1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শহরাঞ্চল বসে যাওয়ায় বিপর্যয়ের বাড়তি আশঙ্কা

৮ জুন ২০২২

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে কী করা উচিত, সে বিষয়ে তেমন সংশয় নেই৷ কিন্তু সদিচ্ছার অভাবে বিশাল বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে৷ বিশেষ করে উপকূলবর্তী শহরের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷

https://p.dw.com/p/4COHd
Pakistan Karachi | Überschwemmung nach heftigen Regenfällen
ফাইল ফটোছবি: Getty Images/AFP/R. Tabassum

কোটি কোটি মানুষ আসলে ডুবন্ত শহরে বাস করছেন৷ কারণ জাকার্তা থেকে লাগোস পর্যন্ত বেড়ে চলা মেগাসিটির আরো বড় সমস্যা হলো, সেখানে জমি বসে যাচ্ছে৷ কয়েকটি নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে সমুদ্রের পানির স্তর বাড়ার তুলনায় জমি দশ গুণ দ্রুত গতিতে নেমে যাচ্ছে৷ জাতিসংঘের হ্যাবিটাটের নির্বাহী পরিচালক মাইমুনাহ মহম্মদ শরিফ মনে করেন, মানুষের ঘরবাড়ি, জীবিকার উপর এর প্রভাব রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জমি বসে যাওয়ার কারণে উপকূলবর্তী এলাকা আর বাসযোগ্য থাকবে না বলে মনে হচ্ছে৷ আমরা সতর্ক না হলে কয়েকটি শহর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে৷''

এর কারণ, আমরা নদীর গতিপথ বদলে দিয়েছি এবং নরম মাটির উপর শহর গড়ে তুলেছি৷ গত শতাব্দীতে ব্যাংকক শহর এক মিটারেরও বেশি নেমে গেছে৷ শাংহাই দুই মিটার, ইটালির পো নদীর ব-দ্বীপ তিন মিটারের বেশি এবং টোকিওর পূর্বের অংশ চার মিটারের বেশি বসে গেছে৷ অ্যামেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের কিছু অংশের জমি একটা গোটা বাড়ির সমান নেমে গেছে৷

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ প্রায় ৩০ বছর পর শহরের উপকূলবর্তী অংশ পুরোপুরি পানির নীচে চলে যাবে৷ বান্দুং ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ভূবিজ্ঞানী হেরি আন্দ্রেয়াস বলেন, ‘‘আমাদের সরকার পানি সরবরাহের মাত্র ৬০ শতাংশ পাইপের মাধ্যমে করতে পারে৷ বাকি ৪০ শতাংশ মানুষ এখনো ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর করে৷''

উপকূলবর্তী শহরের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা

সেইসঙ্গে জাকার্তা জলাভূমির উপর অবস্থিত৷ আশেপাশে ১৩টি নদী রয়েছে৷ তার উপর বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহরও বটে৷ তবে জাকার্তাই একমাত্র এমন শহর নয়৷ বেশিরভাগ নদীর ব-দ্বীপ স্বাভাবিক পরিস্থিতির তুলনায় আরো দ্রুত নেমে যাচ্ছে৷ সেই ক্ষতির ধাক্কা আরও দূরে টের পাওয়া যাচ্ছে৷ শস্য নষ্ট হওয়ার কারণে চাল ও গমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় শস্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে৷ হেরি আন্দ্রেয়াসের মতে, এমন ধরনের বিপর্যয় নীরবে নষ্ট করে দেয়৷

পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে চলেছে৷ এক বড় আকারের গবেষণায় জানা গেছে যে বিজ্ঞানীরা আসলে বন্যার ঝুঁকিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা অনেক কম মনে করেছিলেন৷ ক্লাইমেট সেনট্রাল সংগঠনের প্রধান বেন স্ট্রাউস বলেন, ‘‘মনে হতে পারে, বিজ্ঞানী মহল ও সরকারগুলি উপকূলবর্তী এলাকার উচ্চতা সম্পর্কে সচেতন৷ কিন্তু দেখা গেছে, যে পৃথিবীর উপকূলের বেশিরভাগ অংশের জন্য স্যাটেলাইটভিত্তিক তথ্য ও স্যাটেলাইট সেন্সরের উপর নির্ভর করা হয়৷ অথচ সেই সেন্সর বাড়ির ছাদ বা গাছের সঙ্গে জমির পার্থক্য বুঝতে পারে না৷''

ক্লাইমেট সেন্ট্রালের বিজ্ঞানীদের সূত্র অনুযায়ী, উপকূল অঞ্চলে বন্যা হলে মূল অনুমানের তুলনায়  তিন গুণ বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷

সেই গবেষণায় অবশ্য প্রাচীর, উঁচু জমি বা আলের মতো উপকূল সুরক্ষার ব্যবস্থাগুলি বিবেচনা করা হয় নি৷ ফলে সব শহর একই ঝুঁকির মুখে নেই৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ডুবে যাওয়ার জন্য সেগুলির জায়গাও অনেক কম৷ বেন স্ট্রাউস বলেন, ‘‘আপনি যে জায়গায় রয়েছেন, সেখানকার সুরক্ষার জন্য উঁচু জমি থাকলেও আপনার জমি আরও অনেক গভীরে নেমে যেতে পারে৷''

বিশেষ করে পানির ধাক্কায় যে সব মানুষের অন্য কোথাও চলে যাবার সামর্থ্য নেই, তাদের জন্য এটা একটা বিপর্যয় হতে পারে৷ মাইমুনাহ মহম্মদ শরিফ বলেন, ‘‘জাকার্তা ও ব্যাংককের মতো শহর যাতে টোকিও ও শাংহাইয়ের মতো শহরের দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিতে পারে, সেটা খুব জরুরি৷''

গত শতাব্দীতে যে সব শহর কয়েক মিটার বসে গেছে, সেগুলি মোটামুটি এখন স্থিতিশীল রয়েছে৷ টোকিও ও শাংহাই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের মাত্রা সীমিত করে দিয়েছে এবং পানির উৎস যাতে শুকিয়ে না যায়, সেই ব্যবস্থা করেছে৷

কিন্তু জাকার্তার মতো শহরের বাসিন্দারা সহজে পানীয় জলের অন্য উৎসের নাগাল পান না৷ সরকারকে সবার আগে অনেক বছর ধরে নদী সংস্কার করতে হবে৷ তবেই পাইপের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে৷

তার বদলে জাকার্তা শুধু বিশাল প্রাচীর নির্মাণ করে বিপর্যয় এড়ানোর আশা করছে৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে উচ্চ মূল্যে শুধু সমস্যার বিলম্ব ঘটনো হচ্ছে মাত্র৷ হেরি আন্দ্রেয়াস মনে করিয়ে দিলেন, যে পানি ব্যবস্থাপনার ব্যয় হবে এক হাজার কোটি ডলার৷ অন্যদিকে সমুদ্রের প্রাচীরের ব্যয় চার হাজার কোটি ডলার৷

বিজ্ঞানীদের মতে, দ্রুত কার্বন নির্গমন কমাতে পারলেই চলতি শতাব্দীতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মাত্রা আধ মিটারের নীচে সীমিত রাখা সম্ভব৷

সেই সীমিত উচ্চতার পানিও অনেক শহরে বিপর্যয় বয়ে আনবে এবং লাখ লাখ মানুষের জীবন ওলটপালট করে দেবে৷ কিন্তু অন্তত শহরগুলি চলতি শতাব্দীতেও অক্ষত থাকতে পারবে৷

অজিত নিরঞ্জন/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান