শুরুতে এলো চাকরি, তারপর মৃত্যু
অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু ইটালির টারানটোকে চাঙ্গা করতে এসেছিল ইলভা স্টিল মিল৷ কিন্তু এরপর পরিবেশ দূষণ, নিয়ে আসে মৃত্যু৷ সেই জীবন আর মৃত্যুর গল্প নিয়ে এই ছবিঘর৷
শহরের প্রান্তে অন্ধকার
দক্ষিণ ইটালির আপুলিয়া অঞ্চলের মানুষের একসময়ের জীবিকা ছিল মাছ ধরা৷ ১৯৬৫ সালে ইউরোপের অন্যতম ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইলভা টারানটোতে কারখানা স্থাপন করলে এই চিত্র ধীরে ধীরে পালটে যায়৷ এখন কারখানাটিতে প্রায় ১৪ হাজার কর্মী কাজ করেন, টারানটোর ৭০ শতাংশ অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে ইলভা৷ কিন্তু কারখানাটি শুধু চাকরিই নিয়ে আসেনি, এনেছে মৃত্যুও৷
‘ইস্পাত, নাকি জীবন’...
টারানটোর এক দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিই বলছে এই কথা৷ কারখানা থেকে নিঃসরিত ডাইঅক্সিন এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের কারণে অঞ্চলটিতে ক্যানসারের হার বেড়ে গেছে৷ ইটালির জাতীয় হারের চেয়ে এ হার অন্তত ১০ গুণ বেশি৷ কারখানার অতিরিক্ত দূষণ অন্তত ৪০০ লোকের মৃত্যুর পেছনে দায়ী বলে ধারণা করা হয়৷
পশুবিহীন মেষপালক
কারখানার ঠিক পাশেই ভিনসেনসোর ফোরনানোর খামার৷ একসময় তাঁর ৬০০ ভেড়া ছিল, ভেড়ার দুধ থেকে তিনি পনির বানাতেন৷ কিন্তু একসময় তাকে ভেড়াগুলো মেরে ফেলতে হয়৷ কারণ কারখানার আশেপাশের ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকার মাটি দূষিত হয়ে পড়েছে৷ তবে অন্যান্য ক্ষতির তুলনায় এটা কিছুই না৷ ফোরনানোর মা মারা গেছেন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে, তিনি নিজেও হারিয়েছেন একটি কিডনি৷
খারাপ বাতাস
কারখানার পাশেই পাওলো আবাসিক এলাকা৷ শহরের অনেক বাসিন্দাই সুন্দর এই অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে থাকতে আগ্রহী৷ কিন্তু কারখানার আশেপাশে প্রচুর শিল্পবর্জ্য এবং লোহার কণা জমে আছে৷ ফলে যখনই বাতাসের গতি বেড়ে যায়, বাসিন্দাদের দরজা-জানালা বন্ধ করে ভেতরে থাকতে বলা হয়, এমনকি স্কুলও ছুটি দিয়ে দেয়া হয়৷
অর্থই বড় কথা নয়
শহরের সবচেয়ে বড় দূষণকারী হয়ত ইলভা, কিন্তু এই অঞ্চলে একমাত্র নয়৷ এনার্জি জায়ান্ট ইএনআই-এর একটি শোধনাগারও আছে এখানে৷ টারানটো উপসাগরে একটি বিশাল নৌঘাঁটিও আছে৷ ফলে এই অঞ্চলের দূষণের জন্য কে আসলে ঠিক কতটুকু দায়ী, তা নির্ধারণ খুব কঠিন৷
ভূতের শহর
অনেকেই টারানটো শহর ছেড়ে যাচ্ছেন৷ শহরের কেন্দ্রে তেমন কোনো নতুন অবকাঠামোও গড়ে উঠছে না৷ বরং অনেক পুরনো বাড়িঘর যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ার শংকায় আছে৷ অনেকেই নতুন করে ঝুঁকছেন মাছ ধরা ও ঝিনুক চাষের দিকে৷
ধ্বংসপ্রায় শিল্প
টারানটোর ঝিনুক কয়েক শতাব্দী ধরে বিখ্যাত৷ কিন্তু দূষণের ফলে এই শিল্পে নেমেছে ধস৷ চাষের ঝিনুকেও অতিরিক্ত মাত্রায় বিষাক্ত ডাই-অক্সিনের উপস্থিতি বাধ্য করেছে চাষীদের মুখ ফিরিয়ে নিতে৷