1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকারি কর্মকর্তাদের খরচে লাগাম কি টানা যায়?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ জুলাই ২০২৩

সরকারি কর্মকর্তাদের খরচের লাগাম টানতে আবারো সক্রিয় হয়েছে সরকার। কিন্তু এর আগে সরকারের এই অর্থ সাশ্রয়ের প্রচেষ্টা তেমন কাজে আসেনি।

https://p.dw.com/p/4TMIp
Bangladesch Parlament
ফাইল ফটো৷ছবি: bdnews24.com

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এবার খরচ কমাতে আগের চেয়ে কঠোর সরকার। আরো কমপক্ষে এক বছর আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে৷’’

অর্থমন্ত্রণালয় রোববার এক পরিপত্রে বলেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন গাড়ি কেনা বন্ধ থাকবে৷ আর সরকারি কর্মকর্তারা শুধুমাত্র বিদেশি অর্থায়ন ছাড়া বিদেশ সফর করতে পারবেন না৷ ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দ ব্যয় করা যাবে না৷ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২০ থেকে ২৫ শাতাংশ ব্যয় সাশ্রয় করতে হবে৷ সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, কর্পোরেশন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে৷ বিশ্বের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷

২০২১-২২ অর্থবছরে শেষ দিকে মে মাসে একই ধরনে নির্দেশনা ছিলো৷ যা ২০২২-২৩ অর্থবছরেও বহাল ছিলো৷ কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর ঠেকানো যায়নি৷ তারা নানা অজুহাতে বিদেশ সফর করেছেন৷ নিষেধাজ্ঞার পরও কতজন কর্মকর্তা বিদেশে গেছেন তার হিসাব জানা যায়নি৷ তবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান স্বীকার করেছেন যে অনেকেই এই নিষেধজ্ঞা অমান্য করে সরকারি খরচে বিদেশ সফর করেছেন৷ যেমন ২০২২ সালের জুলাই মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২৫ জন কর্মকর্তাকে অষ্ট্রেলিয়া পাঠানোর জন্য সফরের ধরনই পাল্টে দেয়া হয়৷  জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরও ওই কর্মকর্তাদের অষ্ট্রেলিয়া সফর ছিলো এক্সপোজার ভিজিট৷ গত বছরের ১২ মে জারি করা পরিপত্রে এক্সপোজার ভিজিট নিষিদ্ধ ছিল৷ তাই এটার ধরন পরিবর্তন করে প্রশিক্ষণ সফর করা হয়৷

আগে সচিবেরা সবসময় প্লেনেই থাকতেন, এখন সেরকম নয়: এম এ মান্নান

ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানসহ ওয়াসার ১১ জন কর্মকর্তা বিদেশে যান ২০২২ সালে পরিপত্র জারির পর৷ তাকসিম এ খান স্পেনের মাদ্রিদে ‘দ্য গ্লোবাল ওয়াটার সামিট’ সহ দুইটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেখানে গিয়েছিলেন৷ তিনি সেখান থেকে আবার নেদারল্যান্ডসে যান আরেকটি সেমিনারে যোগ দিতে৷ আর ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে তুরস্ক যান ঢাকা ওয়াসার ছয় কর্মকর্তা৷

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, সিষ্টেম ম্যানেজার মো.রফিকুল হক, সিনিয়র সিষ্টেম এনালিস্ট মো.ইকবাল জাভিদ ও সহকারী প্রোগ্রামার আল নাহিয়ান তথ্য প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ নিতে পাঁচ দিনের সফরে মালয়েশিয়া যান৷

শ্রম সচিব এহছানে এলাহী এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নাসির উদ্দিন আহমেদ শিক্ষাসফরে ডেনমার্ক যান৷ ১৫ মে থেকে ২১ জুন তারা সেখানে অবস্থানের পর সেখান থেকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় যান৷

২০২২ সালে বিদেশ সফর বন্ধের পরিপত্র জারির পরও বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান স্ত্রীকে নিয়ে সিঙ্গাপুর সফরে যান একটি সম্মেলনে যোগ দিতে৷

তবে এবারের পরিপত্রে বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হলেও বেশ ফাঁকফোকড় রেখে দেয়া হয়েছে অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে৷ পরিপত্রে বিদেশ সফরের ব্যাপারে বলা হয়েছে, বিদেশি কোনো সরকার বা প্রতিষ্ঠান বা উন্নয়ন সহযোগীর আমন্ত্রণে ও তাদের অর্থায়নে আয়োজিত বিদেশি প্রশিক্ষণে সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ ভ্রমণে যেতে পারবেন৷ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় বা দেশ থেকে দেয়া স্কলারশিপ, ফেলোশিপের আওতায় বিদেশি অর্থায়নে মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়ন করতে পারবেন৷ এ ছাড়া ঠিকাদার, সরবরাহকারী বা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে সরকারি কর্মকর্তা ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তারা পণ্যের গুণগত মান নিরীক্ষা করার জন্য বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন৷

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচলাক ড. ইফতেখরুজ্জামান বলেন, ‘‘বিদেশ থেকে আনা পণ্যের মান যাচাইয়ের জন্য বিদেশ যাওযার সুযোগ রাখা হয়েছে৷ এটা আমরা কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি৷ করাণ বর্তমান ডিজিটাল যুগে পণ্যের মান যাচাইয়ের জন্য বিদেশ যাওয়ার দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না৷ আর ঠিকাদারের অর্থে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ রাখা অনৈতিক৷ কারণ ঠিকাদার তার প্রাইসিং-এর মধ্যে এই খরচটি রেখে দেয়৷ তারা কোনো চ্যারিটি করে না৷ এখানে শেষ পর্যন্ত জনগণের টাকাই খরচ হয়৷’’

তার কথা, ‘‘নতুন পরিপত্র আরো একটু  বিবেচনাপ্রসূত হওয়া দরকার৷ আর এটা যেন ঠিকভাবে মানা হয়৷ কারণ এর আগে এটা ঠিকভাবে মানা হয়নি৷ দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় এটা করা হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট কেটে যাবে না৷ কিন্তু এটার একটি গুরুত্ব আছে৷ এটা ঠিকভাবে মানা হলে সবার মধ্যে একটা মেসেজ যাবে৷ সবাই সাশ্রয়ী হবেন৷’’

তিনি মনে করেন, "এই নির্দেশনা শুধু সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নয়৷ যারা সরকারি অর্থ খরচ করবেন-মন্ত্রী, এমপি সবার জন্য৷ কারণ তারাই তো দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন৷’’

পণ্যের মান যাচাইয়ের জন্য বিদেশ যাওযার সুযোগ গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি: ড. ইফতেখারুজ্জামান

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান মনে করেন, ‘‘এই অর্থবছরে সাশ্রয়ী হওয়া খুবই জরুরি৷ অর্থনীতির ওপর চাপ আছে৷ আর সরকারের রাজস্ব আদায় সন্তোষজনক নয়, নিম্নমুখী৷ তাই সরকারকে অনেক জায়গায় খরচ কমাতে হবে৷ সরকারি চাকুরেদের এবার শতকরা পাঁচ ভাগ প্রণোদনা দিতে বছরে অতিরিক্ত আরো চার হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে৷ এই টাকা আসবে কোথা থেকে?’’

তিনি মনে করেন আরো সাশ্রয়ের খাত বের করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘গত অর্থ বছরে প্রজেক্টগুলো এ, বি এবং সি তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিলো৷  সেখানে বলা হয়েছিলো সি ক্যাটাগরির প্রজেক্টগুলো অগ্রাধিকার পাবে না৷ এবার কিন্তু সেটা করা হয়নি৷ আমার মনে হয় এবারো কম গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে অর্থায়ন বন্ধ রাখা উচিত৷’’

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘‘গতবার সাশ্রয়ের আদেশ দেয়া হয়৷ কিন্তু তা কতটুকু হয়েছে তা স্পষ্ট নয়৷ তাই সরকারের উচিত এব্যাপারে তথ্য প্রকাশ করা৷ আর যে আদেশ দেয়া হয় তা রাজনীতির সঙ্গে আমলাতন্ত্রের সম্পর্কের কারণে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় না৷ বাস্তবায়ন হওয়াটা জরুরি৷’’

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘‘দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে৷ কিন্তু আমাদের আরো এক বছর সাবধান থাকতে হবে৷ সেই কারণেই আগের বছরের সাশ্রয় নীতি এবারও অব্যাহত রাখা হয়েছে৷’’

কিন্তু এই নির্দেশনা যে ঠিকমত মানা হচ্ছে না তা তিনি স্বীকার করে বলেন, ‘‘এবার মানবে৷ কারণ আগের চেয়ে স্ট্রংগার ল্যাঙ্গুয়েজে বলা হয়েছে৷ আর সাশ্রয় কিছু হচ্ছে৷ আগে সচিবেরা সব সময় প্লেনেই থকতেন৷ এখন সেরকম নয়৷’’

তারপরও সাশ্রয়ের নির্দেশনা অনেকে মানতে চান না কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এরা মানে না তো৷ এরা মনে করে যথা পূর্বং, তথা পরম৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য