1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লুট হওয়া ৩,৩০৪ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, বুধবার শুরু অভিযান

২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে যৌথ অভিযান৷ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ মঙ্গলবারের মধ্যে ওইসব অস্ত্র জমা দিতে বলা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4kBfI
Bangladesch | Nach dem Rücktritt von Bangladeschs Premierministerin Hasina
গণআন্দোলনের সময় বেশ কয়েকটি থানাতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে ছবি: Fatima Tuj Johora/REUTERS

এর মধ্যে জমা না দিলে ওইসব অস্ত্রও অবৈধ হয়ে যাবে৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক নাগরিকদের দেয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে৷ তবে এর আগে দেয়া অস্ত্রের লাইসেন্স বহাল আছে৷ তাদের আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিতে হবে না৷

ঢাকার জেলা প্রশাসক ফারজানা জামান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘অস্ত্র জমা দিতে হবে থানায়৷ আর যারা অথোরাইজড ডিলারের কাছে আগেই আগ্নেয়াস্ত্র জমা রেখেছেন তারা থানায় শুধু জমার কাগজপত্র জমা দিলেই হবে৷ অস্ত্র ও গুলি সবই জমা দিতে হবে৷ মঙ্গলবারের মধ্যে যারা জমা না দেবেন তাদের আগ্নেয়াস্ত্র অবৈধ বলে বিবেচিত হবে৷''

তিনি জানান, ‘‘ঢাকা মহানগরে সাড়ে চার হাজারের বেশি লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র আছে৷ আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়ছে, তবে জমা দেয়ার শেষ দিনে কত অস্ত্র জমা পড়লো তা জানা যাবে৷''

বৈধ অস্ত্রের তথ্যভান্ডার ‘ফায়ার আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের' (এফএএমএস) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২১ সালে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ছিলো ৪৪ হাজার ১০৪টি, যার মধ্যে ব্যক্তির নামে রয়েছে ৪০ হাজার ৭৭৭টি অস্ত্র৷ বাকি অস্ত্রগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে৷ এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একনলা ও দোনলা বন্দুক, শটগান, পিস্তল, রিভলবার ও রাইফেল৷ তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা এখন ৫০ হাজারের মতো৷ এর কমপেক্ষ দুই-তৃতীয়াংশ অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে৷ ১০ হাজার অস্ত্র আছে রাজনৈতিক নেতাদের নামে৷ এরমধ্যে এক ব্যক্তি একাধিক লাইসেন্সও নিয়েছেন৷

বৈধ অস্ত্রের হিসাব থাকলেও দেশে অবৈধ অস্ত্র কত আছে তারা কোনো হিসাব নেই৷ পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সদরদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে সারাদেশ থেকে প্রায় আট হাজার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে৷ আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই প্রায় তিন হাজার অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়৷

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আন্দোলন দমাতে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে সিভিল ড্রেসে অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে৷ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার পর বলেছিলেন, ‘‘এমন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করা হয়েছে যা এদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নেই৷''

আবার আন্দোলনের সময় থানায় হামলা ও আগ্নেয়াস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটেছে৷ শুধু ঢাকা শহরের থানাগুলো থেকেই এক হাজার ৮৯৮টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে৷ তারমধ্যে এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৫৫৩টি আগ্নেয়াস্ত্র৷

পুলিশ সদরদপ্তর জানিয়েছে, সারাদেশ থেকে আন্দোলনের সময় থানাগুলো থেকে কত অস্ত্র ও গুলি লুট হয়েছে সেটা এখনো নিশ্চিত নয়৷ তবে এ পর্যন্ত সারাদেশ থেকে লুট হওয়া তিন হাজার ৩০৪টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং দুই লাখ ৫১ হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে৷

সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘‘থানা থেকে যেসব অস্ত্র ও গুলি লুট হয়েছে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট মামলা হয়েছে কিনা সেটা বড় প্রশ্ন৷ এই অস্ত্র কারা লুট করলো, কারা ব্যবহার করলো তা চিহ্নিত করা জরুরি৷''

তার কথা, ‘‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ার কারণ হতে পারে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং রাজনৈতিক নেতারা আগ্নেয়াস্ত্রের যে লাইসেন্স দিয়েছেন তা নিয়ন্ত্রণে আনা৷ একইসঙ্গে ওইসব বৈধ অস্ত্র অবৈধভাবে ব্যবহার করা হয়েছি কিনা তা দেখা৷ তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আগে যেসব অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে সেগুলো কেন জমা নেয়া হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷''

তার কথা, ‘‘ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয় কিছু নিয়ম সাপেক্ষে৷ অস্ত্র জমা নেয়া হলে ওইসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা দিতে হবে সরকারকে৷ আর আইন অমান্য করে যারা লাইসেন্স নিয়েছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷''

পুলিশের সাবেক আইজি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘‘তিন কারণে অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়৷ নিরাপত্তা, খেলাধুলা ও প্রদর্শনীর জন্য৷ নিরাপত্তার জন্য অস্ত্র নিতে হলে আয়করসহ আরো কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়৷''

তার কথা, ‘‘সরকারের হয়তো মনে হয়েছে সব অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ম মেনে দেয়া হয়নি৷ আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়ছেন৷ বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার হয়েছে৷ সেই কারণেই অস্ত্র জমা দিতে বলেছে৷''

সাবেক আইজি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘‘দেশে এমনিতেই অবৈধ অস্ত্র আছে৷ সংঘাত-সংঘর্ষ নির্বাচন বা অপরাধমূলক কাজে এর ব্যবহার আমরা দেখি৷ আবার নবায়ন না করাসহ নানা কারণে বৈধ অস্ত্রও অবৈধ হয়ে যায়৷''