শিশুদের বাত রোগ
৪ জানুয়ারি ২০১৪শিশুদের রিউম্যাটিক ক্লিনিকের গেস্ট-হাউসে স্থান পেয়ে মারিয়া মিত্রেভা ও তার মা নতুন জীবন পেয়েছেন বলা চলে৷ তখন তাঁদের মনে হয়েছিল, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্বদেশ বুলগেরিয়ায় ফিরে যেতে পারবেন৷ মারিয়া-র রিউম্যাটিক ডিস-অর্ডার বা বাত রয়েছে৷ এই ‘অটো-ইমিউন' রোগ তার শরীরের ইন্দ্রিয়গুলির ক্ষতি করছে৷ বুলগেরিয়ায় ওষুধ পাওয়া যায় নি৷ তাই দেশ ছাড়াই ছিল শেষ ভরসা৷ বিদেশ থেকে অনেক পরিবারই শিশুদের রিউম্যাটিক ক্লিনিকের শরণাপন্ন হয়৷
যেমন রাশিয়ার মেয়ে আনা-র কাছে গার্মিশ পার্টেনকিয়র্শেনের ক্লিনিকই ছিল শেষ ভরসা৷ মস্কোর ডাক্তাররা তার শরীরে রিউম্যাটিক ডিস-অর্ডার খুঁজে বার করতে তিন বছর সময় নিয়েছিলেন৷ ক্লিনিকের প্রধান প্রফেসর ড. ইয়োহানেস পেটার হাস বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে সংক্রমণের পরিণাম হিসেবে কার্টিলেজ নষ্ট হয়ে যায়৷ তারপর হাড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ এই প্রক্রিয়া চলে ধীর গতিতে৷ এটা ঘটে, যখন শিশুদের শরীরে কয়েকটি অ্যাটাক হয় অথবা জয়েন্টে কোনো সংক্রমণ দেখা যায়৷ উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবেই এমনটা ঘটে৷''
ঠিক সময় রোগ শনাক্ত না হওয়ায় আনা অনেক বছর ধরে টিউবারকুলোসিস বা যক্ষ্মারোগের ওষুধ খেয়ে গেছে৷ রিউম্যাটিক অ্যাটাকের কারণে তার হাঁটু শক্ত হয়ে গেছে৷ এরপর তার কৃত্রিম জয়েন্টের প্রয়োজন পড়বে৷ জার্মানি আসার পর সপ্তাহে দু'দিন ক্লিনিকে যেতে হয়৷ রোগীদের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি করাই সেখানকার কর্মীদের লক্ষ্য৷ হাসপাতালে সবকিছুই একই ছাদের নীচে প্রস্তুত, চাইলেই নাগালের মধ্যে৷ আছে নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ডাক্তার ও ফিজিওথেরাপিস্ট৷
হাসপাতালে মারিয়াকে একেবারে নতুন ধরনের ওষুধ দেয়া হয়েছে৷ এমন ইঞ্জেকশন যা বুলগেরিয়ায় পাওয়া যায় না৷ কর্টিসোন-এর থেকে তাতে আরাম বেশি৷ দেশে সেই ইঞ্জেকশনই পেত সে৷ ফলে শরীর ফুলে গেছে৷
ফিজিওথেরাপিস্ট-রা ক্লিনিকের ডাক্তারদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেন৷ প্রতিটি শিশুর জন্য আলাদা ট্রেনিং কর্মসূচি স্থির করা হয়৷ শরীরের নাড়াচাড়া বিশ্লেষণ করে সঠিকভাবে জানা যায়, কোন জয়েন্ট-এর এক্সারসাইজ কীভাবে করা উচিত৷ আনা-র জন্যও নির্দিষ্ট এক্সারসাইজ ঠিক করা হয়েছে৷ ক্রীড়াবিজ্ঞানী মাটিয়াস হার্টমান বলেন, ‘‘আনার ত্বকের উপর যে বল লাগিয়ে দিয়েছি, তা দিয়ে শরীরের থ্রিডি অ্যানালিসিস করতে পারি৷ প্রতিটি জয়েন্টের অ্যাঙ্গল সম্পর্কে জানতে পারি৷''
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিটি জয়েন্ট ঠিক কোন মাত্রায় রিউম্যাটিক ডিস-অর্ডারে আক্রান্ত হচ্ছে৷ সাতটি ক্যামেরা শরীরে সেই ছবি তোলে৷ থেরাপি কাজ করবে কি না, সেই তথ্য থেকে তা বোঝা যায়৷ আনা-ও বছরের শুরু থেকে নতুন ওষুধ খাচ্ছে৷ জার্মানি থেকে সে সেই ওষুধ কিনে নিয়ে যায়৷
বহু বছর ধরে কোর্টিসন নেবার পর মারিয়া তার পরিণাম থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে৷ ক্লিনিকে সে সাঁতারও শিখছে৷ তার মা এখনো দেশ-বদলের ধকল সামলাচ্ছেন৷ তবে মেয়ের স্বাস্থ্যের খাতিরে তিনি সবই করছেন৷ মা ও মেয়ের জন্য গার্মিশ পার্টেনকিয়র্শেনে আসাই ছিল একমাত্র পথ৷ মারিয়া যখন জার্মানিতে আসে, তখনও সে হুইলচেয়ারে বসতো৷ আর এখন স্বাস্থ্যের সমস্যা সত্ত্বেও সে মোটামুটি বিভ্রাটহীন জীবনের আশা করছে৷