রূপপুর দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার জয়ের
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি জানায় যে, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পকে ঘিরে অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে৷ রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসাটমের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে৷
দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে ২০১৫ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ প্রতিটি কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট৷
দুদক অভিযোগ করেছে, প্রকল্পে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো আর্থিক অনিয়ম হয়েছে, যার সঙ্গে শেখ হাসিনা, তার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তার ভাগনি ব্রিটিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক জড়িত৷
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘এনরিচড ইউরেনিয়াম' সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রোসাটাম এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ রুশ প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে যে, এটি সব প্রকল্পে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এটি একটি স্বচ্ছ ক্রয় পদ্ধতি বজায় রাখে৷
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে ইমেলে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি লিখেছে, ‘‘রোসাটাম স্টেট কর্পোরেশন আদালতে তার নিজস্ব স্বার্থ ও সুনাম রক্ষায় প্রস্তুত রয়েছে৷''
‘‘আমরা গণমাধ্যমে উল্লেখিত অসত্য বক্তব্যগুলোকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটিকে কলঙ্কিত করার একটি প্রয়াস হিসেবে বিবেচনা করছি, যা দেশটির বিদ্যুৎ ঘাটতি সমস্যার সমাধান এবং জনগণের কল্যাণের স্বার্থে বাস্তবায়িত হচ্ছে,'' উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে৷
তবে এই বিষয়ে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি টিউলিপ সিদ্দিক৷
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, টিউলিপ সিদ্দিক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর তার ওপর আস্থা রয়েছে৷
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ তার দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলেও মুখপাত্র জানিয়েছেন৷
তবে টিউলিপ ও তার পরিবারের সদস্যদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ব্রিটেনের মন্ত্রিপরিষদ দপ্তরের কর্মকর্তারা৷ রোববার এ বিষয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, অভিযোগের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ অফিসের শুদ্ধতা ও নীতিসংক্রান্ত দল টিউলিপ সিদ্দিককে প্রশ্ন করেছেন৷
নিজের পরিবারের পক্ষে বক্তব্য দেয়া সজীব ওয়াজেদ জয় মনে করেন যে, বাংলাদেশে তারা রাজনৈতিক ‘উইচ হান্ট'-এর শিকার হচ্ছেন৷
‘‘এসব সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং একটি ‘স্মিয়ার ক্যাম্পেইন'৷ আমার পরিবার বা আমি কখনোই এরসঙ্গে জড়াইনি কিংবা কোনো সরকারি প্রকল্প থেকে কোনো টাকা নেইনি,'' ওয়াশিংটন থেকে রয়টার্সকে জানান তিনি৷
‘‘দশ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প থেকে বিলিয়ন ডলার সরানো সম্ভব নয়৷ আমাদের কোনো অফশোর অ্যাকাউন্টও নেই৷ আমি ত্রিশ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছি এবং আমার খালা ও কাজিনরা যুক্তরাজ্যে প্রায় একই সময় ধরে বসবাস করছেন৷ স্বাভাবিকভাবেই আমাদের এই দুই দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে৷ যে পরিমান টাকার দাবি করা হচ্ছে তার ধারে-কাছেও আমরা যাইনি,'' ফেসবুকে লিখেছেন জয়৷
গত জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় সহস্রাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন এবং কয়েক হাজার আহত হয়েছেন৷
শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ পরিচালনা করছে৷
এদিকে, সোমবার ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা৷ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাকে ফেরত পাঠাতে নতুন দিল্লির কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সোমবার জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন৷
তিনি বলেন, ‘‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বাংলাদেশ ফেরত চেয়েছে৷ এ বিষয়ে ভারতকে নোট ভারবাল পাঠানো হয়েছে৷''
নতুন দিল্লি এই অনুরোধ পেয়েছে বলে নিশ্চিত করলেও বিষয়টি নিয়ে অন্য কোনো মন্তব্য করেনি৷
ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের সময়ে হত্যাকাণ্ড, গত ১৬ বছরে গুম-ক্রসফায়ারসহ কয়েকটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এসেছে৷ তিনি, তার মন্ত্রিসভা, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান৷
সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছেন, তার পরিবার শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং নতুন দিল্লি তাকে অন্য কোথাও আশ্রয় চাইতেও বলেনি৷
এআই/এসিবি (রয়টার্স, প্রথম আলো)