1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লঙ্কানদের গুঁড়িয়ে সবার আগে সেমিফাইনালে ভারত

রাহেনুর ইসলাম
২ নভেম্বর ২০২৩

ম্যাচ শুরুর আগে মাঠে এসেছিলেন হরভজন সিং। ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী দলের সাবেক সতীর্থটিকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন বিরাট কোহলি। ব্যাট হাতে শুরু করেন ভাঙরা নাচ!

https://p.dw.com/p/4YL3Y
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে আউট করার পর সতীর্থদের সঙ্গে মোহাম্মদ সামির উল্লাস
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে আউট করার পর সতীর্থদের সঙ্গে মোহাম্মদ সামির উল্লাসছবি: Rajanish Kakade/AP/picture alliance

কোহলির ঐতিহাসিক  ৪৯তম ওয়ানডে সেঞ্চুরির সুবাস পেয়ে  উৎসব মুখর গ্যালারিও। শচীন টেন্ডুলকারের পাশাপাশি বলিউডের শাহরুখ খান, শহীদ কাপুররা ছিলেন উন্মুখ হয়ে।

ওয়াংখেড়ে থেকে ট্যাক্সিতে ১৫ মিনিট দূরের গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া কিংবা বিখ্যাত মেরিন ড্রাইভ-সবখানে প্রস্তুতি চলছিল উপলক্ষটা উদযাপনের। কিন্তু গ্যালারি স্তব্ধ হয়ে যায় ৮৮ রানে কোহলি আউট হলে। তার কিছুক্ষণ আগে ৯২ রানে ফেরেন শুভমান গিলও। জোড়া সেঞ্চুরি মিসে রীতিমত হাহাকার গ্যালারিতে। তবে কোহলি আর গিলের দৃঢ়তা আর শ্রেয়াস আয়ারের ঝড়ো ৮২-তে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৫৭ রানের পাহাড়ই গড়ে ভারত। তাতে চাপা পড়ে শ্রীলঙ্কা অলআউট মাত্র ৫৫ রানে। ভারত পায় ৩০২ রানের জয়, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানে জয়ের কীর্তি।

টানা সপ্তম জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে জায়গা করে নিল রোহিত শর্মার দল। আর ৪ পয়েন্ট পাওয়া শ্রীলঙ্কা একপ্রকার ছিটকে গেল শেষ চারের দৌড় থেকে। কোহলির সেঞ্চুরি দেখা না হলেও ভারতের দাপুটে জয়ে খেদটা কমার কথা ওয়েংখেড়েকে নীল সমুদ্র বানিয়ে  ফেলা দর্শকদের।

২০০৩ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কানাডা অলআউট হয়েছিল ৩৬ রানে।

বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের ইনিংস এটাই, যা হাতবদল হওয়ার শঙ্কা জেগেছিল আজ। ভারতীয় পেসারদের দাপটে একটা সময় ১৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের পর টেলএন্ডারদের ব্যাটে সেই লজ্জা এড়ায় শেষ পর্যন্ত। তবে টেস্ট খেলা দলগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কার ৫৫ রানই বিশ্বকাপের সর্বনিম্ন।

এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ৩০৯ রানে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডসকে যা টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়ের রেকর্ড। ভারতের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড ছিল ২৫৭ (২০০৭, বিপক্ষ বারমুডা)। আজকের ৩০২ রানের জয়টা বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ।

 এশিয়া কাপ ফাইনালে মোহাম্মদ সিরাজের তোপে শ্রীলঙ্কা ৫০ রানে অলআউট হয়েছিল কলম্বোতে।  আজও শুরুতে দিমুথ করুনারত্নে, কুশল মেন্ডিস আর সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ফিরিয়ে টপঅর্ডার গুঁড়িয়ে দেন সিরাজই। মোহাম্মদ সামি ৫ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ৫ সেরা। ভারতীয়দের মধ্যে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৪৫ উইকেট এখন সামির। ৪৪ উইকেট আছে জহির খান ও জাভাগাল শ্রীনাথের।

দ্বিতীয় উইকেটে ১৮৯ রানের জুটি গড়ার পথে কোহলি ও গিল
দ্বিতীয় উইকেটে ১৮৯ রানের জুটি গড়ার পথে কোহলি ও গিলছবি: Rafiq Maqbool/AP/picture alliance

শুরুটা করেছিলেন অবশ্য জাসপ্রিত বুমরাহ। তাঁর প্রথম বলেই এলবিডাব্লিউ পাথুম নিশাঙ্কা। পরের ওভারের প্রথম বলে মোহাম্মদ সিরাজও এলিবিডাব্লিউ করেন অপর ওপেনার দিমুথ করুনারত্নেকে। এ নিয়ে ওয়ানডেতে চারবার গোল্ডেন ডাক পেলেন দুই ওপেনার। সবমিলিয়ে শ্রীলঙ্কার ৫ ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন ০ রানে।

 প্রথম ১০ ওভারে লঙ্কানরা ১৪ রানে হারায় ৬ উইকেট,এবারের বিশ্বকাপে এটাই সর্বনিম্ন।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে দিলশান মাদুশাঙ্কার প্রথম বলটাই বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে স্টেডিয়াম মাতিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। সমুদ্রের গর্জন করা ওয়াংখেড়ে স্তব্ধ হয়ে যায় দ্বিতীয় বলে। মাদুশাঙ্কার স্বপ্নের অফকাটারে বোল্ড রোহিত (৪ রান)। অফস্টাম্প উড়িয়ে নেওয়া বলটা নিয়ে ধারাভাষ্যকার বলছিলেন,‘বল অব দ্য টুর্নামেন্ট'। এ নিয়ে ওয়ানডেতে বামহাতি পেসারদের বলে ৩৪বার আউট হলেন রোহিত আর এবারের বিশ্বকাপে  ফিরলেন দুবার।  তাই বলে এটা তার দুর্বলতা নয়। এই বিশ্বকাপেই বামহাতি বোলারদের ১২৫ বল খেলে রান করেছেন ১৫৫, বাউন্ডারি ১৭ আর ছক্কা মেরেছেন ৯টি।

নতুন বলে শুরু করা আরেক পেসার দুশমান্থা চামিরা মেডেন নেন টানা দুটি। তাতে চাপ বাড়ে ভারতীয়দের ওপর। এজন্যই তিন বলের ব্যবধানে দুবার ক্যাচ তুলেছিলেন শুভমান গিল ও বিরাট কোহলি। মাদুশাঙ্কার করা পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে কভার-পয়েন্টে গিলের ক্যাচ ছাড়েন চারিথ আসালাঙ্কা। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে দুশমান্থা চামিরা রিটার্ন ক্যাচ ফেলেন কোহলির।

এমন নড়বড়ে শুরুর পরও কোহলি ও গিল দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ১৮৯ রানের জুটি।

এবারের বিশ্বকাপে গিলের ফিফটি ছিল একটিই। অথচ বিশ্বকাপের আগে এ বছর সর্বোচ্চ পাঁচটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি ছিল তার। ডেঙ্গুর ধকলে প্রথম দুই ম্যাচ খেলতে না পারা গিল আজ বিশ্বকাপে করলেন নিজের সর্বোচ্চ ৯২ রান। শচীন টেন্ডুলকারের মেয়ে সারার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে গ্যালারিতে বারবার ক্যামেরা যাচ্ছিল তার দিকে। ৯২ বলে  ১১ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় ৯২ রানে গিল আউট হওয়ার পর পুরো স্টেডিয়ামের মত হতাশ হয়ে পড়েন সারাও। দিলশান মাদুশাঙ্কার শর্ট স্লোয়ার বলটা উইকেটরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে মারতে যেয়ে ক্যাচ দেন কুশল মেন্ডিসকে।

বিশ্বকাপটা দুর্দান্ত কাটছে বিরাট কোহলির। তার প্রথম ছয়টি ইনিংস ৮৫, ৫৫*,১৬, ১০৩*, ৯৫ ও ০। ধর্মশালাতেই স্পর্শ করতে পারতেন টেন্ডুলকারের ৪৯ সেঞ্চুরির কীর্তি। তবে আউট হয়ে গিয়েছিলেন ৯৫ রানে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচে ০ রানে আউটটা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না নিজেই। ব্যর্থতাটা পেছনে ফেলে আজ ইতিহাস গড়েছেন এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ ৮বার এক হাজারের বেশি ওয়ানডে রান করে।

৫ উইকেট পাওয়া মাদুশাঙ্কার এ আনন্দ শ্রীলঙ্কার বিশাল হারে অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়
৫ উইকেট পাওয়া মাদুশাঙ্কার এ আনন্দ শ্রীলঙ্কার বিশাল হারে অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়ছবি: Rafiq Maqbool/AP/picture alliance

এক পঞ্জিকাবর্ষে ৭বার এক হাজারের বেশি রানের রেকর্ডটা এতদিন ছিল শচীনের (১৯৯৪, ১৯৯৬-৯৮, ২০০০, ২০০৩ ও ২০০৭)। কোহলি রেকর্ডটা ভাঙলেন শচীনেরই শহরে (২০১১-১৪, ২০১৭-১৯ ও ২০২৩)। এ বছর ওয়ানডেতে কোহলির রান এখন ১০৫৪।

দুশান হেমান্থাকে স্লগ সুইপে বাউন্ডারি মেরে ৪৯তম বলে ফিফটি করেন কোহলি। বিশ্বকাপে এটা তার ১৩তম ফিফটি ছড়ানো ইনিংস, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২১টি ফিফটি ছড়ানো ইনিংসে সামনে কেবল শচীন। সেঞ্চুরির পথেও ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু গিল ফেরার কিছুক্ষণ পর ৯৪ বলে ১১ বাউন্ডারিতে ৮৮ করা কোহলিকে আউট করেন মাদুশাঙ্কা। তার ঘন্টায় ১১৪ কিলোমিটার গতির স্লোয়ার কাটারে শর্ট কভারে নিশাঙ্কার তালুবন্দি এই কিংবদন্তি।

 ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর ঐতিহাসিক ওয়াংখেড়ে আজ আবারও মুখোমুখি ভারত-শ্রীলঙ্কা। মহেন্দ্র সিং ধোনির ছক্কায় নিশ্চিত হয়েছিল দ্বিতীয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ। স্টেডিয়ামে ধোনির ছক্কাটা যেখানে পড়েছিল সেটা সংরক্ষিত এখনও। ভারতীয়দের প্রেরণা দিতে গতকাল ওয়াংখেড়ে উন্মোচিত হয়েছে কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের ভাস্কর্যও। কোহলি সেঞ্চুরি করলে নিশ্চিতভাবে তার জন্যও কোন স্মারক থাকত এই স্টেডিয়ামে।

কোহলি ফেরার পর ভালো শুরু করেও লোকেশ রাহুল ২১ রানে ফেরেন চামিরার বলে। মুম্বাইয়ের স্থানীয় ব্যাটসম্যান সূর্যকুমার যাদব আউট ১২ করে। মাদুশাঙ্কার শর্ট বলে হুক করতে যেয়ে তিনি ক্যাচ দেন মেন্ডিসকে।

এবারের বিশ্বকাপে নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। চার নম্বর পজিশনটা নিয়ে অস্বস্তিটা বাড়ছিল তাই। তবে আজ ৫৬ বলে ৩ বাউন্ডারি ৬ ছক্কায় ৮২ রানের ইনিংসে দুশ্চিন্তাটা দূর করলেন আইয়ার। সেঞ্চুরির আশা জাগালেও মাদুশাঙ্কার স্লোয়ারে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দেন মহেশ থিকশানাকে। শেষ দিকে রবীন্দ্র জাদেজা ২৪ বলে করেছিলেন ৩৫ রান।

২০১১ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলা তিনজন আছেন এবারের বিশ্বকাপে। ভারতীয় দলে বিরাট কোহলি ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। আর শ্রীলঙ্কায় কেবল অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। এক যুগ আগের ফাইনালে ৩৫ রান করা কোহলি আজ খেললেন ৮৮ রানের ইনিংস। সেই ফাইনালে একাদশে না থাকা ম্যাথুজ আজ বল হাতে ৩ ওভারে ১১ রানে ছিলেন উইকেটহীন। ব্যাট হাতেও ফেরেন ১২ রানে। তাতে অন্তত বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার লজ্জাটা এড়ায় লঙ্কানরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

ভারত ৫০ ওভারে ৩৫৭/৮ (গিলে ৯২, কোহলি ৮৮, শ্রেয়াস ৮২, মাদুশাঙ্কা ৫/৮০, চামিরা ১/৭১)

শ্রীলঙ্কা ১৯.৪ ওভারে ৫৫/১০ (রাজিথা ১৪, থিকসানা ১২*, ম্যাথুজ ১২ ; সামি ৫/১৮, সিরাজ ৩/১৬)

ফল : ভারত : ৩০২ রানে জয়ী

ম্যাচসেরা : মোহাম্মদ সামি

রাহেনুর ইসলাম সাংবাদিক