1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকারি উদ্যোগে কি হাল ফিরবে বাংলা ছবির?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩০ এপ্রিল ২০২২

বাংলা ছবিকে আরো দর্শকপ্রিয় করে তুলতে পদক্ষেপ নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ সেই সূত্রে গত তিন বছরে কতগুলি বাংলা ছবি প্রদর্শিত হয়েছে, তা হল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছে নবান্ন৷ কিন্তু এমন উদ্যোগে কি স্বাবলম্বী হবে টলিউড?

https://p.dw.com/p/4AecP
Indien West Bengal | Bengali Filme
ছবি: Payel Samantha/DW

ভারতের চলচ্চিত্র জগতকে বরাবরই শাসন করেছে বলিউড৷ বাংলা ছবির স্বর্ণযুগে যখন ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিৎ রায়ের মতো পরিচালকরা কর্মরত, সেই সময়েও বাণিজ্যের নিরিখে হিন্দি ছবি ছিল অনেকটা এগিয়ে৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগ অতীত হয়ে গিয়েছে৷ সাম্প্রতিককালে বাংলা সিনেমা নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলেও ব্যবসার মাপকাঠিতে বলিউডের সঙ্গে তুলনা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি৷ ক্রমশ বলিউডের ছবির চাপে বাংলা সিনেমা হল থেকে উধাও হয়ে যেতে থাকে৷ শুধু হিন্দি নয়, ব্লকবাস্টার দক্ষিণ ভারতের ছবির রিমেক টালিগঞ্জের চলচ্চিত্র শিল্পের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে৷

এমন পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার ২০১৮ সালে চলচ্চিত্র আইন সংশোধন করে৷ এই সংক্রান্ত নির্দেশিকায় বলা হয়, জিটিএ এলাকা ছাড়া সব সিঙ্গল স্ক্রিন এবং মাল্টিপ্লেক্সে প্রাইম টাইমে, অর্থাৎ দুপুর ১২টা থেকে রাত নটার মধ্যে বছরে অন্তত ১২০ দিন ন্যূনতম একটি শো-এ বাংলা সিনেমা দেখানো বাধ্যতামূলক৷

এই নির্দেশিকা কতটা মেনেছেন হল মালিকরা? কতগুলি বাংলা ছবি দেখানো হয়েছে, সেই রিপোর্ট সিঙ্গল স্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের কাছে চেয়েছে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর৷ ২০১৯-এর পয়লা এপ্রিল থেকে ২০২২-এর পয়লা এপ্রিল পর্যন্ত প্রদর্শিত বাংলা চলচ্চিত্র সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে৷

‘রাজ্য সরকার ঠিক কাজই করেছে’

এই সংক্রান্ত তথ্য ইতিমধ্যেই অনেক হল কর্তৃপক্ষ দপ্তরে জমা করেছেন৷ কলকাতার অন্যতম মাল্টিপ্লেক্স কার্নিভাল সিনেমার ম্যানেজার কুন্তল ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছিল৷ আমরা বাংলা ছবি সংক্রান্ত তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছি৷'' তাঁর দাবি, ‘‘কার্নিভালে গত কয়েক বছরে যথেষ্ট সংখ্যায় বাংলা ছবি দেখানো হয়েছে৷''

কিন্তু দর্শকদের কতটা আকর্ষণ করতে পেরেছে এই ছবিগুলি? কুন্তল বলেন, ‘‘ছবি কতটা জনপ্রিয় হবে তা নির্ভর করে কাহিনি ও চরিত্রাভিনেতাদের উপর৷ তাতে আকর্ষণ থাকলে শো হাউসফুল হয়ে যায়৷ আবার ছবি দর্শকদের না টানায় শো বাতিলও করতে হয়েছে৷’’

কলকাতার পুরোনো সিনেমা হলগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হলো ‘প্রিয়া'৷ এই প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার ও প্রযোজক অরিজিৎ দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলা ছবি ভালই চলে৷ ভাল ছবি আরো তৈরি হোক৷ তা হলেই আরো জনপ্রিয়তা পাবে৷''

বাংলা ছবি প্রচারের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে চলচ্চিত্র মহল স্বাগত জানিয়েছে৷ তাদের সঙ্গে সহমত কুন্তলের মন্তব্য, ‘‘সব রাজ্যেই আঞ্চলিক ভাষার ছবি গুরুত্ব পায়৷ এ ব্যাপারে রাজ্য উদ্যোগ নিয়েছে, এটা খুবই ভাল লক্ষণ৷ বাংলা ছবিরও সমান গুরুত্ব পাওয়া উচিত৷''

একই রকমভাবে আশাবাদী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্রবিদ্যার অধ্যাপক মানস ঘোষ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এভাবে সিনেমার গুণগত মান বাড়ানো সম্ভব নয় ঠিকই৷ কিন্তু চলচ্চিত্র তৈরি থেকে প্রদর্শন থাকে মূলত বাজারি পুঁজির হাতে৷ বলিউডের প্রচুর টাকা, তারা সিনেমার পরিবেশনা-প্রদর্শনেরর ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে থাকে৷ প্রাইম টাইমে শুধু হিন্দি ছবি দেখালে আঞ্চলিক ছবি কোথায় দাঁড়াবে? সেদিক থেকে রাজ্য সরকার ঠিক কাজই করেছে৷''

‘রাজ্য সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে, তা ঠিক নয়’

যদিও রাজ্যের এই পদক্ষেপ নিয়ে অন্যমতও আছে৷ বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র সমালোচক নির্মল ধর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত হল মালিকদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে, তা ঠিক নয়৷ যদি সাত দিন ছবি দেখিয়ে দর্শক না হয়, তা হলে কীভাবে ব্যবসা চলবে? এতে আরো হল বন্ধ হয়ে যাবে৷ সিঙ্গল স্ক্রিন ৬০-৭০টায় এসে দাঁড়িয়েছে৷ ব্যবসা না হলে এই সংখ্যা আরও কমবে৷’’

তাঁর মতে, ‘‘উন্নত মানের ছবি তৈরি করতে হবে৷ তা হলেই দর্শকরা ছবি সম্পর্কে আগ্রহী হবেন৷ হল মালিকদের নির্দেশ দিয়ে বাংলা ছবির সুদিন আনা যাবে না৷’’

যদিও মানসের বক্তব্য, ‘‘সরকার তো আর ছবির গুণগত মান বাড়াতে পারে না৷ তারা সহায়ক হয়ে উঠতে পারে৷ এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার সেটাই করেছে৷ তবে সরকার ভাল ছবি তৈরির ক্ষেত্রে প্রযোজক-পরিচালকদের উৎসাহ দিচ্ছে, এমনটাও নয়৷''

চলচ্চিত্রের গুণমান ও ব্যবসার চিরন্তন এই দ্বন্দ্বে কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলা সিনেমা? চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, অতীতে বাংলার জনপ্রিয় ছবির তুলনায় অনেক কম বাণিজ্য সফল ‘পথের পাঁচালী'৷ তাই শুধু ব্যবসাকে সবকিছুর মাপকাঠি করা ঠিক নয়৷ যদিও বলিউড-টলিউড-হলিউড এই বিভাজনেই যেতে রাজি নন অরিজিৎ৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘সিনেমা যে ভাষারই হোক, সেটা সিনেমা-ই৷ এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার৷ বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, নেপালি, ভোজপুরি, দক্ষিণের ছবি— সবই আমাদের চোখে এক৷ সবই ভারতের ছবি৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান