1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শুধু হাঁকডাকের অভিযান দিয়ে ভেজাল রোধ সম্ভব নয়

৭ জুন ২০২৪

শুধু আইন করে আর গণমাধ্যমে প্রচারসর্বস্ব কিছু অভিযান দিয়ে যে খাদ্যপণ্য ভেজালমুক্ত করা সম্ভব নয় – এ বিষয়টি সরকারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে৷

https://p.dw.com/p/4gneN
বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটি
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের মানুষের ৩৩ শতাংশ রোগের মূল কারণ ভেজাল খাদ্যছবি: Mortuza Rashed/DW

ভেজাল শব্দটির সাথে বাঙালির প্রত্মতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক ও আত্মিকসহ অনেক ধরনের সম্পর্ক আছে৷ সম্পর্কটির সাথে যখন অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত হয় তখন ভেজালের মাত্রা বাড়তে থাকে৷ এই যেমন, এখন জ্যৈষ্ঠ মাস৷ বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো বয়ানে এটি হলো মধু মাস৷ আশির দশক থেকে এদেশের গণমাধ্যমগুলো জ্যৈষ্ঠ মাসকেই মধু মাস হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছে৷ অথচ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আভিধানিক দিক থেকে বাঙালির মধু মাস হলো চৈত্র মাস৷ বসন্তের কোকিলের আরেক নাম মধুসুখ, যা থেকে চৈত্রকে বলা হয় মধু মাস৷ খনার বচনে যে মধুমাসের উল্লেখ পাওয়া যায় সেখানে চৈত্র মাসকে বোঝানো হয়েছে৷ আবার বাহারাম খানের ‘মধুমাসে উতলা বাতাস, কুহরে পিক; যদি সে কমল শিশিরে দহল কি করিব মধুমাসে' কিংবা মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর ‘মধুমাসে মলয় মারুত মন্দ মন্দ' – কবিতায় মধুমাস হলো চৈত্র৷ কারণ জ্যৈষ্ঠ মাসে কোকিল ডাকে না, ডাকে চৈত্র-ফাগুনে৷ এই যে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের মধুমাস পাল্টে দেয়ার চর্চা – তার পেছনে আছে অর্থনৈতিক স্বার্থ৷

মধু মাস কিংবা মধুর সময় – যে কোনো সময়েই বাঙালি ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে ভেজাল, বিশেষ করে খাবারে ভেজাল একটি সহজাত ও বহুল শ্রুত শব্দবন্ধ৷ বাঙালি ব্যবসায়ীদের এমন চরিত্রের জন্য সুকান্ত ভট্টাচার্য পাটনা থেকে পাবনা পর্যন্ত ভেজাল খাবারের বিস্তারের কথা লিখে গিয়েছিলেন – 'ভেজাল, ভেজাল ভেজাল রে ভাই, ভেজাল সারা দেশটায়; ভেজাল ছাড়া খাঁটি জিনিষ মিলবে নাকো চেষ্টায়!' ৭৫ বছর আগে সুকান্ত তাঁর ছড়ায় চাল, ঘি আর ময়দার কথা বললেও স্বাধীন বাংলায় ভেজাল খাদ্যপণ্যের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে এবং হচ্ছে৷ জ্যৈষ্ঠ মাসের আম-লিচু থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি যে কোনো ফল, নিত্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, মাছ-মাংস, এমনকি শিশু খাদ্য ও জীবনরক্ষাকারী ঔষধে ভেজালের মহোৎসব চলে৷ ফলে মৌলিক অধিকার হওয়া সত্ত্বেও নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়েছে৷ উল্টো ভেজালের আগ্রাসন এতটা বাড়-বাড়ন্ত যে খাঁটি খাবারের স্বাদও অনেক সময় আমরা ভুলে যেতে বসি৷ এ যেন সুকান্তের ‘ভেজাল' নামটাই শুধু খাঁটি বাকি সব মিথ্যে৷

নিত্যপ্রয়োজনীয় খোলা থেকে প্যাকেটজাত পণ্য – সবকিছু আকর্ষণীয় করে তুলতে আর পচন ঠেকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে নানারকম কৃত্রিম রঞ্জক আর ক্ষতিকর নিষিদ্ধ রাসায়নিক এবং রঙ৷ এ যেন রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গানের কলির মতো – ‘আজ সবার রঙে রঙ মিশাতে হবে'৷ মাছে-ভাতে বাঙালির খাদ্যাভাস যতই পাশ্চাত্যের ফাস্টফুডের দিকে ঝুঁকেছে ততেই পাল্টা দিয়ে বাড়ছে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রবণতা৷ গুঁড়াদুধে সিসা, মুরগির মাংসে হেভি মেটাল, গরুর মাংসে ব্যবহার করা হচ্ছে স্টেরয়েড৷ মিষ্টিতে ব্যবহ্নত হচ্ছে মেটানিল ইয়েলো বা লেড ক্রোমেট৷ বেকারিতে তৈরি পাউরুটিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যান্সারের জন্য দায়ী পটাশিয়াম রোমেটসহ নানা কেমিক্যাল৷ অ্যাসিটিলিন বা কার্বাইড দিয়ে পাকানো হচ্ছে জ্যৈষ্ঠ মাসের ফল৷ শুধু খাবার নয়, জীবনরক্ষাকারী ঔষধ যেমন, ভেজাল প্যারাসিট্যামালে সিরাপের কারণে দেশব্যাপী শিশুমৃত্যুর খবর খুব বেশি দিনের পুরানো নয়৷ লিচু খেয়ে ১৪ জন শিশু মারা যাওয়ার পর গত এক দশকে মানুষের লিচু খাওয়ার হার কমেছে, কিন্তু লিচুকে রাসায়নিকের ব্যবহার খুব কমই রোধ করা গেছে৷

বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যে ভেজাল একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ গবেষণায় ঢাকা শহরের ৭০ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে ৫০ শতাংশ খাদ্যে রাসায়নিক ও ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে৷ সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের ৩৩ শতাংশ রোগের মূল কারণ ভেজাল খাদ্য৷ মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া এই সমস্যা শুধু মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করছে না, বরং জাতীয় উন্নতিও বাধাগ্রস্ত করছে৷ কারণ খাদ্যে ভেজাল অসংখ্য জীবনঘাতী ও দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রাদুর্ভাব জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করছে৷ ভেজাল খাদ্যের কারণে ক্যানসার, লিভার সিরোসিস, কিডনি ও হৃদযন্ত্রের অসুখ, হাঁপানি ইত্যাদি জটিল রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷ উপরন্তু ভেজাল খাদ্যের কারণে ভবিষ্যত প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷

খাদ্য বিশেষজ্ঞরা খাদ্যে ভেজালের এই যে মহামারী তাকে অনেক আগেই ‘নীরব ঘাতক' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন৷ সমস্যাটি কতটা মারাত্মক তা বোঝা যায় যখন আমরা দেখি দেশের উচ্চ আদালত খাদ্যে ভেজাল মেশানোর এই প্রবণতাকে ‘দুর্নীতি' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন৷ অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা ঠেকাতে সরকারি উদ্যোগও কম নয়৷ ২০১৫ সালে যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে তার ওয়েবসাইট বলছে, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ও ভেজাল খাদ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে সরকার এ পর্যন্ত ২০টি আইন প্রণয়ন করেছে৷ ২০১৩ সালের নিরাপদ খাদ্য আইনের পাশাপাশি ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বিধান রাখা হয়েছে৷ যুক্তরাজ্যের ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সি বা এফএসএ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ'র আদলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করলেও বাংলাদেশের এই সংস্থাটি কার্যত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাগুজে বাঘের মতই ভূমিকা পালন করে৷ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সমন্বয়হীনতা, মৌসুমভিত্তিক ও রাজনৈতিক বিবেচনায় অভিযান পরিচালনার কারণে ভেজালবিরোধী অভিযানগুলো গণমাধ্যমের প্রচার সর্বস্ব কর্মকাণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে৷ প্রতিবছর ২ ফেব্রুয়ারি বা রমজান মাসে কিছু প্রচার সর্বস্ব অভিযান ও জরিমানার খবর আমরা গণমাধ্যমে দেখতে পাই৷ রাজনৈতিক প্রভাবে কারণে ভেজালবিরোধী অভিযানগুলো নিজেই ভেজালে পরিণত হয়ে যাচ্ছে৷

পরিসংখ্যান বলছে, খাদ্যে ভেজাল দেয়ার প্রবণতা আগের তুলনায় বাড়লেও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অভিযান ও মনিটরিংয়ের সংখ্যা কমেছে৷ গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্বায়ত্তশাসিত এই সংস্থাটি সারাদেশে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল৷ অথব চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে সংস্থাটির মনিটরিং কার্যক্রমের সংখ্যা ছিল মাত্র তিন হাজার৷ সংস্থাটির নীতিমালা অনুযায়ী, খামার থেকে শুরু করে খাবার টেবিল পর্যন্ত মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছানোর সবগুলো ধাপে সংস্থাটির অভিযান চালানোর কথা৷ সেখানে এই সংস্থার কার্যক্রম মূলত কিছু রেস্টুরেন্ট আর মুদির দোকানের মধ্যে সীমাবদ্ধ৷ ফলে দশ বছর পার করে ফেললেও সংস্থাটি মানুষের আস্থা অর্জন থেকে যোজন দূরে অবস্থান করছে৷ দেশের ২৫ লাখ ক্ষুদ্র বা অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায়ী ও ১৮টি মন্ত্রণালয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত৷ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় কখনও করা সম্ভব হয়নি৷ দেশের ৬৪টি জেলা ও আটটি বিভাগীয় শহরের মোট ৭৪টি নিরাপদ খাদ্য আদালতে এখনও পর্যন্ত কোনো বড় ব্যবসায়ীকে শাস্তি দিতে আমরা দেখিনি৷ রাজনৈতিক বলয়ে থাকা এসব ভেজাল ব্যবসায়ীরা প্রায়ই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে৷খাদ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়াকে সঙ্কটের কেন্দ্রবিন্দু থেকে বাইরে থেকে শুধু খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতা পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়৷ যুক্তরাজ্যে খাদ্য উৎপাদন, বিপণন ও বিতরণের সাথে জড়িত যে কোনো পর্যায়ের ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের ফুড সেফটির লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক এবং প্রতি তিন বছর পর পর নির্দিষ্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এ লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়৷ বাংলাদেশে এমন লাইসেন্সের ধারণা এখনও অলীক স্বপ্নই বটে৷

নিরাপদ খাদ্য অধিকার নিশ্চিতকরণে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত নানা ব্যবস্থাপনা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্য মডেল হিসেবে কাজ করে৷ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন, অভিযান পরিচালনা এবং রেস্তোরাগুলোর গ্রেডিং সিস্টেম চালু ইত্যাদি নানা উদ্যোগ এই দুটি দেশের মডেলের ভিত্তিতেই বাংলাদেশে চালু করা হয়েছে৷ কিন্তু যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্যে ভেজালকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হয় এবং জাতীয় সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনের সফল ও রাজনীতিমুক্ত প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়৷ বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে এই প্রায়োগিক সমস্যার কারণে৷ বাংলাদেশে অন্য যে কোনো সমস্যার মত খাদ্যে ভেজাল যদি সামাজিক গণমাধ্যমে মাথাছাড়া দিয়ে উঠে তাহলে সেটি মূলধারার সংবাদমাধ্যমে কিছুদিন ফলাও করে প্রচারিত হয়৷ তখন সরকারী কর্তৃপক্ষগুলো বেশ ফলাও করে অভিযান পরিচালনা করে৷ কিন্তু গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সরকারী কর্তৃপক্ষগুলো কখনই এ সমস্যাটিকে জাতীয় মহাগুরুত্বপূর্ণ সঙ্কট হিসেবে দেখার প্রয়াস পায়নি৷ বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো খাদ্যে ভেজাল ঠেকাতে জনসচেনতা তৈরি করতে যতটা ভূমিকা রাখে তার চেয়ে অনেক বেশি ভূমিকা রাখছে ভেজাল খাদ্যপণ্যের প্রচারে৷ বিশ্বের অনেক দেশে শিশু খাদ্যের লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ হলেও আমাদের গণমাধ্যম তা অবলীলায় প্রচার করে যাচ্ছে৷ ভেজাল খাদ্য বিরোধী সরকারি প্রচার ফেব্রুয়ারির ২ তারিখেই সীমাবদ্ধ থাকে৷ দেশের মানুষ যে প্রতিনিয়ত বিষ খাচ্ছে সে বিষয়ে ব্যাপক জনসচেনতা তৈরি করা ছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ঠেকানো সম্ভব নয়৷ ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে কোথায় অভিযোগ করবে এবং কোথায় গেলে এর প্রতিকার পাবে সে বিষয়টিই এখনও দেশের বেশিরভাগ মানুষ জানে না৷ যুক্তরাজ্যে কয়েক বছর আগে বাদাম খেয়ে নাতাশা নামে এক শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর নাতাশা আইন নামে একটি নতুন আইন চালু করা হয়৷ এই আইন অনুযায়ী প্রতিটি যে কোনো খাবারের গায়ে কী কী উপাদান থাকে এবং এগুলো কী ধরনের ক্ষতি করতে পারে তার উল্লেখ থাকা জরুরি৷ তাছাড়া দেশটির সরকার নিয়মিত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণের জন্য সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সভা, সেমিনার, টিভিতে বিজ্ঞাপন বা পাঠ্যপুস্তকে ভেজালবিরোধী পাঠ্যক্রম যুক্ত করা উচিত৷ দেশের প্রতিটি থানা, উপজেলা, জেলাতে নিয়মিত সভা, সেমিনার করা যেতে পারে যাতে ভেজালের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে মানুষকে সাবধান করা যায়৷

বাঙালি যেমন খেতে ভালবাসে তেমনি খাওয়াতেও ভালবাসে৷ বাঙালির ভোজন রসিকতার প্রমাণ মেলে গুলশান, উত্তরা, বনানী, ধানমন্ডির বড় বড় রেস্তোরাঁগুলোর দিকে তাকালে৷ বাঙালির এই ভোজনপ্রিয়তাকে পুঁজি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা৷ এমন কোনো খাদ্যপণ্য নেই যেটি মানুষ নির্ভয়ে ও নিঃসঙ্কোচে খেতে পারে৷ দেশ থেকে মঙ্গা দূর হলেও বিষযুক্ত খাবারের পরিমাণ বেড়েছে৷ ফলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কিন্তু সরকার ও সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থাগুলোর কাছে এ চ্যালেঞ্জের গুরুত্ব যথেষ্ট সাদামাটা বলে প্রতীয়মান হয়৷ তাই আইন ও সংস্থা থাকা সত্ত্বেও ভেজাল রোধ করা যাচ্ছে না৷ পরিণামে মানুষ পকেটে টাকা দিয়ে বিষ কিনে খাচ্ছে৷ সেই বিষ নামানোর জন্য যে পথ্য কিনছে সেটিও ভেজাল হওয়ায় নতুন করে বিষ ছড়িয়ে পড়েছে দেহে৷ শুধু আইন করে আর গণমাধ্যমে প্রচারসর্বস্ব কিছু অভিযান দিয়ে যে খাদ্যপণ্য ভেজালমুক্ত করা সম্ভব নয় – এ বিষয়টি সরকারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে৷ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে আইনের প্রয়োগ করা না গেলে ভেজাল খাদ্যপণ্যের দুষ্টচক্রের অনেক গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি খেসারত আমাদের দিতে হবে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য