1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাষ্ট্রপতিকে চিঠি, বিচার চাইলেন মৃত চিকিৎসকের মা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মেয়ের ধর্ষণ ও খুনের বিচার চেয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি নিহত চিকিৎসকের মায়ের।

https://p.dw.com/p/4kDUV
কলকাতা পুলিশের কমিশনারের পদত্যাগের দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল।
আরজি করে ধর্ষিতা ও মৃত চিকিৎসকের মা চিঠি লিখে অভিযোগ করলেন কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে। ছবি: Satyajit Shaw/DW

আরজি কর হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করার পর রাজ্য উত্তাল। বিচারের দাবি উঠছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে। নির্যাতিতার মা এই আর্জি জানিয়ে চিঠি লিখেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে।

ঘটনার আগের রাত

তরুণী চিকিৎসকের সঙ্গে ঘটনার আগের রাতে তার মায়ের কথা হয় টেলিফোনে। সে কথা চিঠিতে লিখেছেন তিনি। বলেছেন, "ঘটনার আগের রাতে ১১টা ১৫ মিনিটে মেয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়। তখনো ও হাসিখুশি ছিল। সকালে আমার মেয়ে আর নেই।"

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দিকে আঙুল তুলেছেন চিকিৎসকের মা। তিনি লিখেছেন, "মা বাবা হিসেবে তো আমাদের জানানো উচিত ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। ওদের দায়িত্বে তো আমরা মেয়েটাকে ওখানে পাঠিয়েছিলাম।"

তিন ঘণ্টার ব্যবধান

নির্যাতিতার অভিভাবকরা বারবার অভিযোগ তুলেছেন, হাসপাতালে পৌঁছনোর পরও মেয়ের দেহ তাদের দেখতে দেয়া হয়নি। ফোন পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছন তারা। মা লিখেছেন, "আমি তাদের হাতেপায়ে ধরে বলি আমার মেয়েকে একবার দেখতে দিন। ... আমি বলি, আমি কিছু করব না। একবার মুখটা দেখে চলে আসব। তাও দেখতে দেয়া হয়নি।"

চিকিৎসকের মায়ের দাবি, তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর মেয়ের মুখ দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন তারা। সেমিনার রুমে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। ততক্ষণ পুলিশকর্মীরা দরজা আগলে দাঁড়িয়েছিলেন

এই সময়ে বহু মানুষ ওই সেমিনার রুমে প্রবেশ করেছেন বলে নির্যাতিতার মায়ের দাবি। পরে একাধিক ছবি ভাইরাল হয়েছে। সেখানে এমন একাধিক জনের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে, যাদের থাকার কথা নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। কলকাতা পুলিশের পাল্টা দাবি, ওখানে এমন কেউ ছিলেন না যার থাকার কথা ছিল না। 

প্রমাণ লোপাটের শঙ্কা

এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। জুনিয়র চিকিৎসক থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজ কিংবা বিরোধী দল, সব পক্ষই এই অভিযোগ তুলেছে। নিহত চিকিৎসকের মা তার চিঠিতে একই কথা বলেছেন।

তিনি লিখেছেন, "মেয়ের দেহ দেখে আমাদের মনে হয়, পুরো ঘটনা সাজিয়েগুছিয়ে আমাদের দেখানো হচ্ছে। কারণ সেখানে যে পৈশাচিক ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তার পরে সব কিছু এই রকম সাজানো থাকতে পারে না।"

ক্রাইম সিন বা অকুস্থল বদলে ফেলা হয়েছে বলে পুলিশের দিকে আঙুল উঠেছে। সেই সুরে চিকিৎসকের মা লিখেছেন, "অপরাধ যেখানে হয়েছে, সেই জায়গা ঘেরা ছিল না। যথেচ্ছ ভাবে অপব্যবহার হয়েছে।"

কলকাতা পুলিশের দাবি, তারা অকুস্থল সুরক্ষিত রেখেছিল। সব তথ্য প্রমাণ কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভাইরাল ছবি ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে, কেন সেমিনার রুমে এত মানুষ প্রবেশ করল? কেন পুরো এলাকা কর্ডন করে সেমিনার রুম বন্ধ করা হয়নি?

দ্রুত দেহ সৎকার

নিহত চিকিৎসকের দেহ পুলিশের উদ্যোগে দাহ করা হয়। এক্ষেত্রে পুলিশ অতি তৎপরতা দেখিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনই অভিযোগ করেছেন নিহতের মা।

তিনি লিখেছেন, "আমরা সেদিন আমাদের মেয়ের দেহ রেখে দেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের অতিসক্রিয়তার কারণে সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যতক্ষণ মেয়ের দেহ চুল্লিতে প্রবেশ করানো পর্যন্ত পুলিশি সক্রিয়তা বজায় ছিল...।" 

চিকিৎসক সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি তথা ছ'টি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের অন্যতম কর্তা কৌশিক চাকি বলেন, "মা বাবাকে দেহ দেখতে দেয়ার কথা। সেটা শনাক্তকরণ, সমবেদনা, মানবিকতা, যেটাই হোক। কিন্তু তা করা হয়নি। এর পর প্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা হওয়া স্বাভাবিক। এর পিছনে ষড়যন্ত্র আছে বলে আমাদের ধারণা।"

ষড়যন্ত্র আছে বলে আমাদের ধারণা: কৌশিক চাকি

চিকিৎসকের মা রাষ্ট্রপতিকে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, "অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিশেষ আদালতের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে কঠোর শাস্তির, কঠোর থেকে কঠোরতর সাজার ব্যবস্থা করুন। সেটা যত দ্রুত হবে, তত দ্রুত আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে।"

অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন, শেষমেষ কি সুবিচার পাবে ধর্ষিতা ও নিহত চিকিৎসকের পরিবার! ধরা পড়বে অপরাধীরা? তদন্তের ভার এখন সিবিআইয়ের হাতে রয়েছে, তবু প্রশ্ন উঠছে।

আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, "৯০ দিন সময় দিতে হবে তদন্তকারী সংস্থাকে। এর মধ্যে তদন্ত শেষ করতে না পারলে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। সিবিআই চার্জশিট দেবে, অতিরিক্ত চার্জশিট দিতে পারে। তারপর ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে এই মামলার বিচার হতে পারে। সেটার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।"