ব্রেক্সিট নিয়ে অচলাবস্থা
২২ জানুয়ারি ২০১৯সোমবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে সংসদের সামনে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত বিকল্প পরিকল্পনা পেশ করবেন, এমনটাই কথা ছিল৷ কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত নতুন মোড়কে সেই ব্রেক্সিট চুক্তিই তুলে ধরলেন, গত সপ্তাহে যা সংসদে বিপুল ভোটে বাতিল করা হয়েছে৷ ব্রিটেনে বসবাসরত ইউরোপীয় ইউনিয়ন নাগরিকদের জন্য নথিকরণের মাশুল তুলে দেওয়া ছাড়া নতুন কোনো ঘোষণা করলেন না তিনি৷ সেইসঙ্গে ব্রেক্সিট চুক্তির যে বিষয়টি নিয়ে সংসদে সবচেয়ে বেশি আপত্তি রয়েছে, সেই ‘ব্যাকস্টপ' বা আয়ারল্যান্ডের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে ইইউ-র কাছ থেকে আরও ছাড় আদায় করার অঙ্গীকার করলেন প্রধানমন্ত্রী মে৷
এমন অবস্থায় ব্রিটেনে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত অচলাবস্থা কাটার কোনো সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না৷ কোনো সমাধানসূত্রের পক্ষেই সংসদে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না৷ প্রধানমন্ত্রীসহ সব পক্ষই শুধু স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছেন, কে কী চান না৷ বিরোধী লেবার দলের দাবি মেনে প্রধানমন্ত্রী চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা পুরোপুরি বাতিল করতে প্রস্তুত নন৷ আগামী ২৯শে মে ব্রেক্সিটের দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়া বা নতুন করে গণভোটের আয়োজন করতেও নারাজ তিনি৷ মে-র যুক্তি, নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া ইইউ বিচ্ছেদের মেয়াদ বাড়াতে রাজি হবে না৷ তাছাড়া তিনি প্রথম গণভোটের রায় কার্যকর করতে চান, নতুন করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা তাঁর লক্ষ্য নয়৷ আবার গণভোটের আয়োজন করলে যুক্তরাজ্যের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে এবং সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন৷
ইইউ শুরু থেকেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে; ব্রেক্সিট চুক্তিতে কোনো মৌলিক রদবদল সম্ভব নয়৷ ব্রিটেনে ঐকমত্যের স্বার্থেও তা করা হবে না, এমনটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে৷ ইইউ-র প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে জানিয়েছেন, একমাত্র ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে রাজনৈতিক ঘোষণাপত্রে কিছু পরিবর্তন সম্ভব৷ এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতির সম্ভাবনা ক্ষীণ৷
ব্রিটেনের রাজনৈতিক অরাজকতা সম্পর্কে চরম বিরক্তি প্রকাশ করছেন ইইউ নেতারা৷ জার্মানির ইইউ সংক্রান্ত বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী টোমাস রোট বলেন, এমনকি শেক্সপিয়ার বেঁচে থাকলেও বর্তমান নাটকের ভিত্তিতে ব্রেক্সিট ট্র্যাজিডি লিখতে পারতেন না৷
আয়ারল্যান্ডের ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী হেলেন ম্যাকএন্টি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দেশ ব্রিটেনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে কোনো দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালাবে না৷ ব্রিটেনকে এ বিষয়ে ইইউ-র সঙ্গে সরাসরি সংলাপ চালাতে হবে৷ পোল্যান্ডের প্রস্তাব অনুযায়ী আয়ারল্যান্ড ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার মেয়াদ ৫ বছর সীমিত রাখতেও প্রস্তুত নয়৷
এমন প্রেক্ষাপটে ব্রিটেন কী করতে পারে? আগামী ২৯শে জানুয়ারি ব্রিটিশ সংসদে আগামী পদক্ষেপ নিয়ে ভোটাভুটি হবার কথা৷ তার আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সংশোধন করতে পারেন সংসদ সদস্যরা৷ বিরোধী লেবার দল বিচ্ছেদের মেয়াদ বাড়িয়ে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা নাকচ করারও উদ্যোগ নিচ্ছে৷ কিন্তু কোনো পদক্ষেপের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা সম্ভব না হলে চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদের আশঙ্কা আরও বেড়ে যাবে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)