শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ নির্বাচনে হাসিনার ধ্বস-নামানো জয়
৩০ ডিসেম্বর ২০০৮সামরিক অবস্থা প্রত্যাহৃত হল৷ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল৷ সামনে রয়েছে একটিই প্রশ্ন যে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত শক্তিরা শান্তিপূর্ণভাবে দেশ চালাতে পারবে কিনা, এবং দুর্নীতি দূর করতে পারবে কিনা৷ সেক্ষেত্রে অতীতের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়৷ ২০০৭ সালের পরিকল্পিত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র মধ্যে দ্বন্দ্ব এমনই চরমে ওঠে, এমন সব সঙ্ঘর্ষের সূচনা ঘটে, যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না৷
তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতি দমনের যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন৷ ব্যাপক গ্রেফতারী অভিযান এবং আদালতের প্রক্রিয়া সত্ত্বেও দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিকদের সাজা দেওয়া এবং রাজনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত করার উদ্যোগ শুধুমাত্র আংশিক সম্ভব হয়েছে৷ কিন্তু দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রী শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে কোনো নির্দ্দিষ্ট সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি৷ অপরদিকে সন্ত্রাস ও অপরাধ দমনে সেনা-পুলিশের অভিযানের সূত্রে মানবাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে৷
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাফল্যের তালিকায় অবশ্য প্রথমেই থাকবে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা৷ নির্বাচন কমিশনকে আরো জোরদার করা হয়েছে৷ দুর্নীতির জন্য দন্ডপ্রাপ্ত রাজনীতিকদের ভোটে অংশগ্রহণ থেকে বিরত করা হয়েছে৷ বিচারবিভাগকে প্রশাসন থেকে পৃথক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেই সঙ্গে গঠিত হয়েছে একটি সুষ্ঠু মানবাধিকার কমিশন৷
অতঃপর সব কিছু নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের উপর৷ ৮০ শতাংশের বেশি ভোটার ভোট দিতে যাওয়ার অর্থ, জনগণের প্রত্যাশাও সেই তুলনায় বেশ উঁচু৷ অতীতের দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণে প্রত্যাবর্তনের অর্থ হবে সামরিক বাহিনীর পুনরায় হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা, এবং সেই সঙ্গে গণতন্ত্রের অন্তিম দশা৷
বাংলাদেশের আজ প্রয়োজন এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির, যেখানে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে শ্রদ্ধা করা এবং দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া স্বাভাবিক বলে গণ্য হবে৷ এই নির্বাচন শুধু একটি সূচনা, তার বেশি নয়৷ বিজয়ীর প্রতি ভোটাররা যে আস্থা দেখিয়েছে তার ফলে তাকে এবার নৈতিক এবং রাজনৈতিক দায়িত্বের মুখোমুখি হতে হবে বৈকি৷