1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
পরিবেশপেরু

লিমার বায়ুদূষণ মোকাবিলা করতে ফগ ক্যাচার

২৯ মে ২০২৪

দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ পেরুর রাজধানী লিমা বায়ু দূষণের সমস্যায় জর্জরিত৷ কয়েক শতাব্দী ধরে বন নিধন, বসতি ও শিল্পের লাগামহীন প্রসার পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে চলেছে৷ বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগের মাধ্যমে কিছু উন্নতির চেষ্টা চলছে৷

https://p.dw.com/p/4gPwA
পেরু
প্রায় এক কোটি জনসংখ্যার শহর হিসেবে লিমা বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে৷ মূলত পরিবহণ ও শিল্পখাত এই অবস্থার জন্য দায়ীছবি: Joemarshall Travel/Lobster Media/picture alliance

সিঁড়ি ভাঙার মতো দৈনন্দিন কাজ করতেও পেদ্রো মাতাকে বেশ বেগ পেতে হয়৷ ৭৪ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত এই মানুষটি লিমা শহরের লাখ লাখ মানুষদের অন্যতম, যারা শ্বাসযন্ত্রের রোগ, তীব্র সংক্রমণ অথবা হার্টের সমস্যায় ভুগছেন৷ পৌর কর্তৃপক্ষের সূত্র অনুযায়ী সে কারণে প্রতি বছর কয়েকশ মানুষের মৃত্যু ঘটছে৷ পেরুর রাজধানী শহর বিশাল স্বাস্থ্য সমস্যায় জর্জরিত৷

পেদ্রো সপ্তাহে একবার চেকআপের জন্য হাসপাতালে যান৷ সেখানকার চিকিৎসা ও বাড়তি ওষুধের কল্যাণে তাঁর জীবনযাত্রার মানে কিছুটা উন্নতি এসেছে৷ তাঁর ডাক্তার রেনাটো কাসানোভা বলেন, ‘‘আমাদের এবং লিমার অন্য হাসপাতালে ঠিক ডন পেদ্রোর মতোই অনেক মানুষ আছেন, যাদের ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ রয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হলো, তাঁদের মধ্যে অনেকেই কখনো ধূমপান করেন নি, করে থাকলেও সামান্য মাত্রায় করেছেন৷ অন্যান্য দেশের বেশি মাত্রায় ধূমপান করা মানুষের সঙ্গে তাঁদের অবস্থার মিল রয়েছে৷ বিভিন্ন গবেষণায় উল্লিখিত এই রোগের সঙ্গে আমরা পরিবেশ দূষণের যোগসূত্র দেখতে পাচ্ছি৷''

প্রায় এক কোটি জনসংখ্যার শহর হিসেবে লিমা বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে৷ মূলত পরিবহণ ও শিল্পখাত এই অবস্থার জন্য দায়ী৷ ফাইন ডাস্ট বা সূক্ষ্ম ধূলিকণার দূষণের মাত্রার বিচারে ২০২২ সালে লিমা ল্যাটিন অ্যামেরিকায় দ্বিতীয় স্থান দখল করেছিল৷ প্রথম স্থানে ছিল চিলের সান্তিয়াগো শহর৷ কিন্তু সরকারি উদ্যোগে বাতাসের মান পরিমাপ অপর্যাপ্ত হওয়ার কারণে অনুমান করা হচ্ছে, যে বাস্তবে বায়ু দূষণের মাত্রা আসলে অনেক বেশি৷

পেরুর ‘কাইরা' নামের কোম্পানি এর সমাধানসূত্র খুঁজছে৷ লিমা শহরের বায়ু দূষণ সংক্রান্ত তথ্য সবার নাগালে আনার লক্ষ্যে তারা সস্তার পরিমাপ যন্ত্র ও এক ডিজিটাল টুল সৃষ্টি করেছে৷ কোম্পানির প্রতিনিধি মোনিকা আবার্কা জানালেন, ‘‘আমরা এখন লিমার উপর জুম করলে এমন তথ্য পাবো, যা নজরদারি নেটওয়ার্কে সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে৷ সবুজের অর্থ ভালো, হলুদ মানে মাঝামাঝি অবস্থা এবং কমলা ও লাল রং খারাপ অবস্থা দেখাচ্ছে৷ দুই দশমিক পাঁচ সবচেয়ে খারাপ পরিমাপ৷ এর অর্থ আড়াই মাইক্রোমিটার বস্তুকণা৷ সেটাই সবচেয়ে খারাপ৷ এ ক্ষেত্রে অতি ক্ষুদ্র কণা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে৷ তার একটা অংশ রক্ত সঞ্চালনের মধ্যে নিজস্ব স্থান করে নেয়৷''

এই সব তথ্যের ভিত্তিতে পৌর কর্তৃপক্ষ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নির্গমন কমাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারছে৷ তবে লাখ লাখ মানুষের এই শহরে এমন পদক্ষেপ অতি সামান্য উন্নতি আনতে পারছে৷

বহু বছর ধরে পরিবেশ অ্যাক্টিভিস্টরা নিজস্ব উদ্যোগে লিমা শহরের আশেপাশের টিলার উপর বৃক্ষরোপণ করে চলেছেন৷ একদিকে প্রশান্ত মহাসাগর, অন্যদিকে পাহাড়ি টিলা৷ সেগুলিই লিমার একমাত্র ‘প্রাকৃতিক' সীমা৷ ধুলিকণা ও ভাসমান পদার্থ টেনে নিয়ে গাছপালা বাতাসের মানের উন্নতির ক্ষেত্রে অবদান রাখছে৷ সেইসঙ্গে আরেকটি উদ্যোগও নজর কাড়ছে৷

এক ফগ ক্যাচার নেটওয়ার্কের সাহায্যে পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা শীতকালীন কুয়াসা থেকে পানি সংগ্রহ করছেন৷ পরিবেশ অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে নোয়ে নেইরা টক্টো জানালেন, ‘‘এই পানি একেবারেই স্বচ্ছ৷ এই পানি আমরা এটির মতোই অন্যান্য জলাধারে পাঠিয়ে দেই এবং ড্রিপ ইরিগেশনের কাজে ব্যবহার করি৷''

লিমার ‘সবুজ ফুসফুস' ৪০০ বছর ধরে বননিধনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ শহরের উপকণ্ঠে একের পর এক নতুন বসতি বা শিল্প গড়ে উঠছে৷ কয়েক শতাব্দী ধরে তিলে তিলে গাছ কাটার ফলে শহরের স্বাস্থ্যের উপর কুপ্রভাব পড়ছে৷

পুনর্বনায়নের মাধ্যমে ভূমিক্ষয় মোকাবিলা ও লিমা শহরের ক্ষতি আপাতত কিছুটা সামাল দেওয়া গেলেও বিজ্ঞানীদের মতে, সেই উদ্যোগ যথেষ্ট নয়৷ এর ফলে অতি সামান্য সুফল পাওয়া যেতে পারে৷ জীববিজ্ঞানী হিসেবে ডানিয়েল ভালে বাস্তো মনে করেন, ‘‘পেরু গোটা বিশ্বের নির্গমনের শূন্য দশমিক আট শতাংশের জন্য দায়ী৷ কোনো একদিন যদি আপনি বলেন, যে লিমায় একেবারে কোনো গ্যাস বা ক্ষতিকর পদার্থের নির্গমন ঘটছে না, তা সত্ত্বেও গ্রহের দূষণ কিন্তু চলতেই থাকবে৷ আমরা একা পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন বন্ধ করতে পারবো না৷ তবে যারা এর ফলে ভুগছেন, তাদের মধ্যে আমরা অবশ্যই থাকবো৷''

পেদ্রো নিজের ব্যথা কমাতে পেরেছেন৷ ডাক্তারের সহায়তায় তিনি এখন নিজের পাড়ার মধ্যে কিছুটা হাঁটাচলা করতে পারেন৷ কিছুটা স্বাধীনতা ফিরে পেয়ে তাঁর মনে বেঁচে থাকার ইচ্ছাও একটু বাড়ছে৷ বাতাসের ভয়ংকর মানের কারণে ভোগা শহরটির জন্য কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে৷

আন্দ্রেউ হেরেস-রিয়স/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান