1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিবাংলাদেশ

লায়লা কানিজের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ জুলাই ২০২৪

আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ ২৭ জুন সাংবাদিক কেনার কথা বলে আলোচনায় আসেন৷ তবে তিনি এমন কথা বলেননি বলে বৃহস্পতিবার ফেসবুকে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দাবি করেন৷

https://p.dw.com/p/4hu13
বাংলাদেশের জাতীয় প্রেসক্লাব ভবন
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত লায়লা কানিজের বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিক সংগঠনগুলো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেছবি: Mortuza Rashed/DW

কোরবানির সময় ১৫ লাখ টাকার ‘ছাগলকাণ্ডের’ পর মতিউরের অবৈধ সম্পদের পাহাড়ের খবর বেরিয়ে আসে৷ একইভাবে তার স্ত্রী ও নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চেয়ারম্যান লায়লা কানিজও অনেক সম্পদের মালিক বলে অভিযোগ ওঠে৷ তিনি আগে একটি সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন৷ চাকরি ছেড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন৷ তাদের দুই জনের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন৷

ছাগলকাণ্ডের পর মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজ দুইজনই আত্মগোপনে ছিলেন৷ আত্মগোপনের দুই সপ্তাহ পর ২৭ জুন লায়লা কানিজ তার নিজ উপজেলা রায়পুরায় দুইটি প্রশাসনিক সভায় অংশ নিয়ে প্রকাশ্যে আসেন৷ সেখানেই তিনি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্ন এড়িয়ে গাড়িতে ওঠার সময় বলেন, ‘‘ঢাকার ও নরসিংদীর জাতীয় পত্রিকা ও টিভির বড় বড় সাংবাদিকদের কিনেই উপজেলা পরিষদে এসেছি৷ তারা আর কিছু করতে পারবে না৷ সব থেমে যাবে৷ বড় বড় সংবাদিকদের ম্যানেজ করেই এখানে এসেছি৷ পাছে লোকে কত কিছুই বলে৷ তাতে কিছু আসে যায় না৷’’

সাংবাদিকরা যা বলছেন

তার এই কথার আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)৷ ৩০ জুন এক বিবৃতিতে সংগঠনটি লায়লা কানিজকে বক্তব্য প্রত্যাহার ও হীন বক্তব্যের জন্য নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায়৷ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, উদ্দেশ্যমূলক মন্তব্য করে দুর্নীতির সেসব সংবাদ প্রকাশে সাংবাদিকদের বিরত রাখা যাবে না৷ একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে লায়লা কানিজের এ ধরনের ঔদ্ধত্যমূলক বক্তব্য দেয়া অন্যায়৷’’

এখন অনেক ভুয়া সাংবাদিক আছে: সোহেল হায়দার চৌধুরী

ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা তাকে বলেছি কোনো সাংবাদিক তার কাছ থেকে কোনো সুবিধা নিয়ে থাকলে তাদের নাম প্রকাশ করতে ৷ কিন্তু তিনি এখনো নাম প্রকাশ করেননি৷ তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার বা ক্ষমাও চাননি৷ আমরা এখন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরুর চিন্তা করছি৷’’

তার কথা, ‘‘কোনো সাংবাদিক যদি পেশাগত অসদাচারণ করেন তাহলে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে৷ আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া যায়৷ আসলে তিনি পুরো সাংবাদিক সমাজকে হেয় করেছেন৷ এটা তার বিকৃত রুচির প্রকাশ৷’’

ডিইউজের সভাপতি বলেন, ‘‘তবে এখন অনেক ভুয়া সাংবাদিক আছে৷ একটা সংবাদমাধ্যম হতে হলে তার একটা কাঠামো থাকতে হয়৷ কেউ ফেসবুক বা ইউটিউবে কিছু করলেই তিনি সাংবাদিক নন৷ একটা সংবাদকে সংবাদ হতে হলে তা অনেকগুলো পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়৷ ভুয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ৷’’

‘কাদের কিনেছেন নাম জানান’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘‘উনি তো নাম বলতে পারেননি যে কাকে কাকে কিনে নিয়েছেন৷ পারলে নাম প্রকাশ করুন৷ আমরা তদন্ত করে দেখব৷ সেটা প্রকাশ না করে ঢালাওভাবে সাংবাদিক কেনার দাবি করে তিনি গর্হিত অপরাধ করেছেন৷ তিনি যদি দুঃখ প্রকাশ ও তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন তাহলে সাংবাদিকরা তাকে পরিহার করবে৷ তিনি তো উপজেলা চেয়ারম্যান তার সংবাদ প্রকাশ বা তার ব্যাপারে সাংবাদিকরা সতর্ক থাকবেন৷’’

তার কথা, ‘‘তিনি ঢালাওভাবে সব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অসত্য কথা বলেছেন আমাদের আপত্তি এখানেই৷ তবে আমরা যে কিছু কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অর্থের লেনদেন বা পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ পাই না, তা নয়৷ পেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিই৷ অনেকে মনে করেন সাংবাদিকরা যে কারুর বিরুদ্ধে যা কিছু লিখে দিতে পারেন৷ এই ধারণা ঠিক নয়৷ কারণ সাংবাদিক লিখে দিলেই সেটা ছাপা বা প্রকাশ হয় না৷ কয়েকটি গেট পার হয়ে সম্পাদনার পর সঠিক হলেই খবর প্রকাশ করা হয়৷’’

বিএফইউজে সভাপতি বলেন, ‘‘তবে সংবাদমাধ্যমের মালিকরা নিজেদের স্বার্থে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে থাকতে পারেন৷ সেখানে সাংবাদিকদের কিছু করার থাকে না৷''

‘পেশাদার সাংবাদিকদের কেনা যায় না'

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শুক্কুর আলী শুভ বলেন, ‘‘সাংবাদিকরাই সমাজের অনিয়ম দুর্নীতির খবর আগে দেন৷ তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে এই কাজ করেন৷ এই যে মতিউর সাহেবের দুর্নীতির খবর, তার স্ত্রীর সম্পদের খবর, এটা সাংবাদিকরাই আগে প্রকাশ করেছেন৷ এখন না হয় সরকার, দুদক নড়েচড়ে বসেছে৷ সাংবাদিকরা প্রকাশ না করলে তাদের নিয়ে তো কেউ কথা বলত না৷ এই কারণেই দুর্নীতিবাজ, সমাজবিরোধীরা সবসময় সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত৷ লায়লা কানিজ তার ব্যতিক্রম নন৷ তিনি তার দুর্নীতির বিষয় ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সাংবাদিকদের কেনার বিষয়টি বলেছেন বলে আমি মনে করি৷’’

তার কথা, ‘‘সাংবাদিকদের কেনা যায় না৷ পেশাদার সাংবাদিকরা কখনো বিক্রি হয় না৷ উনি যদি কাউকে কিনে থাকেন তাহলে নাম প্রকাশ করুক৷ তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোনো কোনো সাংবাদিকের ছবি আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি৷ এটা থাকতেই পারে৷ সেটা দিয়ে কিছু প্রমাণ হয় না৷’’

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘‘সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা কখনো বিক্রি হয় না৷ অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করে না৷ তারা দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোশহীনভাবে পেশাদারিত্বের সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে৷’’

‘‘তারপরও কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে তিনি যদি আমাদের সদস্য হন তাহলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিই৷ তবে ব্যক্তির দায় পুরো সাংবাদিক সমাজের ওপর চাপানো যাবে না৷ আর এখন অনেক ভুয়া সাংবাদিক আছেন যারা সাংবাদিকের পরিচয় ব্যবহার করে নানা অপরাধ করেন৷ তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে৷ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাই৷’’

সাংবাদিকরা যেকারো বিরুদ্ধে যা কিছু লিখতে পারে না: ওমর ফারুক

গুরুত্ব দিতে চান না প্রেস ক্লাব সভাপতি

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন লায়লা কানিজের কথাকে আমলেই নিতে চান না৷ তিনি বলেন, ‘‘তার স্বামী মতিউরের অনৈক অবৈধ সম্পদের খবর বেরিয়েছে৷ তারও (লায়লা কানিজ) অবৈধ সম্পদের খবর বেরিয়েছে৷ সেই পরিস্থিতিতে সে বলেছে যে সে সাংবাদিকদের কিনে ফেলেছে৷ তার এই কথার আমি কোনো গুরুত্বই দিতে চাই না৷ কথা আছেনা পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়৷ আমার ধারণা সে দুর্নীতির বিষয়গুলো ডাইভার্ট করতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এসব বলেছে৷’’

‘‘সাংবাদিকেরা তার কথার প্রতিবাদ করেছেন৷ কিন্তু আমি মনে করি তার কথার প্রতিবাদ করার কিছু নাই৷ কে কী বলে সব নিয়ে তো আমাদের লাফালে হবে না,’’ বলেন তিনি৷

‘আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘‘তিনি আসলে দুর্নীতি ঢাকার জন্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রুচিহীন কথা বলেছেন৷ তারা আসলে বিভিন্ন জায়গায় অর্থ ঢেলেই এই পর্যায়ে এসেছে৷ আর সেইভাবেই কথা বলছে৷ তারা আসলে নিজেরা যা অন্যকেও তাই ভাবে৷ সাংবাদিকদের উচিত তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া৷ আসলে তারা ক্ষমতার দম্ভে, টাকার গরমে যা খুশি তাই বলার সাহস দেখাচ্ছে৷ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের কোন জায়গায় দুর্নীতি নাই? তবে এখনো বাংলাদেশে সাংবাদিকরা সততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন৷ তারা দায়িত্ব পালন করছেন বলেই আমরা নানা অনিয়ম দুর্নীতির খবর জানতে পারছি৷’’

লায়লা কানিজের ভিডিও বক্তব্য

লায়লা কানিজের বক্তব্য জানতে চেষ্টা করেও তাকে ফোনে গত কয়েকদিনে পাওয়া যায়নি৷ তবে বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে তার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে৷ সেই ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘‘গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) আমি অফিসে এসেছিলাম৷ আমি আমার কাজকর্ম শেষ করে কারুর সঙ্গে কোনো বাক্য বিনিময় না করে সোজা আমার গাড়িতে করে অফিস ত্যাগ করি৷ কে বা কারা মিডিয়ায় একটি ভুল তথ্য দিয়েছেন যে, আমি ঢকার বড় বড় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেই এখানে এসেছি৷ আমি এধরনের কোনো কথা বলি নাই৷ তাই যারা মিডিয়ায় ভুল তথ্য দিয়েছেন তাদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য নিয়ে সাংবাদিকরা প্রকাশ করবেন৷ আপনারা সমাজের দর্পণ৷ আপনারা সত্যটা প্রকাশ করবেন৷ আমি আবারো বলছি আমি কথাটা বলি নাই৷ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যাভাবে ছড়িয়েছে৷''

রাতে তার এই বক্তব্য সামজিক মাধ্যমে দেখার পর তাকে আবারো ফোন করেলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি৷

এদিকে নরসিংদীর রায়পুরায় স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, তিনি বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকালে রায়পুরা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে যান৷ সেখানে তিনি এই ভিডিওটি ধারণ করে তার পরিচিতদের মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য