রিভেঞ্জ পর্নের বিরুদ্ধে নারীর লড়াই
২৩ জানুয়ারি ২০২২ইনেস মরিনিও পর্তুগালের লিসবনে নিজের দিনের কাজ গুছিয়ে অফিস থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন৷ তখনই তার ফোন বেজে ওঠে৷ তার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি সম্বলিত একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে, এমন একটি ম্যাসেজ আসে তার ফোনে৷
ঘটনাটি যখন ঘটে তখন তার বয়স কেবল ২১৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি অসাড় বোধ করতে শুরু করি এবং পরিবারের কাছে ছুটে যাই৷ যাকে আমি বিশ্বাস করতাম এমন একজন আমার নাম উল্লেখ করে ভিডিওটি অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছে৷ পর্ন প্লাটফর্মে এবং টুইটার ও টেলিগ্রামেও এটি ভাইরাল হয়ে পড়ে৷ ঘটনাটা আমাকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল৷''
মরিনিওর মতো অনেক নারীই ছবি-ভিত্তিক এমন হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ এদের সাবেক প্রেমিকেরা বিচ্ছেদের পর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছেন৷ বিনা সম্মতিতে এমন পর্নোগ্রাফি আইনত দণ্ডনীয়৷
তিনি বলেন, ‘‘অনলাইনে ভিডিওটি দেখার পরপরই আমি পুলিশের কাছে যাই৷ তারা আমাকে সাহায্য করতে গিয়ে এমন একই ধরনের আরো ঘটনার সন্ধান পান৷ ২০২২ সালেও এই মামলা চলছে৷'' মরিনিওর বয়স এখন ২৪ এবং এমন যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নারীদের সহায়তার জন্য ‘নো পারচিলিস' নামের একটি সংগঠন চালান৷
তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় যখন হাঁটছি, তখনও মাঝেমধ্যে মনে হয় যে কেউ হয়তো আমাকে ভিডিও করছে৷ আমি ক্যান্সার থেকে সেরে উঠেছি এবং নিজেকে সবসময় মনে করিয়ে দেই যে এই রোগের সঙ্গে লড়াই করে জিতেছি, মামলাটিতেও জিতবো৷''
ইউরোপে নতুন আইন
জীবনযাপনের নানা দিকই এখন ক্রমশ ডিজিটাল হয়ে উঠছে৷ অনলাইনে রিভেঞ্জ পর্নের মতো ঘটনাও বেড়ে চলেছে৷ পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান হেইটএইড এবং ল্যান্ডেকার ডিজিটাল জাস্টিস মুভমেন্টের জরিপে দেখা গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ নারীই অনলাইনে আক্রমণের শিকার হওয়ার ভয় পান৷ এদের অন্তত ৩০ শতাংশ ভুয়া নগ্ন ছবি বা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার ভয় পান৷
ডারহাম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্লেয়ার ম্যাকগ্লিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনেক নারী জানতেও পারেন না যে তারা অনলাইনে এমন অপরাধের শিকার হচ্ছেন৷ দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কিছু দেশে টয়লেটে বা কাপড় বদলানোর স্থানে তাদের অজ্ঞাতে তোলা ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়৷ ফলে অজানা একটি ভয়ও তাদের মধ্যে কাজ করে৷''
অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউরোপের অইনপ্রণেতারা বৃহস্পতিবার ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাক্ট নামে একটি আইন পাসে সম্মত হয়েছেন৷ অনলাইনে অবৈধভাবে থাকা যেকোনো কিছুর ব্যপারে ব্যবস্থা গ্রহণে অনলাইন প্লাটফর্মগুলোকে বাধ্য করাটাই এর লক্ষ্য৷
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য আলেক্সান্দ্রা গিজ এই আইন পাসের ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এই আইনের ফলে হয়রানির শিকার নারীরা অনলাইনে থাকা এসব ছবি সহজে সরিয়ে ফেলতে পারবেন৷ কারণ নাম প্রকাশ না করে পরিচয় নিশ্চিত করার একটি পদ্ধতি এক্ষেত্রে রয়েছে৷ এর ফলে অনলাইনে গিয়ে কেবল নিজেদের চেহারা দেখিয়েই এইসব সরিয়ে ফেলার দাবি জানানো যাবে৷''
তিনি জানান, বড় পর্ন প্লাটফর্মগুলোর জন্যও ফোন নাম্বার নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করা হবে এবং কনটেন্ট ব্যবস্থাপনা টিমকেও সম্ভাব্য অবৈধ ছবি চিহ্নিত করার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে৷
ইউরোপের যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ইউরোপিয়ান সেক্স ওয়ার্কার্স রাইটস অ্যালায়েন্স অবশ্য ফোন নাম্বার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হলে তা তাদের অধিকারের পরিপন্থি হবে বলে আপত্তি জানিয়েছে৷ কিন্তু অধ্যাপক ম্যাকগ্লিন মনে করেন, এই আইনের ফলে আদতে তাদের লাভই হবে৷
তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যৌন কর্মীদের সম্মতি ছাড়াই তাদের নানাভাবে ব্যবহার করে আসছিল বড় পর্ন ওয়েবসাইটগুলো৷ এসব থেকে তারা লাভবানও হচ্ছিলেন না৷ বরং এখন প্লাটফর্মগুলো যৌনকর্মীরা নিজেদের আয় ও নিরাপত্তা বজায় রেখেই কাজ করতে পারবেন৷''
প্রতিবেদন: প্রিয়াঙ্কা শঙ্কর/এডিকে