনশন স্কিমের প্রতি আগ্রহী নন। তিনি আরো একটু দেখেশুনে সিদ্ধান্ত নেবেন।

প্রাথমিকভাবে পেনশনের চারটি প্যাকেজ হলো প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা। প্রবাসীদের জন্য প্রবাস প্যাকেজে পাঁচ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা মাসে চাঁদা দেয়া যাবে। ১০ বছর পূর্ণ করলে যারা ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দেবেন, তারা মাসে পেনশন পাবেন ১৫ হাজার ৩০২ টাকা করে। তবে চাঁদা দেয়ার বছর যত বাড়বে, মাসিক পেনশনের পরিমাণও বাড়বে। এইভাবে প্রগতি হলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য। সুরক্ষা হলো স্বকর্ম এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের জন্য। আর ‘সমতা' স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য। সমতার ক্ষেত্রে মাসিক চাঁদা ৫০০ টাকা, সরকার দেবে ৫০০ টাকা। এই মাসিক এক হাজার টাকা কমপক্ষে ১০ বছর পূর্ণ হলে মাসিক পেনশন পাওয়া যাবে এক হাজার ৫৩০টাকা। ৬০ বছর পর আজীবন এই পেনশন পাওয়া যাবে।

তবে সামনে চ্যালেঞ্জ আছে: মনসুর

পেনশনের জন্য এখন পর্যন্ত দুই সদস্যের জাতীয় পেনশন কতৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইজদানি খানকে  অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। আর একজন সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে মো. গোলাম মোস্তফাকে। তিনিও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। এটা তারও অতিরিক্ত দায়িত্ব।

১০ সদস্যের পেনশন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে সভাপতি করে। আর্থিক কার্যক্রম আপাতত সোনালি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষের আলাদা কোনো অফিস নেই। অর্গানোগ্রামও তৈরি হয়নি। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারিও নিয়োগ দেয়া হয়নি। একটি ওয়েবসাইট চালু হয়েছে। সেখানে নিয়ম-কানুন দেয়া আছে। ফর্ম অনলাইনে পূরণের সুবিধা আছে। আবার ডাউনলোড করেও পুরণ করা যায়।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "উদ্যোগটি ভালো, তবে সামনে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। কারণ, এখনো অর্গানোগ্রাম ঠিক করা হয়নি। অফিস হয়নি। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়নি। যাকে পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান করা হয়েছে, তার এটা মূল কাজের অতিরিক্ত দায়িত্ব। কিন্তু এটা একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ। আরো বড় প্রস্তুতির প্রয়োজন হবে। সামনে নির্বাচন তাই হয়ত রাজনৈতিক কারণে এটা উদ্বোধন করা হয়েছে। আমরা মনে হয়েছে, প্রশাসনিক দিক দিয়ে এটার প্রস্তুতি পর্যাপ্ত নয়।”

তিনি বলেন, "আমরা জানি না, এর বিনিয়োগ পরিকল্পনা কী? কারণ, মানুষ যে টাকা দেবে, তার তো বিনিয়োগ পরিকল্পনা থাকতে হবে। তবে সামনে  কমপক্ষে ১০ বছর সময় আছে। ১০ বছরের আগে তো আর কেউ পেনশন পাচ্ছেন না। সরকার হয়ত এর আগেই সব কিছু ঠিকঠাক করে নেবে।”

অভিযোগের প্রতিকার কীভাবে পাবেন?: হেলাল

তার কথা, "মালয়েশিয়াসহ আরো কিছু দেশে পেনশনের টাকা নিয়ে কেলেঙ্কারির ঘটনা আছে। তাই সরকারের নিরাপত্তার বিষয়গুলো আরো স্পষ্ট করতে হবে। বাংলাদেশে এখন সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের টাকা নিয়ে হয়ারানির অনেক নজির আছে। সেরকম যাতে না হয় তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।”

"আর সবচেয়ে স্বচ্ছতার দাবি রাখে সমতা স্কিম। কারণ, এখানে সরকার সরসারি কন্ট্রিবিউট করবে। তাই প্রকৃত গরিব  মানুষ যাতে সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে,” বলেন এই অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার।

সিরডাপের পরিচালক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মো. হেলাল উদ্দিন মনে করেন, "বাংলাদেশের সরকারি মেশিনারিতে যে সমস্যা হয়, এখানে সেই সমস্যা হবে না- তার নিশ্চয়তা কে দেবে। সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। যারা স্কিমে চাঁদা দেবেন, তারা কোনো অভিযোগের প্রতিকার কীভাবে পাবেন? মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যাতে অটোমেটিক পেনশন পাওয়া যায়- এই বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা থাকতে হবে। কারণ, সরকারি পর্যায়ে পেনশন পেতে সরকারি চাকুরেদের দুরবস্থার কথা আমরা জানি। আর দুর্নীতি বিষয়টি কীভাবে সামাল দেয়া হবে?”

তার কথা, "এখনো যেহেতু এটার অবকাঠামো ও পরিচালনা কাঠামো পুরোপুরি দাঁড়ায়নি, তাই মানুষের মনে নানা প্রশ্ন এবং সংশয় থাকবে। সেগুলো দূর করতে হবে।”

এই ধরনের পেনশন স্কিমের প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকবে। তবে সেই আগ্রহ ধরে রাখতে হবে। আহসান এইচ মনসুর বলেন, "সঞ্চয় পত্রে শতকরা আট ভাগ মুনাফা পাওয়া যায়। ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট ও পেনশন স্কিম আছে। তাই সেগুলোর সঙ্গে তুলনা করে এই স্কিম যে সব দিক দিয়ে লাভজনক হবে, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সঠিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা এর জন্য খুবই জরুরি।”