1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ল্যাভেন্ডারের খেতে ছবি তোলার অসাধারণ অভিজ্ঞতা

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

এমন ফুল, যার রং নীল ও বেগুনি৷ বিশাল খেত জুড়ে সুগন্ধী ল্যাভেন্ডার জাদুময় পরিবেশ সৃষ্টি করে৷ ফ্রান্সের দক্ষিণে একটি অঞ্চল কয়েক মাসের জন্য আলোকচিত্রীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়৷

https://p.dw.com/p/3ians
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Tomas

এক ফটোগ্রাফার নানাভাবে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে চলেছেন৷

ফ্রান্সের দক্ষিণে ল্যাভেন্ডার ফুলের বিশাল খেত ছবি তোলার মোটিফ হিসেবে একেবারে নিখুঁত প্রেক্ষাপট৷ জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এই ফুলের মরসুমে ভালঁসোল এলাকা সুগন্ধী ফুলের সমুদ্রে পরিণত হয়৷ গোটা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার পর্যটক প্রতি বছর সেখানে আসেন৷ আলোকচিত্রী ফাবিও আন্টেনোরে বার বার সেখানে ফিরে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, প্রোভঁস অঞ্চলের সেরা আকর্ষণ এখানেই রয়েছে৷ অসাধারণ রংয়ের বিন্যাস, চারিদিকে সুগন্ধ, সীমারেখাগুলি পিছনে উধাও হয়ে গেছে৷ এ সবই আমি খুব ভালবাসি৷ পেছনে একটি গাছ৷ এ যেন ফটোগ্রাফারদের ডিজনিল্যান্ড৷’’

ফাবিও নিজের এই অনুভূতি অন্যদের সঙ্গেও ভাগ করে নিতে চান৷ শখের ফটোগ্রাফারদের নিয়ে তিনি ল্যাভেন্ডার খেত ঘুরিয়ে দেখান৷

যেন ল্যাভেন্ডার ফুলের সমুদ্র!

সুইজারল্যান্ডের এই আলোকচিত্রী নিজস্ব কৌশল প্রয়োগ করে প্রচলিত ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছেন৷ প্রকৃতির অবিশ্বাস্যরকম বাস্তব ছবি সৃষ্টি করতে তিনি নানারকম আলোর পরিবেশে তোলা একই মোটিফের একাধিক ছবি একে অপরের উপর বসান৷ ফলে তাঁর তোলা নিসর্গের ছবি বাস্তবের বদলে রহস্যময় মনে হয়৷ ফাবিও বলেন, ‘‘শাটার টেপার সময় আমার যাবতীয় অনুভূতি ছবির মধ্যে আনাই এই কৌশলের ক্ষেত্রে আমার লক্ষ্য৷ অর্থাৎ, নানা মুহূর্ত, নানা পরিস্থিতি, আলোর ছটার পার্থক্য ইত্যাদি৷ দুই, তিন থেকে শুরু করে ৪০, ৫০টি ছবি হতে পারে, যাতে দর্শক সেই অনভূতি বুঝতে পারে৷’’

ভ্যার্নার ভস্কা ট্যুরের অংশগ্রহণকারীদের সঠিক ছবির ফ্রেম খুঁজতে সাহায্য করেন৷ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিসর্গের ছবি তুলে আসছেন৷ প্রথাগত অথবা হাইপার-রিয়েল ফটোগ্রাফি – দুইয়ের ক্ষেত্রেই মৌলিক নিয়ম এক৷ ভ্যার্নার বলেন, ‘‘এমন বিস্তৃত নিসর্গের ক্ষেত্রে ফোরগ্রাউন্ড বা অগ্রভূমি অত্যন্ত জরুরি৷ কারণ প্রায়ই দেখা যায় অনেক পেছনে একটা গাছ চোখে পড়ছে, অথচ সামনে কিছুই নেই৷ একটা বড় ক্ষেত্র৷ এখানে এই রেখার সাহায্যে আমরা নিসর্গের গভীরতা তুলে ধরতে পারছি৷ ল্যাভেন্ডার ফুলসহ সুন্দর ফোরগ্রাউন্ড রয়েছে৷ ভালো ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির অর্ধেক গুণ এর মধ্যেই রয়েছে৷’’

প্রাথমিক সাফল্য পেতে দেরি হলো না৷ ফলে অংশগ্রহণকারীরা বেশ উত্তেজিত৷ ভিবকে ব্রাশ তাঁদেরই একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই সোজাসাপটা কাঠামো, খেতের জ্যামিতিক বিন্যাস, নীল ও বেগুনি রংয়ের সৌন্দর্য আমার অসাধারণ লাগে৷ সেইসঙ্গে মৌমাছির গুঞ্জনও কানে আসে৷ বাতাসের ধাক্কায় ফুলের কুঁড়ি নড়াচড়া করে৷ সত্যি অসাধারণ!’’

ল্যাভেন্ডার খেতের জনপ্রিয়তার ভিন্ন প্রভাবও রয়েছে৷ অনেক চাষি নিজেদের খেতের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন৷ ফাবিও আন্টেনোরে সেই সংবেদনশীলতার উল্লেখ করে বলেন, ‘‘আমরা ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছি৷ কোনো এক ল্যাভেন্ডার চাষি এর মালিক৷ জমি থেকেই তাঁর উপার্জন হয়৷ অর্থাৎ একটি দল নিয়ে এখানে এলে আমাকে যতটা সম্ভব ল্যাভেন্ডার ফুলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে৷ যে কোনো ট্রাইপড মাটিতে পোঁতা চলবে না, যেখানে-সেখানে পা দেওয়া যাবে না, বিয়ারের বোতল বা সিগারেটের টুকরো ছড়ানো যাবে না৷ মনে করতে হবে, আমি কারো বসার ঘরে ঢুকেছি৷ সবকিছু যেমন ছিল, সেরকম রেখেই আমাকে যেতে হবে৷’’

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ফটো ট্যুর চলে৷ শুধু দিনে নয়, রাতেও ছবি তুলতে বের হতে হয়৷ কারণ তখন ল্যাভেন্ডারের খেতের নতুন দিক চোখে পড়ে৷ ফাবিও এই বৈচিত্র্য খুব উপভোগ করেন, যদিও রাতে ছবি তোলার ঝক্কি কম নয়৷ তাঁর মতে, ‘‘খুব বেশি আলোর দূষণ থাকলে চলবে না৷ কালো আকাশে মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি চোখে পড়লে দারুণ লাগে৷ কখনো আবার শহরের আলোর সামান্য ছটা ফ্রেমে ধরা পড়লেও মন্দ হয় না৷’’

ক্লাসিক হোক অথবা আধুনিক মোটিফ – ল্যাভেন্ডারের খেতে সবাই তার পছন্দের দৃশ্য অবশ্যই খুঁজে পাবেন৷

টেওডোরা মাভ্রোপুলস/এসবি