শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘অ্যান্টি ব়্যাগিং স্কোয়াড’
১২ জানুয়ারি ২০২০হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ একইসঙ্গে সরকারের ওপর এ নিয়ে একটি রুল জারি করেছেন৷ রুলে র্যাগিংয়ের হাত থেকে শিক্ষার্থীদের মর্যাদা রক্ষায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে৷
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের এক রিট আবেদনে জবাবে হাইকোর্ট এসব আদেশ দেয়৷ চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে৷
রিটে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান শিক্ষা সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে৷
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানীও করেন রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত বছরের ৯ অক্টোবর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব়্যাগিং বন্ধে আমি একটি লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছিলাম৷ কিন্তু তারপরও দীর্ঘ সময়ে ব্যবস্থা না নেয়ায় আমি রিট করি৷''
তিনি জানান, ‘‘আদালত তিন মাসের মধ্যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এন্টি ব়্যাগিং স্কোয়াড ও এন্টি ব়্যাগিং কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন৷ স্কোয়াড গঠন করা হবে র্যাগিং প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নেয়ার জন্য৷ আর কমিটি গঠন করা হবে অভিযোগ নেয়ার জন্য৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজেদের বিবেচনায় তা করবে৷ আর যদি মনে হয় আদালতের আরো পরামর্শ প্রয়োজন তাহলে আদালতের কাছে তা চাইতে পারবে৷ এছাড়া কমপক্ষে একজন করে সার্বক্ষনিক ওয়ার্ডেন নিয়োগ করতে হবে৷ যারা ছাত্রাবাসে বা যখন ক্লাস থাকবেনা তখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেবেন৷
বুয়েটের আবরার হত্যা ব়্যাগিং-এর চূড়ান্ত, করুণ পরিণতি উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব়্যাগিং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে৷ যা র্যাগিং-এর শিকার শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিকভাবে পর্যুদস্ত করছে৷ এই কারণে লেখাপড়া ছেড়ে দেয়া ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেয়ার মত পরিস্থিতিও তৈরি হয়৷ তারা কেউ কেউ এত ট্রমাটাইজড হয়ে যায় যে বাবা-মাকেও চিনতে পারেন না৷
তিনি আরো জানান, র্যাগিং-এর নেপথ্যে থাকে ফাইনাল ইয়ারের বা সিনিয়র স্টুডেন্টরা৷ র্যাগ দেয় সেকেন্ড বা থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্টরা৷ আর এর শিকার হন ফার্ষ্ট ইয়ারের স্টুডেন্টরা৷
‘‘বুয়েটের আবরার হত্যার পর আমরা আরো অনেক নির্মম ঘটনা জানলাম৷ কিন্তু শাস্তি পায় শুধু যারা সরাসরি জড়িত তারা৷ কিন্তু তারা র্যাগ দিতে বাধ্য হয় সিনিয়রদের নির্দেশে৷ তারাও এক সময় র্যাগিং-এর শিকার হয়েছেন৷ তাদের বাধ্য করে সিনিয়র ছাত্ররা৷ কিন্তু যারা বাধ্য করে তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়৷তার মতে, এই ব়্যাগিং বছরের পর বছর চলছে ছাত্রদের একটি আধিপত্য বলয় তৈরির জন্য৷ কিন্তু বড় কোন অঘটন না ঘটলে সেটা আমরা জানতেও পারিনা৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘কেউ ব়্যাগিং-এর কারণে মারা গেলে বা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়লে প্রচলিত আইনে প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে৷ কিন্ত অহরহ র্যাগিং-এর শিকার হয়ে যে মর্যাদা হানির শিকার হচ্ছে, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে তার কোনো প্রতিকার নেই৷ এটা পুরোপুরি বন্ধ করা প্রয়োজন৷''
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, ‘‘র্যাগিং বন্ধে এই ধরণের ব্যবস্থা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আগেই নেয়া উচিত ছিলো৷ দেরিতে হলেও হাইকোর্টের নির্দেশে এখন গঠন করা উচিত৷ এটা খুবই জরুরি৷ এর আগেও হাইকোর্ট যৌণ নিপীড়ন প্রতিরোধের ব্যাপারে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছিল৷ কিন্তু তার বাস্তবায়ন দেখিনা৷ এবার যেন সেরকম না হয়৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘এতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গাফিলতি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার অভাব ও এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতার কারণে ব়্যাগিং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে৷ কেউ দায়িত্ব নেন না বা নিতে চান না৷ তারা শুধু চাকরিই করেন৷''
র্যাগিং ছাড়া বুলিং আছে৷ এই বুলিং রেসিজম, সেক্স, বডি শেমিং নানা দিক দিয়ে হয়৷ এটা বন্ধেও একটা নীতিমালা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষা বিজ্ঞানের এই শিক্ষক৷
আর আইনজীবী ইশরাত জাহান বলেন, ‘‘বুলিংও বন্ধ হওয়া প্রয়োজন৷ কারন বুলিং-এর চূড়ান্ত রূপ র্যাগিং৷''