গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যত
১৮ জুন ২০১৩গ্রামীণ ব্যাংক কমিশন মনে করে ব্যাংকটি সরকারি মালিকানায় নেয়া প্রয়োজন৷ তাই তাদের রিপোর্টে ব্যাংকে সরকারের শেয়ার ৫১ ভাগে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়েছে৷ বর্তমানে এই ব্যাংকে সরকারের শেয়ার ৫ ভাগ৷ যুক্তি হিসেবে কমিশন বলছে কোম্পানি আইন অনুযায়ী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারধারীদের নিয়ে বছরে একবার বার্ষিক সাধারণ সভা করা বাধ্যতামূলক৷ ব্যাংকের বর্তমানে নির্বাচিত ৫ লাখ ৪০ হাজার শেয়ারধারীকে নিয়ে বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করা অকল্পনীয় এবং ব্যয়সাপেক্ষ৷
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ব্যাংকটি সরকারের কব্জায় চলে যাবে৷ ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা এতদিন যারা ব্যাংকের মালিক হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন তারা আর মালিক থাকবেন না৷ তিনি বলেন বাংলাদেশের ৯৯ ভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানই অলাভজনক এবং ভর্তুকি নির্ভর৷ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পেশাদারি এবং দক্ষতার চরম অভাব লক্ষ্য করা যায়৷ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো লোকসান গুনছে৷ সেখানে দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার কথা সবার জানা৷ আর সেখানে আছে দলাদলি৷ তাই গ্রামীণ ব্যাংকের মতো একটি সফল প্রতিষ্ঠানকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হলে ব্যাংকটি ধ্বংস হয়ে যাবে৷ তাঁর আশা, কমিশন যাই সুপারিশ করুকনা কেন সরকার ব্যাংক, ক্ষুদ্র আমানতকারী এবং ঋণগ্রহীতাদের কথা চিন্তা করে আত্মঘাতী কোনো সিদ্ধান্ত নেবেনা৷
কমিশনের সুপারিশে গ্রামীণ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে কেবল নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেখে স্থানীয় পর্যায়ে গ্রামীণ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে৷ এর মানে হলো তারা স্থানীয় পর্যায়ে সব সিদ্ধান্ত নেবে৷ লাভ লোকসানের দায়ও থাকবে স্থানীয় শাখার উপর৷ আর স্থানীয় পর্যায়ে নতুন সংগঠন নিবন্ধনও করা যাবে৷ এই সুপারিশে মূলত গ্রামীণ ব্যাংকের মূল কাঠামোই ভেঙে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছে৷
এ প্রসঙ্গে ড. ইসলাম বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান কাঠামোতে কোনো ত্রুটি শনাক্ত করতে পারেনি কমিশন৷ আর প্রচলিত কাঠামোতেই ব্যাংক ভালোভাবে চলছে৷ তাই নতুন ধরণের কাঠামোর কথা বলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷ তিনি বলেন সুপারিশে পল্লি বিদ্যুত সমিতির মতো স্থানীয় পর্যায়ে যে সমিতি গঠন করার কথা বলা হয়েছে তা আর্থিক খাতে কার্যকর নয়৷ আর পল্লি বিদ্যুত সমিতি হলো গ্রাহকদের সমিতি৷ তারা নিয়ন্ত্রক নয়৷ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আলোকেই প্রতিষ্ঠান চলে৷ তাই গ্রামীণ ব্যাংককে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন সত্ত্বায় ভাগ করার যে সুপারিশ তা গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবেনা৷
ড. ইসলাম মনে করেন গ্রামীণ ব্যাংক কমিশন সরকারের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে সুপারিশ করেছে৷ আর এইসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে ৮৪ লাখ গ্রাহকের এই ব্যাংক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে৷ মনে রাখতে হবে গ্রাহকদের প্রায় সবাই দরিদ্র নারী৷ এই জনগোষ্ঠীকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া সরকারের উচিত হবেনা৷