1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংবাদভাষ্য: রিপাব্লিকান দলের সম্মেলন শেষ হল

৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রিপাব্লিকান দল জন ম্যাককেইনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে৷ তিনি নিজেকে বুশের তুলনায় ভিন্ন মাপের এক নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন৷

https://p.dw.com/p/FCBE
ম্যাককেইন-প্যালিন জুটি ভোটারদের মন কতটা জয় করতে পারবেন?ছবি: AP

Mac is back - অর্থাত্ ম্যাক আবার ফিরে এসেছে৷ অথচ এক বছর আগে জন ম্যাককেইনের নির্বাচনী প্রচারাভিযান ঠিকমতো শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে অনেকেই ধরে নিয়েছিল৷ অর্থের অভাব ও দলের মধ্যে অন্তর্কলহের ফলে ৭২ বছর বয়স্ক ঐ সেনেট সদস্য নিজেই প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি একের পর এক বাধা পেরিয়ে দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলেন৷ দলের রক্ষণশীল মহলে তাঁর প্রার্থিত্বকে কেন্দ্র করে প্রথম দিকে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল৷ আর আজ এমনকী খ্রীষ্টান এভানজেলিস্টরাও ম্যাককেইনের জয়গান গাইছেন৷ কারণটাও স্পষ্ট৷ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যাঁকে আসরে এনেছেন, সেই ৪৪ বছর বয়স্ক সারা প্যালিন দলীয় সম্মেলনের তারকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন৷

ম্যাককেইনের হিসেব ঠিক মিলে গেছে৷ তিনি দোসর হিসেবে এমন একজনের খোঁজ করছিলেন, যিনি মোটেই তেমন পরিচিত নন - যাঁকে সঙ্গী করে তিনি ওয়াশিংটনের ক্ষমতা কেন্দ্রে পরিবর্তন আনতে পারেন৷ প্যালিনের কল্যাণে বাস্তবে কত বাড়তি ভোট পাওয়া যাবে, সেটা অবশ্য এখনো তেমন স্পষ্ট নয়৷ হিলারি ক্লিন্টনের আশাহত সমর্থকেরা মহিলা প্রার্থী হওয়ার কারণে প্যালিনকে সমর্থন জানাতে এগিয়ে আসবেন - এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই৷ গর্ভপাতের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান ও ধর্ম সম্পর্কে কট্টরপন্থী মনোভাবের কারণে প্যালিনকে হিলারি ক্লিন্টনের একেবারে বিপরীত এক প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা যেতে পারে৷ তাছাড়া সেনেটার ও প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি হিসেবে হিলারি ক্লিন্টনের ব্যক্তিত্বের সঙ্গেও প্যালিনের কোনো তুলনা চলে না৷

আলাস্কা রাজ্যের গভর্নর অবশ্য রিপাব্লিকানদের দলীয় সম্মেলনে প্রতিপক্ষকে বেশ ভালভাবেই আক্রমণ করেছেন৷ কিন্তু রাজনৈতিক আঙিনায় তাঁকে ওজনদার কোনো প্রার্থী হিসেবে ধরা চলে না৷ তিনি যেভাবে ডেমক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বারাক ওবামার বিরুদ্ধে আগ্রাসী আক্রমণ করেছেন, তার ফলে অনেক পর্যবেক্ষকই বিস্মিত হয়েছেন৷ জন ম্যাককেইন নির্বাচনী প্রচারাভিযানে ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন না বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্যালিনের ভাষণে তার কোনো ছাপ দেখা যায় নি৷ এই ভাষণ অবশ্য প্যালিনের নিজের নয় - জর্জ ডাব্লু বুশের এক ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাই সেটি লিখে দিয়েছিলেন৷

জন ম্যাককেইন নিজের ভাষণে প্যালিনের তুলনায় অনেক নরম সুরে কথা বলেছেন৷ তিনি ওবামার প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন, তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছেন - এমনকী একথাও বলেছেন, যে তাঁদের মধ্যে অমিলের তুলনায় মিলই বেশি৷ এই মনোভাব ম্যাককেইনের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানায় ভাল৷ সেই ভাষণ শুনে অবশ্য রিপাব্লিক্যান সদস্যদের করতালিতে তেমন একটা উচ্ছ্বাস দেখা যায় নি৷ তাঁরা বরঞ্চ প্রচারাভিযানে আগ্রাসী মনোভাবকেই পছন্দ করেন - যা অত্যন্ত হতাশাজনক৷ ম্যাককেইন যখন বললেন, যে বিগত বছরগুলিতে ওয়াশিংটনের নীতির ফলে রিপাব্লিক্যান দলকে বেশ কিছু বদনাম কুড়াতে হয়েছে, তখনও করতালির জোর কমে গিয়েছিল৷ তিনি কিন্তু সরাসরি আসল সমস্যার উল্লেখ করেছেন৷ তাঁকে জর্জ ডাব্লু বুশের নীতির প্রতি দূরত্ব দেখাতেই হবে৷ অতীতে অন্য কোনো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট এমন মাত্রায় জনপ্রিয়তা হারান নি৷ ভুলে গেলে চলবে না, যে রিপাব্লিকান দলই ৮ বছর ধরে হোয়াইট হাউস এবং বিগত ১২ বছর ধরে কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে৷

বর্তমানে সেই রিপাব্লিকান দলই যদি ওয়াশিংটনে দুর্নীতির অভিযোগ করে, সেক্ষেত্রে সবার আগে তাদের সর্ষের মধ্যে ভুত খুঁজতে হবে৷ জন ম্যাককেইন এই বাস্তব সত্য অনুধাবন করতে পারলেও দলীয় সম্মেলনের ডেলিগেটদের মধ্যে সেই উপলব্ধি দেখা যায় নি৷ মার্কিন ভোটাররা অবশ্য এমন যুক্তি মেনে নিতে প্রস্তুত নন৷ দেশ চরম এক অবস্থায় রয়েছে, মারাত্মক অথচ প্রায় অদৃশ্য এক শত্রুর বিরুদ্ধে দেশকে রক্ষা করতেই হবে - দলীয় সম্মেলনে এমন এক চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা সত্ত্বেও আমেরিকার বেশীরভাগ মানুষের কাছেই এই ধরনের বুলি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে৷ জন ম্যাককেইনকে নিজের দলের মধ্যেই আরও চিত্তশুদ্ধি করতে হবে৷

শুক্রবার থেকেই জন ম্যাককেইন ও সারা প্যালিনকে বাস্তব সত্যের মুখোমুখি হতে হবে৷ ভোটাররা এই মুহূর্তে বেহাল অর্থনীতি নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত৷ তখন দেখা যাবে, যে ম্যাককেইন-প্যালিন জুটি দলীয় সম্মেলনের অনুকূল পরিবেশের বাইরে ভোটারদের মুখোমুখি হতে কতটা সক্ষম৷ ডেমক্র্যাটদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে শুরুটা তাঁদের মন্দ হয় নি৷ নির্বাচনের দুই মাস আগে জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী ওবামা ও ম্যাককেইন প্রায় সমান সমর্থন পাচ্ছেন৷

লেখক: ক্রিস্টিনা ব্যার্গমান অনুবাদক:সঞ্জীব বর্মন