1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রেখা গুপ্তাকে যে কারণে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী করলো বিজেপি

গৌতম হোড় দিল্লি
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রায় ২৭ বছর পর দিল্লিতে ক্ষমতা ফিরে পেয়ে প্রথমবারের বিধায়ক রেখা গুপ্তাকে মুখ্যমন্ত্রী করলো বিজেপি।

https://p.dw.com/p/4qmMj
মুখ্যমনত্রী হিসাবে শপথ নিচ্ছেন রেখা গুপ্তা।
রেকা গুপ্তা বৃহস্পতিবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন। ছবি: Manish Swarup/AP Photo/picture alliance

বৃহস্পতিবার দুপুরে দিল্লির রামলীলা ময়দানে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন ৫০ বছর বয়সি রেখা গুপ্তা। দিল্লির চতুর্থ নারী মুখ্যমন্ত্রী এবং সুষমা স্বরাজের পর বিজেপি-র তরফে দিল্লির দ্বিতীয় নারী মুখ্যমন্ত্রী

রেখা গুপ্তা দিল্লিতে খুব পরিচিত রাজনীতিক নন। শালিমার বাগ কেন্দ্র থেকে এই প্রথমবার তিনি জিতে বিধায়ক হয়েছেন। এর আগে পরপর দুই বার তিনি হেরেছেন। বিধায়ক হওয়ার পরই তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গেলেন।

রেখা গুপ্তা ছাত্র রাজনীতি করেছেন। দিল্লিতে বিজেপি ও কংগ্রেসের অনেকেই এভাবে ছাত্র রাজনীতি থেকে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে রাজনীতিতে এসেছেন। অরুণ জেটলি, অজয় মাকেনও এভাবেই এসেছেন। সেই তালিকায় রেখা গুপ্তার নামও যোগ হলো।

রাজনীতিতে রেখার উত্থান

রেখা গুপ্তা সঙ্খ পরিবারের পটভূমিকা থেকে উঠে এসেছেন। তিনি সঙ্ঘের ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের হয়ে কাজ করেছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি বিদ্যার্থী পরিষদের প্রার্থী হিসাবে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হন।

পরে ২০০৭ সালে তিনি উত্তর পিতমপুরা থেকে দিল্লি পুরসভার(এমসিডি) পার্ষদ নির্বাচিত হন। পরপর দুই দফায় তিনি পার্ষদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ২০১৭ সালে দিল্লি বিজেপি-র মহিলা মোর্চার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

কেন রেখাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলো?

রেখা গুপ্তা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এটা কেউ আগে আঁচ করতে পারেননি। সাধারণত, নরেন্দ্র মোদী এরকম ক্ষেত্রে চমক দিতে ভালোবাসেন। কিছুদিন আগে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের ক্ষেত্রেও দিয়েছেন। এবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও দিলেন। কিন্তু তাকে বেছে নেয়ার পিছনেও একটা রাজনৈতিক অংক আছে।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেয়ার পর নমস্কার করছেন রেখা গুপ্তা।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: Priyanshu Singh/REUTERS

বিজেপি কর্মী সলিল নন্দী ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''রেখা গুপ্তাকে মুখ্যমন্ত্রী করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় কাজ করছে। প্রথমত, তিনি নারী, দ্বিতীয়ত, তিনি সঙ্ঘ পরিবারের ঘরের মানুষ, তৃতীয়ত, তিনি দিল্লিতে যাদের বানিয়া বলে, সেই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মানুষ। দিল্লিতে সেই জনসঙ্ঘের সময় থেকে বানিয়ারা জনসঙ্ঘ ও বিজেপি-র কট্টর সমর্থক। আর রেখা গুপ্তা দল ও নেতৃত্বের সব কথা হুবহু মেনে শাসন চালাবেন।''

আপ নেতা অনুপ ঠাকুর ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''রেখা গুপ্তার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো আরএসএসের সমর্থন। মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন বলে যে কয়জন নেতার নাম শোনা যাচ্ছিল, তারা কেউ সেভাবে আরেসএসের সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু রেখা প্রথম থেকেই সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন।  মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের ক্ষেত্রেও আরএসএসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নেতারাই মুখ্যমন্ত্রী হতে পেরেছেন।''

দিল্লিতে রেখাকে নিয়ে চারজন নারী মুখ্যমন্ত্রী হলেন। দিল্লি রাজ্য হওয়ার পর যতজন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে সফল মুখ্যমন্ত্রী মনে করা হয় শীলা দীক্ষিতকে। ১৫ বছর তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তার আমলেই দিল্লির চেহারা বদলে যায়।

মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে অরবিন্দ কেজরিওয়াল নারীদের পছন্দের মানুষ ছিলেন। কারণ, তিনি দিল্লিতে মেয়েদের জন্য বাসে ভ্রমণ ফ্রি করে দিয়েছেন। তিনি সরকারি স্কুলের চেহারা বদল করে এবং মহল্লা ক্লিনিক করে,. বিদ্যুতের মাসুল কম করে ও বিনা পয়সায় জল দিয়ে গরিব, মধ্যবিত্তদের অর্থ সাশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন।

কেজরিওয়াল যখন মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়েন, তখন আতিশিকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন। বিজেপি ক্ষমতায় এসে তাই একজন নারীকেই মুখ্যমন্ত্রী করতে চেয়েছে।

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''নরেন্দ্র মোদী একটা কথা ভালোভাবেই জানেন, দিল্লির মতো রাজ্যে নারী ভোটারদের পাশে পেতে একজন নারী মুখ্যমন্ত্রী সহায়ক হতে পারবেন। এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক খেলা। তাছাড়া রেখা গুপ্তাকে অতীতে পুরসভায় প্রবল হইচই করতে দেখা গেছে। সম্প্রতি তার এরকম কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ফলে তিনি যে কড়াভাবে হাল ধরতে পারবেন, সেটাও শীর্ষ নেতৃত্বের মনে হয়েছে।''

শরদ মনে করেন, ''এখানে রেখা গুপ্তাকে প্রাধান্য দেয়ার আরেকটি কারণ হলো, তিনি নারী এবং নতুন মুখ। ফলে তিনি খোলা মনে কাজ করতে পারবেন।''

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক গুলশন মনে করেন, ''দিল্লিতে রাজ্য সরকারের হাতে ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। এখানে অনেক ক্ষমতাই কেন্দ্রের হাতে। এই অবস্থায় রেখা গুপ্তা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কথা শুনে তাদের পরিকল্পনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন বলে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন। আর প্রধানমন্ত্রী মোদী সবসময়ই এই ফাটকা খেলতে পছন্দ করেন। দিল্লিতেও খেলেছেন।''

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷